রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত সোমবার আলোচনা করেছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ওই আলোচনার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখছেন মস্কো ও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হলেও আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি।

মস্কো ও ওয়াশিংটন উভয় পক্ষই বলেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নৌপথে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। আজ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক আলোচনায় বসেছেন।

হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র বলেছে, রিয়াদে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই ইতিবাচক ঘোষণা আসার বিষয়টি প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে সোমবার যুদ্ধ শেষ করার আলোচনা হয়েছে। তবে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা আশঙ্কা করছে, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প এমন একটি চুক্তি করতে পারেন, যাতে রাশিয়ার দাবির কাছে নতি স্বীকার করা হবে। এতে ইউরোপের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, কৃষ্ণসাগরে জাহাজের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে যেকোনো ধরনের চুক্তির সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখছে মস্কো ও ওয়াশিংটন।

পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করছি। এগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো আলোচনা হয়নি।’

অবশ্য রিয়াদে তিন দেশের কর্মকর্তারা একই হোটেলে ছিলেন; কিন্তু তারা পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একে ‘শাটল কূটনীতি’ বলে মন্তব্য করা হয়।

পেসকভ বলেন, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে শিগগিরই আবার আলোচনা আয়োজনের পরিকল্পনা নেই। তবে প্রয়োজন পড়লে যেকোনো সময় তা আয়োজন করা হবে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়। তাতে পুতিনের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পর জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা করবে না এমন প্রস্তাবে পুতিন রাজি হন। ইউক্রেন জানায়, যথাযথ নথিভুক্ত জ্বালানি অবকাঠামোতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তারা যোগ দিতে রাজি।

তবে সৌদি আরবে চলমান আলোচনার মধ্যেও পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে সোমবার রাতে পলতাভা ও কিয়েভ এলাকায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, শান্তির বিষয়ে ফাঁপা বক্তব্য না দিয়ে রাশিয়ার উচিত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করা। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী দুই রুশ সাংবাদিককে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনে গোলাবর্ষণে চালকসহ দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কিয়েভ এখনো এই ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির চেয়েও বিস্তৃত নৌচুক্তির বিষয়ে চেষ্টা চালানো হয়েছে। ওয়াশিংটন বলছে, এ চুক্তি পরিপূর্ণ শান্তিচুক্তির আলোচনার পথ খুলে দেবে। পুতিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছাড়তে হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলো থেকে সেনা সরাতে হবে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ভূখণ্ড নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

গতকালের বৈঠকের আগে গত রোববার মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রিয়াদে আলোচনা করেছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা; কিন্তু সোমবার রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের রাখা হয়নি।

গত সোমবার ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধের আরও অনেক বিষয় আলোচনার টেবিলে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ভূখণ্ড ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা, ক্ষমতা ও পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকানা নিয়ে কথা বলছি।’

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সৌদি আরবে আলোচনার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো কৃষ্ণসাগরে নৌপথ নিয়ে চুক্তি, যাতে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়।

জাতিসংঘকে যুক্ত করতে আলোচনা

রাশিয়ান এক আলোচক গতকাল বলেছেন, ইউক্রেনে আংশিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অন্য কয়েকটি দেশ ও জাতিসংঘকে যুক্ত করতে চায় রাশিয়া। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রুশ দল ১২ ঘণ্টা আলোচনা করার এক দিন পর গ্রেগরি কারাসিন সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সর্বোপরি জাতিসংঘ এবং কয়েকটি দেশকে যুক্ত করে আলোচনা চালিয়ে যাব।’

কারাসিন আরও বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চ্যালেঞ্জিং থাকলেও ফলপ্রসূ হয়েছে। বাড়তি আলোচনায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য দেশকে যুক্ত করা হবে। তবে কোন কোন দেশকে যুক্ত করা হবে, তা প্রকাশ করেননি তিনি।

কারাসিন বলেন, অনেক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এতে আগ্রহী। এ নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটন যৌথ বিবৃতিতে দেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত র ইউক র ন র য ক ত কর স মব র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ