কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না বুভুক্ষ বালুখেকোদের। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন সংলগ্ন সুরমা নদীতীরে প্রতি রাতেই চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
সুরমা নদীর ভাঙনের প্রভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। গ্রামবাসী ভিটে-মাটিহারা হচ্ছে, তবে এসব দেখার যেন কেউ নেই। প্রতিবাদ করলে উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুরমা নদীর তীরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য এলাকার একটি চক্র নদীর পারে পাহারা দেয়। অন্যরা ড্রেজার, বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী মিলেমিশেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুট করছে।
সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সমর উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল এখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এরা গ্রামবাসীর কোনো বাধা মানে না। নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা আনর আলী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পার ভেঙে যাচ্ছে। যারা নদীর পারে বসবাস করেন, তাদের জন্য বালু উত্তোলন একটা আতঙ্কের বিষয়। তাদের ফসলি জমিও এখন হুমকির মুখে।
সম্প্রতি স্থানীয় গ্রামবাসীর একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ছাতক সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শোয়েব বিন আহমদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে আটক করা হয়। ওই অভিযানে চারটি স্টিলবডি ও পাঁচটি ড্রেজার মেশিন (লিস্টার ড্রেজার), ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ৮৫০ ফুট বালু জব্দ করা হয়।
সোনাপুর এলাকায় বালু উত্তোলন চলছে, এমন গোপন সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ওই অভিযান পরিচালনা করে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের পর সোমবার তাদের সুনামগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। ছাতক সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন শোয়েব বিন আহমদ জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকালে অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সবুজ, জানফর ও আব্দুল শহীদ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন এবং বালু উত্তোলন করতে উৎসাহ দেন। তারাই এই চক্রের মূলহোতা।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) জাহিদুল হক বলেন, সেনাবাহিনী আটক ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। ওই মামলায় আটক ২৩ জনসহ আসামি করা হয়েছে আরও
১১ জনকে। আটক সবাইকে আদালতে সোপর্দ
করা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু বলেন, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন, সেখানে কোনো ইজারা নেই। ইজারাবিহীন নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলন বা সরকারি সম্পদ লুটের খবর পেলে তারাও অভিযান পরিচালনা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ
এছাড়াও পড়ুন:
কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।
শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।