পোশাক ক্রেতাদের সঙ্গে সরকার নিবিড় যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতি মাসে বৈঠক হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘এলডিসি উত্তরণ: কৃষি খাতে প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 
ইআরএফ ও বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএমএ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএমএ) সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, খুবই লজ্জাজনক বিষয় যে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) কনভেনশনে সই করার পরও শ্রম পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে অনেক নিচে। এ বিষয়ে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এটি এমন একটি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, সমাধান না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এ মামলা সমাধানের জন্যও কাজ করছে সরকার, যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বজায় রেখেই পোশাক শিল্প এগিয়ে যেতে পারে।

অর্ডারসহ নানা ইস্যুতে পোশাক খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা পোশাক ক্রেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতি মাসে বৈঠক হচ্ছে। এর আগে সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক হতো না। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে দেশের পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে।’
সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘সন্দ্বীপের ফেরি উদ্বোধনেও সিন্ডিকেটের প্রভাব দেখা গেছে। আমরা চাই, এ ধরনের সিন্ডিকেটতন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়া। এটি অর্থনৈতিক সংস্কারেরই অংশ এবং সে লক্ষ্যেই কাজ হচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে আগামী মাসের মধ্যেই ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ চালু করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাজার অর্থনীতিকে কার্যকর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও গতিশীল করা জরুরি। সরকারি প্রশাসনের মধ্যেই ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে কাজ দীর্ঘায়িত না হয়। 

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমাদের জন্য সময়সাপেক্ষ বিষয় নয়, বরং এটি একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। আমাদের এখন ওয়ান বাংলাদেশ ধারণা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সরকার, ব্যবসায়ী ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করে প্রকৃত উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বৈঠকই নয়, বরং চীনের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও বিশেষভাবে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ড.

ইউনূস চান বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করতে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য তিনি কাজ করছেন। কিছু বাধা রয়েছে, সেগুলো কীভাবে দূর করা যায়, সেই পরিকল্পনাও চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে

কর অব্যাহতির বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ব্যবসায়ীরা শুধু করছাড় চাচ্ছেন। তবে সামনে কর অব্যাহতির রাস্তা কঠিন হয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজস্ব ব্যবস্থা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন কর অব্যাহতি বিষয়ে নীতি তৈরি করতে। সেই নীতি আইনে প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রস্তাব হলো, সরকার কিংবা এনবিআর কোনো কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। এ ক্ষমতা যাবে সংসদের হাতে। এর মানে হলো— কারও সঙ্গে একটু ভালো সম্পর্ক হলে অথবা বোঝাতে সক্ষম হলে কর অব্যাহতি পেয়ে যাবে– এমনটা থাকছে না। কর অব্যাহতির রাস্তা সামনের দিনে কঠিন হয়ে যাবে। এই ধরনের নীতি প্রণয়নের দিকে যাচ্ছে সরকার। 
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এতদিন ব্যাপক কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর দরকারও ছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হবে। রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব আয় হচ্ছে না। রাজস্ব কম কেন– সেই প্রশ্নও তুলছে জনগণ। এসব জায়গায় আরেকটু সচেতন হলে আগামী বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হতে পারে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আয়ের মধ্যে পরোক্ষ করের পরিমাণ অনেক বেশি, যা সভ্য দেশের লক্ষণ নয়। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ কর আদায় করার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। করযোগ্য সবার থেকে কর আদায় করতে না পারার কারণে করজাল সংকুচিত। কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। 
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একদিকে আয় বাড়ানো, অন্যদিকে নীতি-সহায়তা দেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য আনা বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের ঘাটতি। যার যে কাজ করা দরকার, তিনি তা করছেন না। ফলে পদে পদে ভোগান্তি হচ্ছে। সে জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। 
তিনি বলেন, অর্থনীতির খারাপ সময়েও রাজস্ব আদায় আগের চেয়ে বাড়ছে। এপ্রিলে প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে। যারা কর দিচ্ছেন না, তাদের নোটিশ করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে কোম্পানির কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের নিয়ম করা হবে। 
মাসরুর রিয়াজ বলেন, রমজানের আগে নিত্যপণ্যে করছাড়, পর্যাপ্ত আমদানি এবং সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে যেভাবে ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এখন তা কমে আসছে। টাকা পাচার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি কমেছে। এর ফলে রিজার্ভ ইতিবাচক। তিনি বলেন, যারা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কর অব্যাহতি পেয়ে আসছেন, তাদের বিষয়ে এনবিআরকে নতুন করে ভাবা দরকার। 
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবীর। ইআরএফ প্রেসিডেন্ট দৌলত আক্তার মালা সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সঞ্চালনা করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে
  • বেশি ঋণ করে ‘গণি মিয়ার’ মতো সমস্যায় পড়তে চাই না: এনবিআর চেয়ারম্যান