একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় উন্নত, সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বুধবার ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের কর্মসূচিতে স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গকারী সূর্যসন্তান বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে গোটা জাতি। 
প্রত্যুষে রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকাসহ সারাদেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজে জাতীয় ও রঙিন পতাকায়। দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। 

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের মূল আয়োজন ছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ঘিরে। সেখানে লাখো মানুষের জনস্রোত পরিণত হয় মিলনমেলায়। লাল-সবুজ পোশাকে জাতীয় পতাকা হাতে সমবেত হন সব বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় স্মৃতিসৌধের বেদিতে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাষ্ট্রীয় সালাম শেষে বিউগলে করুণ সুর তোলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা পরিদর্শন বইয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে কিছু সময় তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। 

এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও বিদেশি কূটনীতিকরাও। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে বলে আশা করি। 

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সেখানে নামে জনতার ঢল। তাদের কণ্ঠে উঠে আসে একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোর স্লোগান। নানা দল ও সংগঠনের পাশাপাশি ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় স্মৃতিসৌধের বেদি।

সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ। 

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যারা স্বাধীনতা দিবসকে খাটো করতে চান, একাত্তরের স্বাধীনতায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। আমি বলব, তারা যেন এখানেই বিরত থাকেন। 

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর কোনো কোনো অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। এমনকি দ্বিতীয় স্বাধীনতার নামে একাত্তরের বিপরীতে ১৯৪৭কে প্রতিস্থাপনের অপচেষ্টা করছে। এদের পরাস্ত করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে স্বাধীনতাকামী জনগণ লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে। অথচ গত ৫৪ বছরে মুক্তিযুদ্ধের সেই ঘোষণা অঙ্গীকার আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাদ দিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসম্পূর্ণ জাতীয় কর্তব্য সম্পন্ন করতে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। এই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যেও নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রশ্নে ন্যূনতম জাতীয় সমঝোতা বিনষ্ট করা যাবে না। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান একাত্তরের বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। আশা করি, দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে আরও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, আনসার ও ভিডিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মহিলা পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, খেলাঘর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এ ছাড়া দিনটি উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপি) আলাদা আলোচনা সভা করেছে। 

নানা আয়োজন
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার করে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে। 

বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমসহ সব মসজিদে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা সভা। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পালের পরিচালনায় প্রার্থনা সভায় সব শহীদের আত্মার শান্তি এবং দেশের উন্নয়ন ও সার্বিক মঙ্গল কামনা করা হয়। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও প্রার্থনা করা হয়। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। 

সারাদেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমি বিকেলে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘মুক্তির মহিমা’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

দিবস উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। 
পরে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র‍্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মতিউর রহমান শেখ এবং পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদরদপ্তরের সীমান্ত গৌরবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। 

স্মৃতিসৌধ এলাকা থেকে আটক ৩
সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় উপস্থিত জনতা ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। পুলিশ সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে। তারা হলেন– মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ও সোহেল পারভেজ।

অন্যদিকে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ঘিরে স্বেচ্ছাসেবক দলের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল আলম সুমন ও সাভার পৌর কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতবর আহত হন। তাদের ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

কালীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করায় হামলা
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গতকাল সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হামলা চালিয়েছে। এতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেয়ারটেকার সাগর হোসেন আহত হন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত গণঅভ য ত থ ন র গণত ন ত র ক সহ ব ভ ন ন স ব ধ নত অন ষ ঠ ন র সদস য উপদ ষ ট এক ড ম কম ট র এ সময় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩