ছুটি টানা ৯ দিন। সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ শতাংশের অবস্থা ভালো। তবু বিশৃঙ্খলার কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ভয় থেকেই যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো লাখো ব্যাটারিচালিত রিকশায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। সড়ক দখল করে বসা বাজারও ভোগান্তির কারণ হতে পারে। শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ, গত কয়েক মাসে কারণে-অকারণে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনের নজিরও ঈদযাত্রায় ভীতি কাজ করছে। 

ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন গাবতলী, সায়েদবাদ, টঙ্গী এবং হানিফ ফ্লাইওভারে। গাবতলী, সায়েদবাদ ও টঙ্গী এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশপথে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এতে বাসের গতি আটকে যাচ্ছে। গত বছরের দুই ঈদেই ভুগিয়েছে হানিফ ফ্লাইওভার। এ ফ্লাইওভার হয়ে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও একই শঙ্কা রয়েছে। 

শিল্পকারখানা ছুটির পর শনিবার যাত্রীর ঢল ধরতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ঢাকার লোকাল বাস মহাসড়কে নামলে গাজীপুরের চন্দ্রা ও চৌরাস্তা এলাকায় এবারও অচলাবস্থা হতে পারে। এতে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ চার লেনে উন্নীত হলেও সেতুতে গাড়ি বিকল হয়ে এবারও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক গত ২২ মার্চ খুললেও সিরাজগঞ্জে ইন্টারচেঞ্জের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়বে না।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় নরসিংদী ও আশুগঞ্জ এলাকায় দুর্ভোগে পড়তে হবে সিলেটের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, ঈদযাত্রায় ফিটনেসহীন গাড়ি চলতে পারবে না। ধরা পড়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকার লোকাল গাড়ি ঈদে মহাসড়কে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে, বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি করে। রুট পারমিট লঙ্ঘন করে কোনো গাড়ি মহাসড়কে গেলে নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হবে। যেসব প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে ঈদযাত্রা আগের চেয়ে ভালো হবে। 

দেখা সাপেক্ষে সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। শুক্রবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি। গতকাল বুধবার ছিল স্বাধীনতা দিবসের ছুটি। মাঝে শুধু এক দিন আজ বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস-আদালত খোলা। এবারের রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় অনেকেই আগেভাগে বাড়ি চলে গেছেন। গতকাল বাস-ট্রেনে ভিড় দেখা যায়নি। মহাসড়কে বড় ধরনের যানজটের খবরও পাওয়া যায়নি। 

উত্তরবঙ্গের পথে তবু ভয়
প্রতিবছরই শেষ কর্মদিবসে অচল হয়ে পড়ে চন্দ্রা এলাকা। গত বছর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল নবীনগর থেকে চন্দ্রা হয়ে যমুনা সেতুতে পৌঁছাতে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন মিয়া সমকালকে বলেন, এবারও বিশেষ মনোযোগ রয়েছে চন্দ্রা নিয়ে। এলেঙ্গা-যমুনা সেতু সড়কে যদি চাপ বাড়ে, তাহলে ঢাকামুখী গাড়ি ভূঞাপুর দিয়ে বাইপাস করা হবে। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কের প্রকল্প পরিচালক ড.

ওয়ালিউর রহমান বলেন, চার লেন চালু হওয়ায় সড়ক নিয়ে এবার ভয় নেই। গত বছর ঈদের আগের দিন যমুনা সেতুতে ৫৪টি গাড়ি বিকল হয়েছিল। এতে ১৫-১৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট হয়। 

বিশৃঙ্খলার ভয়
ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আন্দোলন চলছে। রোজার মধ্যে একাধিকবার সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন হয় গাজীপুরে। আবার মহাসড়ক দাপিয়ে ব্যাটারি রিকশাসহ অবৈধ যানবাহন চললেও পুলিশ ঠেকাতে পারছে না। এতেই সবচেয়ে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশপ্রধান সমকালকে বলেন, নৈরাজ্য হলে মোকাবিলা করব। কোথাও সড়ক বন্ধ হলে হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

১৫৫ স্থানে যানজটের শঙ্কা
সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানায়, সারাদেশে ১৫৫ স্থানকে তীব্র যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১ এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আট স্থানকে যানজটপূর্ণ বলা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ঈদয ত র য নজট র এল ঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের

দীর্ঘ ২২ বছর পর আবার চাকা ঘুরতে যাচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের। এরই মধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার জনের। সরকারি মালিকানাধীন বস্ত্রকলটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আজ সোমবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানাটি পরীক্ষামূলক চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিপিপিতে নেওয়ার পর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের নাম বদলে রাখা হয়েছে বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি পুরোদমে চালু হলে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আজ দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান, গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সরকারি এই টেক্সটাইল মিলটি ২২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পিপিপিতে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রায় ২৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাকে প্রাণ-আরএফএল উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাটিতে তৈরি হবে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতা ও তৈরি পোশাক। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটিতে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিসেম্বরে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় গ্রুপটি। এরপর তিন মাসের মাথায় কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে তারা উত্তরবঙ্গে এই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে।

আনিসুর রহমান বলেন, কারখানায় বর্তমানে সীমিত পরিসরে জুতা ও ব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজশাহীর প্রায় এক হাজার লোক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে কারখানা চালু করার প্রক্রিয়ায় কয়েক শ গাছ ও পুকুর ভরাটের বিষয়ে রাজশাহীতে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনও করেছে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তাঁরা সঠিক উপায় অবলম্বন করেই এগুলো করেছেন। বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। তার বিপরীতে তিন হাজার নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২২ বছর পর চালু হচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল
  • ২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের