লম্বা ছুটি, সড়ক ভালো ভয় শুধু বিশৃঙ্খলায়
Published: 27th, March 2025 GMT
ছুটি টানা ৯ দিন। সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ শতাংশের অবস্থা ভালো। তবু বিশৃঙ্খলার কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ভয় থেকেই যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো লাখো ব্যাটারিচালিত রিকশায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। সড়ক দখল করে বসা বাজারও ভোগান্তির কারণ হতে পারে। শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ, গত কয়েক মাসে কারণে-অকারণে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনের নজিরও ঈদযাত্রায় ভীতি কাজ করছে।
ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন গাবতলী, সায়েদবাদ, টঙ্গী এবং হানিফ ফ্লাইওভারে। গাবতলী, সায়েদবাদ ও টঙ্গী এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশপথে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এতে বাসের গতি আটকে যাচ্ছে। গত বছরের দুই ঈদেই ভুগিয়েছে হানিফ ফ্লাইওভার। এ ফ্লাইওভার হয়ে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও একই শঙ্কা রয়েছে।
শিল্পকারখানা ছুটির পর শনিবার যাত্রীর ঢল ধরতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ঢাকার লোকাল বাস মহাসড়কে নামলে গাজীপুরের চন্দ্রা ও চৌরাস্তা এলাকায় এবারও অচলাবস্থা হতে পারে। এতে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ চার লেনে উন্নীত হলেও সেতুতে গাড়ি বিকল হয়ে এবারও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক গত ২২ মার্চ খুললেও সিরাজগঞ্জে ইন্টারচেঞ্জের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়বে না।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় নরসিংদী ও আশুগঞ্জ এলাকায় দুর্ভোগে পড়তে হবে সিলেটের যাত্রীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, ঈদযাত্রায় ফিটনেসহীন গাড়ি চলতে পারবে না। ধরা পড়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকার লোকাল গাড়ি ঈদে মহাসড়কে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে, বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি করে। রুট পারমিট লঙ্ঘন করে কোনো গাড়ি মহাসড়কে গেলে নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হবে। যেসব প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে ঈদযাত্রা আগের চেয়ে ভালো হবে।
দেখা সাপেক্ষে সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। শুক্রবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি। গতকাল বুধবার ছিল স্বাধীনতা দিবসের ছুটি। মাঝে শুধু এক দিন আজ বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস-আদালত খোলা। এবারের রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় অনেকেই আগেভাগে বাড়ি চলে গেছেন। গতকাল বাস-ট্রেনে ভিড় দেখা যায়নি। মহাসড়কে বড় ধরনের যানজটের খবরও পাওয়া যায়নি।
উত্তরবঙ্গের পথে তবু ভয়
প্রতিবছরই শেষ কর্মদিবসে অচল হয়ে পড়ে চন্দ্রা এলাকা। গত বছর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছিল নবীনগর থেকে চন্দ্রা হয়ে যমুনা সেতুতে পৌঁছাতে। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন মিয়া সমকালকে বলেন, এবারও বিশেষ মনোযোগ রয়েছে চন্দ্রা নিয়ে। এলেঙ্গা-যমুনা সেতু সড়কে যদি চাপ বাড়ে, তাহলে ঢাকামুখী গাড়ি ভূঞাপুর দিয়ে বাইপাস করা হবে। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কের প্রকল্প পরিচালক ড.
বিশৃঙ্খলার ভয়
ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আন্দোলন চলছে। রোজার মধ্যে একাধিকবার সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন হয় গাজীপুরে। আবার মহাসড়ক দাপিয়ে ব্যাটারি রিকশাসহ অবৈধ যানবাহন চললেও পুলিশ ঠেকাতে পারছে না। এতেই সবচেয়ে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশপ্রধান সমকালকে বলেন, নৈরাজ্য হলে মোকাবিলা করব। কোথাও সড়ক বন্ধ হলে হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
১৫৫ স্থানে যানজটের শঙ্কা
সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানায়, সারাদেশে ১৫৫ স্থানকে তীব্র যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১ এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আট স্থানকে যানজটপূর্ণ বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নজট ঈদয ত র য নজট র এল ঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকামুখী যাত্রায় যমুনা সেতুর পশ্চিমে ১০ কিলোমিটার যানজট
ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে আবারও ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এ কারণে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।
যমুনা সেতু সাইট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে চলেছে ৩০ হাজার ৮১৭টি এবং ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন যমুনা সেতুর পশ্চিমের কড্ডার মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজট চলছে। নলকা সেতু থেকে ঝাঐল উড়ালসড়ক হয়ে যমুনা সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে এই যানজট দেখা গেছে। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে থেমে থেমে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।
রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সেতু পরিবহনের সুপারভাইজার আবদুল আল মামুন বলেন, ‘দিবাগত রাত ১টার দিকে পীরগাছা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। এখন সকাল সাড়ে ১০টায় সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে উড়ালসড়কে যানজটে আটকে আছি। কখন ঢাকায় পৌঁছাব, তা বলা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বগুড়া থেকেই গাড়ি ধীরগতিতে চলছে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে যানজটের তীব্রতা বেড়ে নলকা সেতু পার হওয়ার পর তা প্রকট আকার ধারণ করে।
ঢাকার উদ্দেশে কড্ডার মোড় থেকে রওনা হওয়া পোশাকশ্রমিক আলী হাসান বলেন, ‘আজই ছুটির শেষ দিন। তাই পরিবার নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। কিন্তু যানজটে সেতু পার হতে পারছি না। তার ওপর গরমে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।’
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঈদের ছুটির শেষ দিনে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় মহাসড়কে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ বলেন, সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এতে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও কোথাও কোথাও সাময়িক যানজট তৈরি হচ্ছে, যা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।