নতুন পোশাকের ঘ্রাণ অনেকেরই পছন্দ। অবশ্য কারও কারও সেই ঘ্রাণ ভালো না-ও লাগতে পারে। ব্যক্তিগত ভালো লাগা না–লাগার চেয়ে অবশ্য স্বাস্থ্যের দিকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে দেখুন, একটা পোশাক আপনার হাতে পৌঁছানোর আগে কত হাতই না ঘুরে আসে! কাপড় তৈরি, রং করা ও সেলাইয়ের নানান ধাপ পেরিয়ে তবেই না তৈরি হয় পোশাক। সেই পোশাক সাজানো হয় ডিসপ্লেতে। ‘ফ্রেশ পিস’ নিলেও যে তা পুরোপুরি ‘ফ্রেশ’, তার নিশ্চয়তা কী? কেউ তো ওই পোশাকটি গায়ে চড়িয়ে ট্রায়ালও দিয়ে থাকতে পারেন। হয়তো মনমতো না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা কেনেননি এক বা একাধিক ব্যক্তি। কেউ কেউ তো পোশাক কেনার কিছুদিন পরও বদলে নেন।

কিন্তু এসব কারণে কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়? বছরের পর বছর ধরে অনেকেই নতুন পোশাক না ধুয়ে পরেছেন, তাতে তো কোনো সমস্যা হয়নি কোনো দিন। ব্যাপারটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই অনেকে এভাবে পোশাক ব্যবহার করেন। তাহলে এই ঈদে আপনি কী করবেন? ঈদের আগে পোশাক ধুয়ে নেবেন, নাকি নেবেন না? শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.

মো. মতলেবুর রহমান জানালেন এর উত্তর।

আরও পড়ুনধোয়ার পর কাপড়ের ক্ষতি হবে না, যদি মেনে চলেন এসব উপায়১৪ অক্টোবর ২০২৪না ধুয়ে নতুন পোশাক পরলে যা হতে পারে

কাপড়ে নানান রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এসবের কিছু অংশ রয়ে যেতে পারে পোশাকে। তাই পোশাক না ধুয়ে পরলে ত্বকে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে, চুলকাতে পারে। বিশেষত কারও যদি কোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিকে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সমস্যাটি প্রকট হয়ে দাঁড়াতে পারে।

হাতের স্পর্শে কাপড় ময়লা হয়। অনেকেই হাঁচি-কাশির আদবকেতা মানেন না। কেউ কেউ হাতের তালু দিয়ে হাঁচি-কাশি চাপেন, আবার কেউ কেউ মুখ বা নাকের ভেতর আটকে থাকা কিছু বের করেন হাত দিয়ে। এরপর হাত পরিষ্কার না করেই যেকোনো কাজে হাত দেন। কাপড় প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে আপনার কাছে তা পৌঁছানো পর্যন্ত ঠিক কোন কোন মানুষ অপরিষ্কার হাতে তা স্পর্শ করেছেন, তা আপনি জানেন না। বুঝতেই পারছেন, আপাতদৃষ্টে ঝকঝকে পোশাকেও ময়লা এবং জীবাণু থাকতে পারে। একজনের হাত থেকে কাপড়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যজনের কাছে।

কোনো ক্রেতা পোশাকটি ট্রায়াল দিয়ে থাকলে তো কথাই নেই। তাঁর দেহের ঘাম ও জীবাণু লেগে থাকতে পারে পোশাকে। ওই ব্যক্তির ছোঁয়াচে চর্মরোগ থাকলে তাতেও আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। এভাবে ছড়াতে পারে উকুনও।

নতুন পোশাক না ধুয়ে পরা হলে এত সব সমস্যার যেকোনোটিতেই ভুগতে হতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই যে এমনটা ঘটে, তা নয়। তবে এক শ জনের মধ্যে একজনের সঙ্গে যদি তা ঘটে, আর সেই ব্যক্তি যদি আপনিই হন, তাহলে তো মুশকিলই বটে।

আরও পড়ুনপুরোনো কাপড় ভালো রাখবেন যেভাবে০১ জুলাই ২০২৪বাড়তি সতর্কতা যাঁদের জন্য

শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের নতুন পোশাক অবশ্যই পরার আগে ধুয়ে দেবেন। তবে পরিবারের অন্যদের পোশাকও ধুয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, ঈদে একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরা হয়। তাই একজনের পোশাক থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন অন্যরা।

কাপড়ে নানান রকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, এসবের কিছু অংশ রয়ে যেতে পারে পোশাকে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন প শ ক সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে