ভালো ও বড় কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে যাদের বার্ষিক টার্নওভার বা বিক্রি হাজার কোটি টাকার বেশি, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে সংস্কারের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স। যেসব কোম্পানির হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও একই সুপারিশ করা হয়েছে। 
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বিষয়ে নিজেদের সুপারিশ জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। আইপিওতে ভালো কোম্পানি যাতে শেয়ার বিক্রি করে ভালো মূল্য পায় এবং কেউ যাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে না পারে, তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতেও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছেন তারা। এ ছাড়া টাস্কফোর্স এমন সব ব্যবস্থা  নেওয়ার পক্ষে যাতে মার্কেট ম্যাকানিজম ঠিকভাবে চলবে, সর্বত্র সুশাসনথাকবে এবং সবাই সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রদানে বাধ্য ধাকবে। 
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক এমডি মাজেদুর রহমান, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট নেসার উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.

হেলাল উদ্দিন ও ড. আল-আমীন এবং বুয়েটের শিক্ষক মোস্তফা আকবর উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে টাস্কফোর্সের ফোকাস গ্রুপের সদস্য এমডি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কমিটির সুপারিশ তুলে ধরেন।

টাস্কফোর্স সদস্যরা জানান, কোম্পানি বা উদ্যোক্তারা যাতে শেয়ারের ভালো মূল্য পান, সে জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ডাচ্-অকশন পদ্ধতি অনুসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। আবার শুধু মূলধন সংগ্রহ নয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীর ‘এক্সিট প্লান’ বা বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার পথ করে দিতে সরাসরি তালিকাভুক্তি প্রচলনের সুপারিশ করা হয়েছে। 
শেয়ারবাজারের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসি এ টাস্কফোর্স গঠন করে। পাঁচ মাস পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি মার্জিন ঋণ এবং মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যুতে তাদের প্রাথমিক সুপারিশ জমা দেয় টাস্কফোর্স। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ আইপিও ইস্যুতে খসড়া সুপারিশ জমা দিয়েছে।
সুপারিশ প্রণয়নে দীর্ঘ সময় নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাজেদুর রহমান বলেন, টাস্কফোর্সকে সুনির্দিষ্ট ১৭টি ইস্যুতে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। এটি অনেক বড় কাজ। টাস্কফোর্স সদস্যরা প্রত্যেকে নিজ পেশায় অনেক ব্যস্ত। এর মধ্য থেকে কিছুটা সময় বের করে কাজ করছেন। যে ধরনের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে, যার সবটা সম্ভব নয়। এর জন্য বিশেষ দক্ষতা দরকার। নতুন করে বিশেষজ্ঞ কাউকে নিতে হবে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার বিষয়ে যে সুপারিশ চাওয়া হচ্ছে, তা হয়তো তারা দিতে পারবেন না। তবে বাজারের সর্বাধিক সংবেদনশীল অংশগুলোর বিষয়ে, বিশেষত বাজারকে চাঙ্গা করতে যেসবের প্রভাব বেশি, সেগুলোর বিষয়ে আগামী জুনের মধ্যে সুপারিশ করার চেষ্টা করছে টাস্কফোর্স।
শেয়ারবাজারের নেতৃত্ব প্রদানকারী বিএসইসিই সংকটে এবং প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর শীর্ষ তিন নির্বাহী পদ শূন্য অবস্থায় চলছে বছরের পর বছর। এ দুই প্রধান প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সংস্কারে সুপারিশ আগে না করে বাজারের অন্য সমস্যা কেন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে– এমন প্রশ্নে সদস্য হেলাল উদ্দীন বলেন, “বিএসইসিতে এখন যে সমস্যা, তা কী ‘পলিসি’ সমস্যা, নাকি বাস্তবায়ন সমস্যা, তা আমারও প্রশ্ন। নীতি ঠিক থাকলে, তা যার যা করার কথা, তা করে থাকলে আজকের এ অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না। এখানে আইন আছে, তবে আইনকে উপেক্ষা করে কাজ হয়েছে।” 
এ বিষয়ে মাজেদুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বড় পরিবর্তনের পর কমিশনে নতুন নেতৃত্ব এসেছে, তাই ধরে নিয়েছিলাম, এখানে সমস্যা নেই। এ কারণে বিষয়টি প্রাধান্য দিইনি। টাস্কফোর্সের কাজ সুপারিশ দেওয়া। বাস্তবায়ন করবে বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। 

টাস্কফোর্স সদস্য নেসারউদ্দিন বলেন, গত ১৫ বছরে আইন-কানুন ছিল, তবে সুশাসন ছিল না। আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলা হয়েছে– ‘দিয়ে দাও’। বিএসইসির তদন্ত কমিটি সূত্রে জেনেছেন, একটি আইপিওর ক্ষেত্রে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা হয়নি। প্রশ্ন হলো– বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ তাহলে কী করেছে। এখানে একা কারও দায় ছিল না, পুরো সিস্টেমই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। টাস্কফোর্স পুরো বাজারকে স্বচ্ছতায় আনতে সুপারিশ করবে। যেমন– আইপিওর ক্ষেত্রে শুধু কোম্পানি নয়, ইস্যু ম্যানেজার, ভেল্যুয়ার, অডিটর, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সব পক্ষকে জবাবদিহিতে আনার কথা বলা হয়েছে। ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ আছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র স প র শ কর ব এসইস ন বল ন র জন য সমস য সদস য আইপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড