দেশে নূতন করিয়া পক্ষী জ্বর তথা ‘বার্ড ফ্লু’ শনাক্তের খবর যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যশোরের সরকারি একটি মুরগির খামারে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হইয়া দুই সহস্রাধিক মুরগির মৃত্যু হইয়াছে। সাত বৎসর পর পুনরায় এই ভাইরাসের সংক্রমণে স্বাভাবিক কারণেই খামারিরা উদ্বিগ্ন। ২০০৭ সালে দেশে প্রথমবার যখন বার্ড ফ্লু দেখা গিয়াছিল, ঐ বৎসর ১০ লক্ষাধিক মুরগি মারিয়া ফেলা হইয়াছিল। আমরা জানি, এই জ্বর মানবদেহেও সংক্রমিত হইতে পারে। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অভয় দিয়াছে– এইবারের ফ্লু প্রাথমিক অবস্থায় থাকিবার কারণে মানুষের আক্রান্ত হইবার আশঙ্কা কম। আমরা মনে করি, ইহাতে নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না; বরং ফ্লু প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
স্বস্তির বিষয় হইল, শনাক্তের অব্যবহিত পরই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে সরকার। নাজুক পোলট্রি খামারিদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়াছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সীমান্ত অঞ্চলে সতর্কতা, তৎসহিত কোনো মৃত বা সন্দেহজনক অসুস্থ হাঁস-মুরগি বা পাখি দৃষ্টিগোচর হইলে নমুনা সংগ্রহ করিয়া দ্রুত নিকটবর্তী গবেষণাগারে পরীক্ষা করিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছে।
আমরা মনে করি, বার্ড ফ্লু মোকাবিলায় শুধু নির্দেশনাই যথেষ্ট নহে; উক্ত নির্দেশনা কতখানি প্রতিপালিত হইতেছে, উহার তদারকিও জরুরি। বিশেষত যশোরের আলোচ্য খামারে কীভাবে বার্ড ফ্লুর উদ্ভব হইল, উহার উৎস অনুসন্ধান প্রয়োজন। প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় বলিয়া ইহা উচ্চমাত্রার সংক্রামক।
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.
বার্ড ফ্লু শনাক্তে উদ্বিগ্ন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বুধবার বিবৃতি দিয়া পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনয়নের তাগিদ দিয়াছে। বার্ড ফ্লুর সম্প্রসারণ ঘটিলে উহার প্রভাব শুধু পোলট্রি শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না; একই সঙ্গে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। শুধু তাহাই নহে; মানবকুলে উহার সংক্রমণ আরও ভয়াবহ হইতে পারে। তজ্জন্য প্রাথমিক অবস্থায় থাকা এই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য।
আমরা জানি, দেশের প্রান্তিক পোলট্রি খামারিরা সাধারণত সংকটে রহিয়াছে। অভিযোগ, করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক খামারিরা সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগির খাদ্য ও ছানা সংগ্রহ করিতে হিমশিম খাইয়া থাকে। খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা, ভর্তুকি, তৎসহিত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া; প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করা, পোলট্রি খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি এবং ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ বন্ধ করিবার ন্যায় দাবিও সংগঠনটি জানাইয়াছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হইয়াছে, তাহার পরই বাংলাদেশে পোলট্রি খামারে উহার সংক্রমণ দেখা গেল। বস্তুত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তরফ হইতে আরও পূর্বেই সীমান্তে সতর্কতা জারি জরুরি ছিল।
যশোর, তৎসহিত দেশের অন্যত্র বার্ড ফ্লুর সম্প্রসারণ ঘটা বিচিত্র নহে। এহেন দুর্বিপাক হইতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে ভাইরাসটি নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণের ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ত হইয় হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী
কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।
একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।
এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।