মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক
Published: 28th, March 2025 GMT
প্রতিবছরের মতো এ বছরও ঈদের আগে কারখানাশ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পেতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা মার্চের অর্ধেক বেতন ও বোনাস পাননি। ফলে তাঁদের ঈদ উদ্যাপন অনিশ্চিত।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ কয়েকটি জেলার অন্তত ৪৩টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা ছিল। বৃহস্পতিবারও শ্রমিকদের দুটি গ্রুপ শ্রমভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বকেয়া বেতন–বোনাসের দাবিতে।
উল্লেখ্য, ঈদের আগে শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ছুটিসংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে মালিকেরা বোনাস ও মার্চের অর্ধেক বেতন ২০ রমজানের মধ্যে দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন। রোজা শেষ হবে ৩০ অথবা ৩১ মার্চ। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মার্চ মাসের পুরো বেতন ছুটির আগে দেওয়ার কথা। তারপরও শ্রমিকেরা ঈদের আগে অর্ধেক বেতন নিতে রাজি হয়েছিলেন; যদিও মালিকদের সবাই তা–ও পরিশোধ করেননি। এটা শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুরতাই বটে। সব মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিলেও সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা ঠিকই আদায় করে নিয়েছেন। মালিকেরা যাতে ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেন, সে জন্য সরকার রপ্তানি প্রণোদনার দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে।
প্রতিবছরই শ্রমিকদের বোনাস-বেতন নিয়ে এই সমস্যা হয় কেন? এর জন্য শ্রমিকেরা দায়ী নন। দায়ী হলেন একশ্রেণির মালিক। সরকারের সদুপদেশ কিংবা শ্রমিকদের আন্দোলনও তাঁদের বোধোদয় ঘটাতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার সংকটে থাকা ১২টি কারখানার মালিকদের প্রতি বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশা করি, এই নিষেধাজ্ঞার পর তাঁরা শ্রমিকদের সব পাওনা ঈদের আগেই বুঝিয়ে দেবেন।
মালিকদের কারখানার বাইরেও অনেক ব্যবসা আছে। কোনো কারখানা সমস্যায় পড়লে অন্য ব্যবসা দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু শ্রমিকদের শ্রম বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। মাস শেষে বেতনই তাঁদের জীবিকার একমাত্র উপায়। সে ক্ষেত্রে বেতন বকেয়া পড়লে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। মালিকেরা কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি কেনেন নগদ টাকায়, কিন্তু শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে গড়িমসি করে থাকেন।
আমরা মনে করি, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও দায়িত্ব আছে এবং তারা সাধ্যমতো পালন করেও থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো এই দুটি সংগঠনের বাইরেও অনেক মালিক আছেন; যঁাদের ওপর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ চাপ দিয়ে কিছু করতে পারে না।
এবার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পেতে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে, পুলিশের হাতে মার খেতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবর হলো রাস্তায় আন্দোলন করতে গিয়ে একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এর দায় কে নেবে? সংশ্লিষ্ট কারখানামালিক কীভাবে দায় এড়াবেন?
কেবল কারখানামালিক নন, আরও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা নিয়ে প্রতিবছর হাঙ্গামা হয়। অনেক খাতে নিম্নতম মজুরির বিধানও নেই। মালিকদের অনেকে বিদেশে ডলার খরচ করে কেনাকাটা ও ঈদ উদ্যাপন করবেন, আর শ্রমিকেরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে থাকবেন, সেটা হতে পারে না। মালিকদের এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা শোধ করা হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১৬ পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করল ভারত, বিবিসিকে কড়া বার্তা
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর এবার পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ তালিকায় ডন নিউজ, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ ও জিও নিউজের মতো পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমও রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা সংস্থার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনামূলক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমএইচএ) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চ্যানেলগুলোর মোট অনুসারী ৬ কোটি ৩০ লাখের বেশি।
সূত্র জানায়, বন্ধ করে দেওয়া ইউটিউব চ্যানেলগুলো হলো ডন নিউজ টিভি, সামা টিভি, ইর্শাদ ভাট্টি, এআরওয়াই নিউজ, বোল নিউজ, রাফতার, দ্য পাকিস্তান রেফারেন্স, জিও নিউজ, সামা স্পোর্টস, জিএনএন, উজায়ের ক্রিকেট, উমর চিমা এক্সক্লুসিভ, আসমা শিরাজি, মুনীব ফারুক, সুনো নিউজ এইচডি ও রাজি নামা।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা১ ঘণ্টা আগেচ্যানেলগুলোয় ঢুকতে গেলে এখন ব্যবহারকারীরা দেখতে পাচ্ছেন,‘ এই কনটেন্ট এই দেশে আপাতত দেখা যাবে না। জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশের কারণে এটি সরানো হয়েছে। আরও বিস্তারিত জানতে গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট দেখুন।’
এ ছাড়া একটি সূত্র জানায়, বিবিসি ইন্ডিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে হামলাকারীদের সন্ত্রাসী না বলে জঙ্গি (মিলিট্যান্ট) বলায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিবিসির প্রধান জ্যাকি মার্টিনের কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) মাধ্যমে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে। সূত্রের ভাষ্য, ‘নয়াদিল্লির উদ্বেগ বিবিসির কাছে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে এবং এখন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সপি বিভাগ বিবিসির রিপোর্টিং পর্যবেক্ষণ করবে।’
আরও পড়ুনপেহেলগাম নিয়ে ভারতের সংসদে বিশেষ অধিবেশনের দাবি বিরোধীদের১ ঘণ্টা আগেএকই ধরনের উদ্বেগ জানানো হয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকেও। সূত্রের দাবি, ভবিষ্যতেও যদি কোনো সংস্থা কাশ্মীর ইস্যুতে পরিস্থিতির গুরুত্ব কমিয়ে দেখায় বা তথ্যগত ভুল করে, তাহলে এমইএ তাদের সতর্ক করবে।
আরও পড়ুনপেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো৩ ঘণ্টা আগে