নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে ট্রেন, স্বস্তিতে যাত্রীরা
Published: 28th, March 2025 GMT
নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রেন। হাতে সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। সময় হলে আবার কোনো দেরি ছাড়াই ছেড়ে দিচ্ছে ট্রেন। ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আজ সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে টিকিটবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। ট্রেন ছাড়ার আগপর্যন্ত নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় জমছিল। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ভিড় আবার কমে যেতে দেখা গেছে।
ট্রেন সময়মতো আসা, স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে উঠে নির্দিষ্ট আসনে বসতে পারা ও সময়মতো ট্রেন ছাড়া নিয়ে যাত্রীরা স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর অনেক স্বস্তি নিয়ে তাঁরা যাত্রা শুরু করতে পারছেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে চারটি আন্তনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। সকাল ১০টায় জামালপুর এক্সপ্রেস, সোয়া ১০টায় পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস, সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, পৌনে ১১টায় রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে কিংবা নির্ধারিত সময়ের ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই স্টেশন ছেড়ে যায়। এ সময়ে একটি কমিউটার ট্রেনও ছাড়ে। তিতাস কমিউটার ট্রেনটি পৌনে ১০টার পরিবর্তে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ১০টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছাড়ে।
জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলমাজ মিয়া বলেন, ‘এ বছর বেগ পেতে হয়েছে অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রেই। স্টেশনে পৌঁছে বা প্ল্যাটফর্মে এসে ট্রেনে সেই তুলনায় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিটে আগে এসেও দেখলাম ট্রেন নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই ট্রেনে উঠে বসলাম।’ গতকাল তাঁর দুজন বন্ধুও স্বস্তিতে যাত্রার কথা জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সাড়ে ১০টার কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে সকাল সোয়া ৯টার সময়ই প্ল্যাটফর্মে এসে হাজির হন সারাফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে দেখেছি ঈদের সময় কমলাপুর স্টেশন এসেও মানুষের ভিড়ের কারণে নিজের আসনে বসা যেত না। এমন ঝামেলা এড়াতেই আগেভাগে স্টেশনে চলে আসি। প্ল্যাটফর্মে সাড়ে ৯টার সময়ই ট্রেন দিয়ে দেয়। সাড়ে ১০টায় ট্রেন ছাড়বে। এখনো কোনো ভিড় দেখছি না।’
কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০টা ৩২ মিনিটে ছেড়ে যায়। ভেতরে দাঁড়ানো যাত্রী খুব একটা ছিল না।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, ‘সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৩টি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা স্টেশন ছাড়ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ধ র ত সময় প ল য টফর ম ক শ রগঞ জ কমল প র
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা