শরীয়তপুরে ২ ব্যবসায়ীকে অপহরণ, পুলিশসহ আটক ৪
Published: 28th, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদার (২৪) নামে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় চার ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজন পুলিশের কনস্টেবল বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণকারীদের আটক করা হয়।
উদ্ধার হওয়া মোহাম্মদ জুয়েল সরদার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকর কান্দি এলাকার মৃত সোহরাব সরদারের ছেলে ও ফয়সাল সরদার একই এলাকার মোহাম্মদ কাসেম সরদারের ছেলে। তারা ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ২ মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীর চাপ, স্টেশনেও ভিড়
দিনাজপুরে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার
ভুক্তভোগীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধূসর রঙের একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৯৮৫৮) ও একটি সুজুকি জিকসার কালো রঙের মোটরসাইকেল এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এসময় চারজন নেমে এসে জুয়েল ও ফয়সালকে জোর করে মাইক্রোবাসটিতে উঠায়। পরে অপহরণকারীরা ব্যবসয়ীদের নিয়ে রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে যান। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা মাইক্রোবাসটি থামান। এসময় দুই ব্যবসায়ী স্থানীয়দের সহযোগিতা চান। পরে স্থানীয়রা তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সপর্দ করেন। পাঁচজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে একজনকে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে আটক করেছে পুলিশ।
আটকরা হলেন- বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার গারফা এলাকার বাচ্চু মিয়া শেখের ছেলে কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০), তিনি খুলনা জেলা পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে কাউসার তালুকদার (২৯), তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭), তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত এবং শরীফ হোসেন (৩৫) কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার আমৌদা এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে।
অপহরণকারী রুবায়েত মীর বলেন, “কাউসার তালুকদার হচ্ছে আমাদের বস। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।”
প্রত্যক্ষদর্শী ফাহিম আব্বাস বলেন, “এলাকায় ডাকাত পড়েছে শুনে আমি বাড়ি থেকে বের হই। পরে শুনি ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পরে এলাকাবাসী তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন। ঘটনার সময় কয়েকজন পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে শুক্রবার সকালে একজন আটক হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।”
ভুক্তভোগী জুয়েলের স্বজন মিজানুর রহমান বলেন, “আমার চাচাতো ভাই জুয়েল ও ফয়সাল অপহরণ হন। তাদের ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপহরণকারীরা ফয়সালকে দিয়ে তার আপন ভাই স্বাধীন সরদারকে মোবাইলে ফোন করায়। তার কাছে ২০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। তখন ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ থেকে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠায় তাদের। পরে আরো টাকা দাবি করলে তাদের লোভ দেখিয়ে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আনা হয়। সেখানে আসলে জুয়েল ও ফয়সালকে উদ্ধারের পর তিনজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। আজ একজনকে আটক করেছে পুলিশ।”
ভুক্তভোগী ফয়সাল ও জুয়েল জানান, তারা কাপড় ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে দোকান থেকে তারা বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন বেপারীর বাড়ির সামনে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল তাদের গতিরোধ করে। পরে তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয় গাড়িতে থাকা লোকজন।
হাতে পুলিশের হাতকড়া পরিয়ে ও পিস্তল ঠেকিয়ে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করে। নিজেদের পুলিশের লোক বলেও তারা পরিচয় দেয়।
তারা আরো জানান, অপহরণকারীরা তাদের মাদারীপুর লেক পাড় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা স্বাধীনকে ফোন করান। স্বাধীন ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেয় তাদের। পরে বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। সেখানে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করেন।
ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, “দুইজন ব্যবসায়ী রাতে দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের অপহরণ করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপহরণের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক অপহরণ অপহরণক র র এল ক র ম ল সরদ র ব যবস য় ফয়স ল
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।