ময়মনসিংহে ভোগান্তিবিহীন ঈদযাত্রা, কোনো সড়কে যানজট নেই
Published: 28th, March 2025 GMT
যানবাহনের চাপ বাড়লেও এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষকে ময়মনসিংহে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস ও নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় হয়ে নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার সাতটি উপজেলার মানুষ ঘরে ফেরেন। আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গসহ অন্যান্য জেলার বাসও ছেড়ে যায়। এই বাস টার্মিনাল ও ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদাম সেতু এলাকায় নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তি ঈদের সময় আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটগুদাম ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহন বাড়লেও সেতু এলাকায় যানজট নেই। দ্রুত যানবাহন গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
এ সময় কথা হয় গাজীপুর থেকে নেত্রকোনার বারহাট্টায় যাওয়া হাসানুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় পাড়ি থেকে দীর্ঘ সময় যানজটে বসে থাকতে হতো। এবার যানজট নেই বললেই চলে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ নগরের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকা হয়ে জামালপুর জেলা, ময়মনসিংহে ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা উপজেলা বাসিন্দারা চলাচল করেন। আজ বেলা একটার দিকে দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট নেই। যানবাহনের চাপ বাড়ায় কিছু সময় পরপর কিছু গাড়ি আটকে গেলেও তা মিনিট দশেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। অন্য বছরের ঈদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই অংশেও দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হতো বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে অন্যদের সঙ্গে মুক্তাগাছা ফিরছিলেন সালমা বেগম। পেশায় পোশাককর্মী এই নারী বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। খোলা পিকআপ ভ্যানে রোদে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু এবার যানজট নেই অন্য বছরের তুলনায়।’
ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাছের মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য নজট ন ই
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’