ফুলের টবে বাসা বানিয়েছে একজোড়া ঘুঘু। পেড়েছে ডিম। জন্ম নিয়েছে দুটি ফুটফুটে ছানা। তাও আবার ঘরের বারান্দায়! ইট-পাথরের নগরে এ যেন কল্পনার মতো। ব্যতিক্রমী এ দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর গুলশানের সাততলার এক বারান্দায়। এখানে পাখিরা আসে, বিশ্রাম নেয় আবার চলে যায়। থেকে যায় ঘুঘু দম্পতি। বারান্দার বাগানেই তাদের সংসার।
মা পাখি যখন ছানাদের খাবার আনতে যায় তখন পাশে থাকে বাবা। খাবার নিয়ে এলে ছানাদের কিচিরমিচির শব্দ বাড়ে। এমন কিচিরমিচির শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে? তবে সাবিহা তাবাসসুমকে ভাগ্যবান বলতেই হয়। যার হাতের ছোঁয়ায় বারান্দায় গড়ে ওঠেছে সবুজে ঘেরা বাগান। ছোটবেলা থেকেই শখের বসে বাগান এবং লেখালেখি করেন তিনি।
সাবিহা বলেন, ‘বারান্দায় সবসময়ই কোনো না কোনো পাখি আসত। আবার চলে যেত। কিছুদিন ধরে ঘুঘু দম্পতির বেশ আনাগোনা লক্ষ্য করি। হঠাৎ দেখি বারান্দার ফুলের টবে বাসা বানিয়েছে তারা। ডিম পাড়ে এবং দুটো বাচ্চাও জন্ম নেয়। প্রথম প্রথম দেখে তো অবাক হয়েছি। এরপর থেকে আরও সচেতন হয়েছি; যাতে তাদের কোনো রকম অসুবিধা না হয়। বারান্দার দরজা কম খোলা রাখছি। আবার কাপড় শুকাতেও দিচ্ছি না। বাসায় লোকজন কম থাকায় এ ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাখি দম্পতির ছানাদের ঘিরে ব্যস্ততা দেখে কী যে ভালো লাগে! একজন ছানাদের পাশে থাকে তো আরেকজন উড়ে চলে যায়। দেখে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না। কোথাও যাওয়ার সময় কিংবা ফিরে এসেই সবার আগে তাদের দেখি। ভিডিও করি, ছবি তুলে রাখি। পরিচিতদের জানালে তারাও অবাক হয়। অনেকে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। আগে থেকেই বারান্দায় পাখিদের জন্য আলাদাভাবে কিছু খাবার ও পানি রাখতাম। বিশ্রামের জন্য মাটির হাঁড়ি, বাবুইর বাসাও ঝুলিয়ে রেখেছি।’
ছানাদের খাঁচায় ভরে পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এটি করতে একেবারেই নারাজ সাবিহা। তাঁর মতে, ‘পাখিরা যখন বিশ্বাস করে আমার বারান্দায় বাসা বানিয়েছে এখন তাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করি কীভাবে? আমি চাই, তারা নিজেদের মতো করে বসবাস করুক।’ আমার মেয়ে মুনতাহাও এভাবে চিন্তা করে।
সাবিহার বারান্দা বাগানের সাদা চেরি, লাল চেরি বিশেষ নজর কাড়ে। সাবিহা বলেন, ‘গাছগুলো শুধু সজীবতার প্রতীক নয়, এগুলো বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পাথরকুচির পাতা শ্বাসকষ্ট এবং ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আরাম দেয়। তুলসী গাছের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ আছে।’
এই বারান্দা বাগানে আরও রয়েছে রঙ্গন ও কামিনী ফুলের গাছ। যেগুলো বাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। রঙ্গনের লাল ফুলগুলো যেমন বাগানকে জীবন্ত করে তোলে, তেমনি কামিনীর সাদা ফুলের মনোরম ঘ্রাণ পুরো বারান্দায় ছড়িয়ে পড়ে। যেন ব্যস্ত নগরজীবনে এক টুকরো সবুজ বন। সাবিহা বলেন, ‘আমি প্রকৃতি ভালোবাসি। সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মধ্যে বড় হয়েছি। সে সূত্রেই প্রকৃতির সঙ্গে ভালোবাসা। গাছপালা, পশুপাখি আমার দারুণ পছন্দ ছোটবেলা থেকে। ব্যস্ততার শেষে ক্লান্তি এসে যখন একটু প্রশান্তির জন্য বিদ্রোহ শুরু করে তখন বারান্দার প্রাকৃতিক পরিবেশ সব ক্লান্তি, অবসাদ এক নিমেষেই দূর করে দেয়।’ v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেছেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলার ধার্য তারিখ ছিল আজ। পাঁচ মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেনি পুলিশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জন পলাতক আছেন বলে এক মামলায় প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের আবেদন করি। আদালত আসামিদের আদালতে হাজির হতে বিজি প্রেসের মাধ্যমে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। ছয় মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলা তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার অপর আসামিরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) শফি উল হক, (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, নায়েব আলী শরীফ, সাইফুল ইসলাম সরকার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং শহীদ উল্লা খন্দকার।
ঢাকা/এম/রফিক