Samakal:
2025-11-02@23:09:45 GMT

বাংলাদেশের জন্য বড় সংকেত

Published: 29th, March 2025 GMT

বাংলাদেশের জন্য বড় সংকেত

গতবারের ভূমিকম্পটি বাংলাদেশ কিংবা ঢাকা থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে হয়েছে। ওই স্থানে ১৮৫৮ সালেও ৭ দশমিক ৯৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এটি ছিল সাগাইং ফল্ট অঞ্চলে। ১৭০ বছর আগের ওই ভূমিকম্পে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। যদিও সেখানে জনসংখ্যা অনেক কম। সেখানে ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট অঞ্চলে ৭ মাত্রার বা তার বেশি ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী বাগানে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তবে আমাদের জন্য এ ভূমিকম্প একটা বড় সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশের আশপাশে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছিল তার মধ্যে পাঁচটি ভূমিকম্প আছে, যেগুলো ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার। পাঁচটি ভূমিকম্প আছে যেগুলো ১৮৭৯, ১৮৮৫, ১৯১৮, ১৯৩০ সালে সংঘটিত হয়। সেগুলো ১৫০ থেকে ২০০ বছরের মধ্যে আবার ফেরার আশঙ্কা আছে। এগুলো এখন ঝুঁকির মুখে। কারণ, মাস দুয়েক থেকে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে। নেপাল ও মিয়ানমারেও বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে। এগুলো মিলিয়ে আমাদের এখানে ১৫০ থেকে ২০০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৫ কিংবা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার কথা, তা যে কোনো মুহূর্তে সংঘটিত হতে পারে। 

এবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, থাইল্যান্ডের মাটি খুব নরম। আমাদের আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে ব্যাক টু ব্যাক ৭ দশমিক ৫ ও ৬ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে তুরস্কের শহরে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ মারা যান। সিরিয়ায়ও ওই ভূমিকম্পে ১০ হাজার মানুষ মারা যান। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জনসংখ্যা থাইল্যান্ড ও তুরস্কের চেয়ে ১০-১৫ গুণ বেশি। এখানে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হবে। 
ফলে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের বিল্ডিং কোড মেনে নতুন ভবন তৈরি করতে হবে। পুরোনো ভবনগুলোকে মজবুত করতে হবে। কালার কোড অনুযায়ী ভবনগুলোকে চার ভাগে ভাগ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের এক্ষুনি উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের ভূ-অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে– এমন পাঁচটি ফল্ট লাইন বা টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল আছে। এর একটি ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মধুপুরের ওপর দিয়ে গেছে। ওই ফল্ট লাইনে যদি ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পও হয়, তাতেও ঢাকার ৩০ শতাংশ ভবন মাঝারি থেকে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হতে পারে।

ফল্ট লাইন হলো দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। যেখানে সাধারণত ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। অন্য চারটি ফল্ট লাইন হলো– কক্সবাজার-ফেনী প্লেট বাউন্ডারি ১, ফেনী-শ্রীমঙ্গল প্লেট বাউন্ডারি ২, শ্রীমঙ্গল-ভারত প্লেট বাউন্ডারি ৪ এবং ডাউকি ফল্ট লাইন। টেকটোনিক প্লেটগুলো সব সময়ই ধীরগতিতে ভ্রাম্যমাণ থাকে। ফলে এ ফল্ট লাইনগুলো থেকে সব সময়ই শক্তি নিঃসরিত হয় এবং যে কোনো সময় এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা আছে। মধুপুর ফল্ট লাইনে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় ১৮৮৫ সালে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। ডাউকি ফল্ট লাইনে ১৮৯৭ সালে ৮ মাত্রার কম্পন হয়। আর সর্বশেষ ১৯১৮ সালে ফেনী-শ্রীমঙ্গল প্লেট বাউন্ডারি-২তে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ বা এর আশপাশের অঞ্চলে প্রতি ১৫০ বছরে সাত বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই হিসাবে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে গত এক মাসে পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ ধরনের মৃদু ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো ঠিক করার এখনই সময়। গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, ভূমিকম্প প্রতিকার ও প্রতিরোধে প্রস্তুতি হতে হবে তিনটি স্তরে। প্রথমটি হলো, সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি। এর মধ্যে রয়েছে তিনি যে ভবনটিতে থাকেন, সেটি ভূমিকম্প সহনীয় কিনা। যদি ভূমিকম্প সহনীয় না হয়, তাহলে সেটিকে ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা। নতুন ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি করা। এ ছাড়া ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি, ভূমিকম্পের সময় করণীয় এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে করণীয়গুলো জেনে রাখা। মোট কথা, এ বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন থাকা। দ্বিতীয় স্তরে সচেতনতার বিষয়টি হলো, জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সব শেষে সরকারের সমন্বয়।
লেখক : অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ম ত র র ভ ম কম প ভ ম কম প র ৭ দশম ক ৫ প রস ত ত ম কম প হ আম দ র ত রস ক ধরন র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ