প্রায় ৫০০ বছর আগে শুরু হওয়া এই মেলা এবারও বসছে ঈদের দিন
Published: 29th, March 2025 GMT
নলখাগড়ার কাণ্ড কেটে ছোট ছোট বাঁশি বানানো হয়। তার এক মাথায় বাঁধা থাকে রঙিন বেলুন। ফুঁ দিয়ে বেলুন ফোলাতে হয়। তারপর দম দেওয়া বাঁশিটি একা একাই অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকে। সে বাঁশির সুর আলাদা। জীবনে অনেক বাঁশি শুনেছি। নলখাগড়ার বাঁশি আমার শৈশবকে যেখানে বেঁধে ফেলেছে, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়াও সেখানে যেতে পারেননি। জানি না, সেই বাঁশির সুরে কোন জাদু মিশে আছে।
শৈশবের ঈদের স্মৃতির কথা ভাবতে গিয়ে প্রথমে নলের বাঁশির সেই সুরই যেন কানে এসে লাগল। রাজশাহীর বাঘায় আমার গ্রামের বাড়ি। বাঘার মানুষের কাছে ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে ঈদমেলা। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এ মেলা হয়ে ওঠে সব মানুষের মিলনমেলা। প্রায় ৫০০ বছরের এই মেলা প্রতিবছর ঈদের দিন থেকে শুরু হয়। চলে এক সপ্তাহ।
মেলায় এখনো থাকে সার্কাস, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ, জাদুসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন। আসবাবসহ হরেক পসরা ও মিষ্টির দোকানে উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে।
ছোটবেলায় আমাদের ঈদের আনন্দ বলতে ওই একটা জিনিসই ছিল। মেলা থেকে চার আনা দিয়ে বাঁশি কিনে সারা পথ বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফেরা। এর চেয়ে সুখাবহ কোনো আনন্দভ্রমণের স্মৃতি সারা জীবনে আর কোথাও মেলেনি। এটা শুধু কথার কথা নয়, একটু উদাহরণ দিলে শৈশবের এই কাঁচা আবেগের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
তখন বয়স কত বা কোন ক্লাসে পড়ি, ঠিক মনে নেই। শুধু এইটুকু মনে আছে, বাড়ি থেকে একাই পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বাঘায় ঈদমেলায় যেতে পারি।
আমার টাইফয়েড জ্বর। আগের দিনে এই জ্বর হলে চিকিৎসকেরা রোগীকে ১৫-২০ দিন ধরে না খাইয়ে রাখার পরামর্শ দিতেন। না খাওয়ার এই পর্বটিকে গ্রামের মায়েরা ‘রঙ্গনা’ বলতেন। রঙ্গনা শেষ হলে রোগীর মুখে পথ্য তুলে দিতেন। বার্লি আর পানি জ্বাল দিয়ে বানানো হতো সেই পথ্য। স্যুপের মতো একটা জিনিস, মাছের ঝোল দিয়ে রোগীর মুখে এক-আধচামচ করে দেওয়া হতো। কয়েক দিন পরে মিলত নরম ভাত।
আমার সবে রঙ্গনা শেষ হয়েছে। মা পথ্য দিচ্ছে। ১০-১৫ দিন ভাতের দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে ঈদের বাঁশি বেজে উঠল। মানে, ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমার কানে বাজতে থাকে নলখাগড়ার বাঁশি। সেবার বাঁশি বাজতে শুরু করেছে কিন্তু মা ভাত দিচ্ছে না। আরও কয়েক দিন পথ্যতেই থাকতে হবে। এই নিয়ম অমান্য করলে আবার টাইফয়েড ফিরে আসতে পারে। তাহলে আবার না খেয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এভাবেই ঈদ চলে এল। মা ঘোষণা দিয়েছে, কিছুতেই বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলেই টাইফয়েড ফিরে আসবে, কিন্তু বাঁশি আমাকে কিছুতেই স্থির থাকতে দিচ্ছে না। বাঁশির সুর আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মেলায়। দেখতে পাচ্ছি গাঁয়ের ছেলেরা দল বেঁধে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছে। আর দেখাচ্ছে, কার বাঁশির দম কত বেশি। তখন আমার দেহটাই শুধু বিছানায় পড়ে রয়েছে। মনটা উড়ে গেছে।
বাঘা দরগাহ শরিফ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাবানার আজ জন্মদিন
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি শাবানা। রবিবার (১৫ জুন) এ অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সিনেমার অবিস্মরণীয় এই তারকা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। কিন্তু সারা দেশের মানুষ তাকে হৃদয়ে ধারণ করে ‘শাবানা’ নামে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ (১৯৬২) সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক হয় শাবানার। সেখান থেকে শুরু—তারপর এক দীর্ঘ পথচলা, যেখানে শাবানা হয়ে ওঠেন একের পর এক যুগান্তকারী সিনেমার মুখ। চার দশকের ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলা সিনেমার আকাশে নিজেকে স্থায়ী নক্ষত্রে রূপান্তরিত করেন।
‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘চাঁপা ডাঙার বউ’, ‘আক্রোশ’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘বাংলার নায়ক’—এমন অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের মনে দাগ কেটেছেন শাবানা। জনপ্রিয়তা ও অভিনয়গুণে অনন্য এক শিল্পী, যিনি রোমান্স থেকে শুরু করে সমাজধর্মী, দেশপ্রেম বা পারিবারিক—সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন:
‘অত্যাচারী’ স্বামীর মৃত্যুতে কারিশমার শোক, যা বললেন জয়া
দর্শক বলছেন আমি যেন শুভ ভাইকে বিয়ে করি: মন্দিরা
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাবানা। প্রযোজক হিসেবেও পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। নাট্য ও সংস্কৃতি জগৎ থেকেও অর্জন করেছেন বাচসাস, নাট্যসভা, ললিতকলা একাডেমি ও কথক একাডেমি পুরস্কার।
ব্যক্তিজীবনে ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিককে। তিন সন্তানের জননী শাবানা ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই অভিনয় জীবন থেকে বিদায় নেন। ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।
অভিনয়ে ফিরবেন কি না, সে প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। কিন্তু শাবানা এমন এক নাম, যার অবদান আর স্মৃতিময়তা কখনো ম্লান হওয়ার নয়।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত