নলখাগড়ার কাণ্ড কেটে ছোট ছোট বাঁশি বানানো হয়। তার এক মাথায় বাঁধা থাকে রঙিন বেলুন। ফুঁ দিয়ে বেলুন ফোলাতে হয়। তারপর দম দেওয়া বাঁশিটি একা একাই অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকে। সে বাঁশির সুর আলাদা। জীবনে অনেক বাঁশি শুনেছি। নলখাগড়ার বাঁশি আমার শৈশবকে যেখানে বেঁধে ফেলেছে, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়াও সেখানে যেতে পারেননি। জানি না, সেই বাঁশির সুরে কোন জাদু মিশে আছে।

শৈশবের ঈদের স্মৃতির কথা ভাবতে গিয়ে প্রথমে নলের বাঁশির সেই সুরই যেন কানে এসে লাগল। রাজশাহীর বাঘায় আমার গ্রামের বাড়ি। বাঘার মানুষের কাছে ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে ঈদমেলা। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এ মেলা হয়ে ওঠে সব মানুষের মিলনমেলা। প্রায় ৫০০ বছরের এই মেলা প্রতিবছর ঈদের দিন থেকে শুরু হয়। চলে এক সপ্তাহ।

মেলায় এখনো থাকে সার্কাস, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ, জাদুসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন। আসবাবসহ হরেক পসরা ও মিষ্টির দোকানে উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে।

ছোটবেলায় আমাদের ঈদের আনন্দ বলতে ওই একটা জিনিসই ছিল। মেলা থেকে চার আনা দিয়ে বাঁশি কিনে সারা পথ বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফেরা। এর চেয়ে সুখাবহ কোনো আনন্দভ্রমণের স্মৃতি সারা জীবনে আর কোথাও মেলেনি। এটা শুধু কথার কথা নয়, একটু উদাহরণ দিলে শৈশবের এই কাঁচা আবেগের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

তখন বয়স কত বা কোন ক্লাসে পড়ি, ঠিক মনে নেই। শুধু এইটুকু মনে আছে, বাড়ি থেকে একাই পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বাঘায় ঈদমেলায় যেতে পারি।

আমার টাইফয়েড জ্বর। আগের দিনে এই জ্বর হলে চিকিৎসকেরা রোগীকে ১৫-২০ দিন ধরে না খাইয়ে রাখার পরামর্শ দিতেন। না খাওয়ার এই পর্বটিকে গ্রামের মায়েরা ‘রঙ্গনা’ বলতেন। রঙ্গনা শেষ হলে রোগীর মুখে পথ্য তুলে দিতেন। বার্লি আর পানি জ্বাল দিয়ে বানানো হতো সেই পথ্য। স্যুপের মতো একটা জিনিস, মাছের ঝোল দিয়ে রোগীর মুখে এক-আধচামচ করে দেওয়া হতো। কয়েক দিন পরে মিলত নরম ভাত।

আমার সবে রঙ্গনা শেষ হয়েছে। মা পথ্য দিচ্ছে। ১০-১৫ দিন ভাতের দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে ঈদের বাঁশি বেজে উঠল। মানে, ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমার কানে বাজতে থাকে নলখাগড়ার বাঁশি। সেবার বাঁশি বাজতে শুরু করেছে কিন্তু মা ভাত দিচ্ছে না। আরও কয়েক দিন পথ্যতেই থাকতে হবে। এই নিয়ম অমান্য করলে আবার টাইফয়েড ফিরে আসতে পারে। তাহলে আবার না খেয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এভাবেই ঈদ চলে এল। মা ঘোষণা দিয়েছে, কিছুতেই বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলেই টাইফয়েড ফিরে আসবে, কিন্তু বাঁশি আমাকে কিছুতেই স্থির থাকতে দিচ্ছে না। বাঁশির সুর আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মেলায়। দেখতে পাচ্ছি গাঁয়ের ছেলেরা দল বেঁধে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছে। আর দেখাচ্ছে, কার বাঁশির দম কত বেশি। তখন আমার দেহটাই শুধু বিছানায় পড়ে রয়েছে। মনটা উড়ে গেছে।

বাঘা দরগাহ শরিফ.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।

মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।

ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।

তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ