নির্বাচনে নাগরিকেরা কোন দলকে ভোট দেবেন
Published: 30th, March 2025 GMT
২০০৮ সালের পর থেকে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন চলেছে, তারই কারণে বাংলাদেশের ভোটারদের মনস্তত্ত্ব আমাদের একেবারেই অজানা থেকে গেছে। ভোটারদের নির্বাচনী আচরণ গত ১৭ বছরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এই মুহূর্তে তা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে আমরা তেমন কিছুই জানি না বা ধারণাও করতে পারছি না।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভাঙন আগামী নির্বাচনের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে, যেখানে রাজনীতির পট প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তেমন কোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। ভোটারদের পছন্দের পরিবর্তন বুঝতে বেশ কিছু জরিপ ইতিমধ্যেই পরিচালিত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ জরিপটি পরিচালনা করেছে ইনোভিশন নামের একটি গবেষণা ও পরামর্শ সংস্থা।
ভোটারদের পছন্দের বৈচিত্র্যময় কাঠামো
আগামী নির্বাচনের সময়সূচি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হাত ধরে একটি নতুন যুব নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের গঠন ইত্যাদি নিয়ে দেশজুড়ে যখন ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল, সেই সময়ে ইনোভিশনের এই জরিপ সেই বিষয়গুলোতেই বেশ কিছু সংখ্যাতাত্ত্বিক ফলাফল তুলে ধরে। ৮ মার্চ ২০২৫–এ তাদের জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের ৮টি বিভাগ এবং ৬৪টি জেলাতে পরিচালিত হয়েছিল। জরিপে মোট ১০ হাজার ৬৯৬ জন অংশগ্রহণ করেছেন।
এই জরিপের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, কাকে ভোট দিতে চান—যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী, ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ আওয়ামী লীগ ও ৫ দশমিক ১ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন যুব নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলকে। বাকি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ অন্য দলগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
কিছু রাজনৈতিক দল এবং তাদের সমর্থকেরা এই ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও কেউ কেউ তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জরিপটির ফলাফল ঠিক থাকলেও তার উপস্থাপনার গলদের কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ‘যদি এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো, আপনি কাকে ভোট দিতেন?’ এই প্রশ্নটিকে আলাদা করে প্রতিবেদন করলে ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়।
প্রশ্নটি আদতে তিনটি প্রশ্নের একটি সেটের তৃতীয় অংশ। এই সেটের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘কাকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত কি নিয়েছেন?’ এই প্রশ্নটি ১০ হাজার ৬৯৬ জন উত্তরদাতার মধ্যে সবাইকে করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৬ হাজার ৬৩২ জন ইতিবাচক উত্তর দিয়েছিলেন।
এর পরের প্রশ্নটি শুধু এই ৬ হাজার ৬৩২ জনকে করা হয়েছিল, যেখানে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করবেন কি না। এর উত্তরে ৪ হাজার ৩৫৬ জন ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন এবং বাকিরা তা প্রকাশ করতে চাননি।
তৃতীয় প্রশ্নটি, অর্থাৎ ভোট কাকে দেবেন—শুধু এই ৪ হাজার ৩৫৬ জনকে করা হয়েছিল, যাঁরা তাঁদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা প্রকাশ করতে রাজি হয়েছেন। তাই ভোটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যে তথ্য নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে, তা জরিপের একটি ছোট অংশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আমরা পুরো নমুনার ভিত্তিতে যদি একই তথ্য উপস্থাপন করি, তাহলে ভোটারদের পছন্দের কাঠামো দাঁড়াবে নিম্নরূপ।
ভোটারদের পছন্দের রূপরেখা
এই চিত্র থেকে সবচেয়ে আগে যেটা চোখে পড়ে সেটা হলো, অর্ধেকের বেশি ভোটারের পছন্দের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। আমরা যদি সিদ্ধান্ত না নেওয়া, প্রকাশ না করা এবং উত্তর দিতে অস্বীকার করা ভোটারদের যোগ করি, তা সব মিলিয়ে ৫৯ শতাংশে দাঁড়ায়।
তার মানে, এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আমরা মাত্র ৪১ শতাংশ ভোটারদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারি। বাকি যে বিশাল গ্রুপ, তাদের ব্যাপারে আমরা এখনো অন্ধকারে।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে গত কয়েক মাসে ভোটারদের পছন্দের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বিআইজিডি পালস জরিপে দেখা গিয়েছিল, প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীন এবং ১৩ শতাংশ মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাকি ভোটারদের মধ্যে ১৬ শতাংশ বিএনপি, ১১ শতাংশ জামায়াত, ৯ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৩ শতাংশ কোনো ইসলামি দল এবং ২ শতাংশ নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। প্রায় ২ শতাংশ বলেছেন যে তাঁরা ভোট দেবেন না, বাকি ৬ শতাংশ অন্যান্য দলকে সমর্থন করেছেন।
ইনোভিশন জরিপ যেহেতু উত্তরদাতাদের অধিকাংশের পছন্দ জানতে পারেনি, তাই এই মুহূর্তে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে কিছু বলাটা কঠিন। এই ভোটারদের, বিশেষ করে তারা কে, কোথা থেকে এসেছেন এবং ভোটের সিদ্ধান্ত নির্ধারণে তাঁরা কী কী বিষয় বিবেচনা করছেন, তা খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁদের ভোটই ঠিক করবে যে বিএনপি নিরঙ্কুশ (অথবা সাধারণ) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি জামায়াত শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে; অথবা ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলটি পুরোনো দলগুলোর আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে একটি কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসবে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, যদি সিদ্ধান্ত নেননি (২৯%) এমন ভোটারদের অবস্থান, বয়স বা লিঙ্গের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়, তাহলে দেখা যায় শহুরে, জেনারেশন জি (জেন–জি, ১৮-২৮ বয়সী) এবং নারী ভোটারদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতার হার বেশি এবং এই অংশটি ভোটের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই ২৯ শতাংশ, যাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁদের ‘সুইং ভোটার’ (একজন ভোটার যিনি যেকোনো দিকে ভোট দিতে পারেন) হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতি আনুগত্য নেই। তাঁদের যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে কেন তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, উত্তরে (একাধিক উত্তর প্রযোজ্য ছিল, যা আমরা সুবিধার জন্য একক উত্তরে বিশ্লেষণ করছি) প্রায় ৪০ শতাংশ অনির্ধারিত ভোটার জানিয়েছেন যে তাঁরা ভোট দেওয়ার আগে প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে চান।
আরও ২৭ শতাংশ তাঁদের সিদ্ধান্ত নির্বাচনের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নেবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক, বিশেষ করে যে ৫ শতাংশ বলেছেন ভোটের সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ, তাঁদের পছন্দের দল পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, তা অনিশ্চিত।
এ ছাড়া সিদ্ধান্ত না নেওয়া এই গ্রুপের ৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তাঁরা কোনো মূলধারার রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করেন না এবং ৩ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বিদ্যমান দলগুলোকে পছন্দ করেন না। অতএব এই ১১ শতাংশ (৮%+৩%) অনির্ধারিত ভোটার হয়তো একটি নতুন রাজনৈতিক দলকে বেছে নেবেন, যদি দলটি সঠিকভাবে তাদের অবস্থান উপস্থাপন করতে পারে।
আমাদের পুরোনো কিছু জরিপেও উঠে এসেছিল যে বাংলাদেশের মানুষ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি হতাশ হয়ে পড়ছেন এবং বিকল্পের খোঁজ করছেন। যেমন এশিয়া ফাউন্ডেশন-বিআইজিডি জরিপ ২০২২-এ যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তাঁরা যদি একটি নতুন দলের সঙ্গে মতাদর্শের সঙ্গে মিল খুঁজে পান, তাহলে সেই দলকে প্রাধাণ্য দেওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? প্রায় ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা ‘খুব সম্ভব’ এবং ১৬ শতাংশ ‘সম্ভব’ বলেছিলেন। ২০১৮ সালে একই প্রশ্নে প্রায় একই ধরনের উত্তর ছিল।
ভোটারদের পছন্দে পরিবার ও সমাজের প্রভাব
নাগরিকেরা কীভাবে তাঁদের ভোটদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তার ওপরও এই জরিপ আলোকপাত করেছে। ফলাফলে দেখা যায়, পরিবারে ভোটদানের চর্চা ও সমাজে প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন প্রশ্ন করা হয় ‘কে ভোটের সিদ্ধান্তে বেশি প্রভাব ফেলেন’(একাধিক উত্তর প্রযোজ্য ছিল, যা আমরা সুবিধার জন্য একক উত্তরে বিশ্লেষণ করছি), তখন পরিবার সদস্য (২৮.
সংবাদমাধ্যমেরও একটি বড় প্রভাব চোখে পড়ে এখানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংবাদ (১১.১%), টেলিভিশন সংবাদ (৯.২%), সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট (৩%), সংবাদপত্র (২.৬%) এবং টক শো (১.৩%) -এর কথা উল্লেখ করেছেন একটা বড় গ্রুপের মানুষ।
তা ছাড়া প্রায় ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেছেন যে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের ভোটদানে প্রভাব ফেলেন। আর ৯ শতাংশ মন্তব্য করেননি বা অন্য উত্তর দিয়েছেন।
আমরা যদি যোগ করি, তাহলে দেখা যায় যে বেশির ভাগ (৫১%) উত্তর পরিবার, বন্ধু ও সম্প্রদায়ের প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। এর তুলনায় ভোটদানের সিদ্ধান্ত গঠনে মিডিয়া উৎসগুলোর ভূমিকার হার মাত্র ২৭।
সারসংক্ষেপ
এই জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করলে তিনটি বিষয় উঠে আসে। প্রথমত, ভোটের মাঠে কেবল বিএনপি ও আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক যে দ্বিদলীয় পুরোনো আধিপত্য ছিল, তা এখন ভেঙে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ছোট ধর্মভিত্তিক দল এবং নতুন যুব নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের উত্থান এই ভাঙনের কারণ হতে পারে। তবে ভোটারদের পছন্দ এখনো পরিবর্তনশীল এবং এটি বেশ কিছু মাস পরেই স্পষ্ট হবে। এই পরিবর্তনশীলতা ভোটদান বা পছন্দের দল নির্ধারণে ভোটারদের সিদ্ধান্তহীনতা এবং নিজেদের পছন্দ প্রকাশের অনীহার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে।
তৃতীয়ত, পরিবার, বন্ধু ও সামাজিক বলয় মানুষের ভোটের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। এই ধরনের যৌথ ও কিছুটা বংশানুক্রমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া পুরোনো দলগুলো, যেমন বিএনপি ও জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক হলেও নতুন যুব নেতৃত্বাধীন দলের জন্য এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ড. মির্জা হাসান ও সৈয়দা সেলিনা আজিজ ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (বিআইজিডি) কর্মরত।
ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স দ ধ ন ত ন নন দ র পছন দ র র ফল ফল র জন য কর ছ ন পর ব র ত হয় ছ হয় ছ ল বল ছ ন দশম ক দলগ ল ব এনপ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।