কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে বাজার, গ্রাম
Published: 30th, March 2025 GMT
নদীভাঙনের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় অনেক দিনের। বছরের পর বছর ধরে নদীর পাড় ভাঙে, বিলীন হয় ঘরবাড়ি। ঘরবাড়ি হারানো এই মানুষগুলোর অনেকে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছেন। কেউ নদীপারের কাছাকাছি কোথাও নতুন করে আবাস গড়েছেন। নদী ভাঙে আর ভাঙনে বিপন্ন মানুষ নতুন করে ঠিকানার খোঁজ করেন। অন্য কোথাও গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরির সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের কাছেই নতুন করে মাথা গোঁজার চেষ্টা করেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীপারের কামালপুর, ছিক্কা, আমনপুরসহ নদীপারের গ্রামের মানুষ অনেক বছর ধরেই এমন ভাঙনের মোকাবিলা করে টিকে আছেন। নদীপারের কালারবাজার-নলুয়ারমুখ বাজারটিও এই ভাঙনের কবলে আছে অনেক বছর ধরে। বাজারের অনেক দোকানপাট এরই মধ্যে নদীতে তলিয়ে গেছে।
আমার বাড়ি এখন নদীর মধ্যে। অনেকের ঘরর মাঝখানে ফাটা ধরছে। বাড়িতে ফাটা ধরছে ইয়ালিছ মিয়া, কামালপুর গ্রামের বাসিন্দাকামালপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ সৈয়দ ফাহাদুর রহমান কুশিয়ারা নদী থেকে গোসল সেরে বাড়িতে ফিরছিলেন। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কথা তুলতেই তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই তো নদীর পাড় ভাঙছে। কামালপুর, ছিক্কা ছাড়াও নলুয়ারমুখ-কালারবাজার, বাজারের পশ্চিম দিকে আমনপুরে নদী ভাঙছে। অনেকেরই ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে।
১৮ মার্চ দুপুরে উত্তরভাগ ইউনিয়নের নলুয়ারমুখ-কালারবাজারের খেয়াঘাট সড়ক দিয়ে নদীপারে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়জুড়ে বাঁধে ছোট-বড় অনেক ফাটল। বাঁধের মাটি ধসে পড়ছে। খেয়াঘাটের পাকা সিঁড়ি অনেকটা ঝুলে আছে। খেয়াঘাটের পূর্ব দিকে কামালপুর এলাকায় ভাঙন ক্রমাগত বেড়ে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে, পাড় ধসে পড়ছে। কোনো স্থানের ধস একেবারে পাড়সংলগ্ন বাড়ি, দোকানঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে।
কামালপুরের পূর্ব দিকের গ্রাম হচ্ছে ছিক্কা। সেই গ্রামের দিকেও ভাঙন চলছে। বাঁধের ফাটল কারও বাড়ির উঠান, ঘরের ভিটা ছুঁয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো.
কামালপুরের ইয়ালিছ মিয়া হাতের ইশারায় কুশিয়ারা নদীর প্রায় মাঝবরাবর স্থান দেখিয়ে বলেন, ‘আমার বাড়ি এখন নদীর মধ্যে। অনেকের ঘরর মাঝখানে ফাটা ধরছে। বাড়িতে ফাটা ধরছে।’
ছিক্কা গ্রামের নূর মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ি সারা ভাঙি নিছে (সম্পূর্ণ ভেঙে নিয়েছে)। ১৫-২০ দিন ধরি বেশি ভাঙা দের (দিচ্ছে)। আমরাসহ পাঁচ-ছয়টা পরিবার খুব রিস্কের মধ্যে আছি।’
কামালপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, কামালপুর গ্রামের উল্টো দিকে সিলেটের বালাগঞ্জের দিকে কুশিয়ারা নদীর বুকে একটি চর জেগে আছে। সেই চরে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে ধাক্কা খেয়ে কামালপুরের দিকে এসে আঘাত করে। তখন পাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এই চরটা খনন করে দিলে পানি কামালপুরের দিকে এসে এতটা আঘাত করত না।
পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ব্লক ফেলা হবে। পাউবো সিলেট ও মৌলভীবাজার যৌথভাবে প্রকল্প তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নদ প র র নদ র প ঘরব ড়
এছাড়াও পড়ুন:
জমি নিয়ে বিরোধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গফরগাঁও থানায় গত বছরের নভেম্বরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। তিনি রসুলপুর ইউনিয়নের ভরভরা গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, আলাল উদ্দিন ১৯৯৯ সালে ভরভরা গ্রামের রুস্তম আলীর কাছ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ জমি কিনে নেন। রুস্তম আলী ওই জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর আলাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলেরা প্রায় দুই যুগ ধরে সেখানে চাষাবাদ করে আসছেন। গত আমন মৌসুমে আলাল উদ্দিন জানতে পারেন, তিনি রুস্তম আলীর (বর্তমানে মৃত) কাছ থেকে যে জমি কিনে ভোগদখল করে আসছেন, সাফকবলা দলিলপত্রে উল্লেখ করা দাগ নম্বরের সঙ্গে ওই জমির দাগ নম্বরের মিল নেই।
আলাল উদ্দিনের কেনা জমির দলিলপত্রে আলালপুর মৌজার যে দাগ নম্বরের উল্লেখ রয়েছে, সেটাও রুস্তম আলীর জমি। কিন্তু ওই জমি রুস্তম আলী ১৯৯৪ সালে অন্যজনের কাছে বিক্রি করেন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দুই পক্ষ সালিশ বৈঠক ডাকে। সালিশে সিদ্ধান্ত হয় আলাল উদ্দিন যে জমি ভোগ করছেন সেই জমির দলিলপত্র সংশোধন করে দেওয়ার। কিন্তু রুস্তম আলীর ছেলেরা সালিশের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। উপায়ান্তর না পেয়ে দাগ নম্বর সংশোধনীর জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন আলাল উদ্দিন।
আদালত বিক্রেতা পক্ষকে তাদের দলিলপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হতে নোটিশ পাঠান। নোটিশ পেয়ে আলাল উদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রুস্তম আলীর ছেলেরা। আলাল উদ্দিনের রোপণ করা ধান কেটে নিয়ে জমিটি দখল করে প্রতিপক্ষ। এর পর থেকে হুমকি দিয়ে আসছেন অভিযুক্তরা।
হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে রুস্তম আলীর ছেলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘আলাল আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করেছেন। এখন যা করবে প্রশাসনই করবে।’