নদীভাঙনের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় অনেক দিনের। বছরের পর বছর ধরে নদীর পাড় ভাঙে, বিলীন হয় ঘরবাড়ি। ঘরবাড়ি হারানো এই মানুষগুলোর অনেকে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছেন। কেউ নদীপারের কাছাকাছি কোথাও নতুন করে আবাস গড়েছেন। নদী ভাঙে আর ভাঙনে বিপন্ন মানুষ নতুন করে ঠিকানার খোঁজ করেন। অন্য কোথাও গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরির সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের কাছেই নতুন করে মাথা গোঁজার চেষ্টা করেন।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীপারের কামালপুর, ছিক্কা, আমনপুরসহ নদীপারের গ্রামের মানুষ অনেক বছর ধরেই এমন ভাঙনের মোকাবিলা করে টিকে আছেন। নদীপারের কালারবাজার-নলুয়ারমুখ বাজারটিও এই ভাঙনের কবলে আছে অনেক বছর ধরে। বাজারের অনেক দোকানপাট এরই মধ্যে নদীতে তলিয়ে গেছে।

আমার বাড়ি এখন নদীর মধ্যে। অনেকের ঘরর মাঝখানে ফাটা ধরছে। বাড়িতে ফাটা ধরছে ইয়ালিছ মিয়া, কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা 

কামালপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ সৈয়দ ফাহাদুর রহমান কুশিয়ারা নদী থেকে গোসল সেরে বাড়িতে ফিরছিলেন। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কথা তুলতেই তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই তো নদীর পাড় ভাঙছে। কামালপুর, ছিক্কা ছাড়াও নলুয়ারমুখ-কালারবাজার, বাজারের পশ্চিম দিকে আমনপুরে নদী ভাঙছে। অনেকেরই ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে।

১৮ মার্চ দুপুরে উত্তরভাগ ইউনিয়নের নলুয়ারমুখ-কালারবাজারের খেয়াঘাট সড়ক দিয়ে নদীপারে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়জুড়ে বাঁধে ছোট-বড় অনেক ফাটল। বাঁধের মাটি ধসে পড়ছে। খেয়াঘাটের পাকা সিঁড়ি অনেকটা ঝুলে আছে। খেয়াঘাটের পূর্ব দিকে কামালপুর এলাকায় ভাঙন ক্রমাগত বেড়ে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে, পাড় ধসে পড়ছে। কোনো স্থানের ধস একেবারে পাড়সংলগ্ন বাড়ি, দোকানঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে।

কামালপুরের পূর্ব দিকের গ্রাম হচ্ছে ছিক্কা। সেই গ্রামের দিকেও ভাঙন চলছে। বাঁধের ফাটল কারও বাড়ির উঠান, ঘরের ভিটা ছুঁয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো.

কামাল বলেন, কামালপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি ছিল। ভাঙনের কারণে তাঁদের তিনটি পরিবার পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রাম ছিক্কাতে গিয়ে নতুন করে ঘর তুলে বসবাস করছে। কিন্তু ছিক্কা গ্রামের যেখানে গিয়ে ঘর তুলেছেন, সেই স্থানটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। 

কামালপুরের ইয়ালিছ মিয়া হাতের ইশারায় কুশিয়ারা নদীর প্রায় মাঝবরাবর স্থান দেখিয়ে বলেন, ‘আমার বাড়ি এখন নদীর মধ্যে। অনেকের ঘরর মাঝখানে ফাটা ধরছে। বাড়িতে ফাটা ধরছে।’

ছিক্কা গ্রামের নূর মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়ি সারা ভাঙি নিছে (সম্পূর্ণ ভেঙে নিয়েছে)। ১৫-২০ দিন ধরি বেশি ভাঙা দের (দিচ্ছে)। আমরাসহ পাঁচ-ছয়টা পরিবার খুব রিস্কের মধ্যে আছি।’ 

কামালপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, কামালপুর গ্রামের উল্টো দিকে সিলেটের বালাগঞ্জের দিকে কুশিয়ারা নদীর বুকে একটি চর জেগে আছে। সেই চরে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে ধাক্কা খেয়ে কামালপুরের দিকে এসে আঘাত করে। তখন পাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এই চরটা খনন করে দিলে পানি কামালপুরের দিকে এসে এতটা আঘাত করত না। 

পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ব্লক ফেলা হবে। পাউবো সিলেট ও মৌলভীবাজার যৌথভাবে প্রকল্প তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নদ প র র নদ র প ঘরব ড়

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ