পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী। বাজারগুলোতে পোলওয়ের চাল, সেমাই, চিনি, গরুর মাংস ও মুরগি কেনার ধুম পড়েছে। ঈদের আগে এসব পণ্যের চাহিদা বেশ বেড়েছে। গরুর মাংস ও মুরগির দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।

রাজধানীর বাজারগুলোতে গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজি প্রতিতে ৫০ টাকা। ব্রয়লার ও পাকিস্তানি মুরগির (সোনালী) দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তবে, চিনি, সেমাই, তেল ও পোলাওয়ের চালের দাম স্থিতিশীল আছে।

রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও, গোড়ান, নন্দিপাড়া, বাসাবো, মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতি ঈদেই চাহিদা বাড়ার কারণে মুরগি ও গরুর মাংসের দামে কিছুটা বাড়ে। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মুরগি ও মাংসের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে। ঈদে প্রতিটি পরিবার পোলাও, রোস্ট, বিরিয়ানির জন্য মুরগি ও গরুর মাংস কেনেন। তাই, চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়েছে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। একইভাবে পাকিস্তানি মুরগি কেজিপ্রতি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এ মুরগি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায়। দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। 

কয়েকদিন আগেও ৭৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কিনেছেন ক্রেতারা। আজ ৮০০ টাকার নিচে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে না। তবে, কিছু কিছু এলাকায় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে, সেই মাংসের সঙ্গে অতিরিক্ত চর্বি ও হাড় যুক্ত করে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫০ টাকা বেড়ে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে।

অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের ঈদে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। গতবার ঈদের আগে চিনি কিনতে হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। সয়াবিন তেলও সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে—প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা। ভালো মানের সুগন্ধি চাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের ঈদের সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা কম দামে মিলছে সুগন্ধি চাল। 

প্যাকেট সেমাই বিক্রি হচ্ছে গায়ে লেখা দামেই। খোলা মোটা সেমাই প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, খোলা চিকন সেমাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের দাম এখনো কম। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। রসুন কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি রসুন কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। তবে, অস্বাভাবিক দর এলাচের। কয়েক মাস ধরেই এলাচের দাম বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা মানভেদে কেজিপ্রতি এলাচ বিক্রি করছেন ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা দরে। প্রতি কেজি জিরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং দারুচিনি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নন্দিপাড়া বাজারে হাসান গোস্ত বিতানের স্বত্বাধিকারী মো.

হাসান বলেছেন, ঈদকে সামনে রেখে মাংস কেনায় বাড়তি চাপ আছে। ক্রেতারা আজ খুব সকাল থেকেই মাংস কেনার জন্য দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। চাহিদা বাড়ায় মাংসের দাম একটু বাড়তি। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। ঈদের কারণে এখন ২০ টাকা বাড়িয়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

একই বাজারের মেসার্স হিমাদ্রী স্টোরের কর্মচারী ইমরান হোসেন বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে পোলাওয়ের চাল, সেমাই, চিনি ও মসলা সামগ্রী বিক্রি বেশি হচ্ছে। দু’-একটি পণ্য ছাড়াই অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম তেমন বাড়েনি।  

গোরান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ২২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দক্ষিণ গোরানে ইব্রাহিম গোস্ত দোকানে মাংস কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মীর আবু বক্কর অমি বলেন, আজকে মাংসের দোকানগুলোতে খুব চাপ। ক্রেতাদের ভিড় অনেক বেশি। ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকে গরুর মাংস কিনলাম। এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকায় কিনেছি। অন্যান্য দোকানের চেয়ে এখানে দাম একটু কম। তবে, চর্বি ও হাড়ের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন য ন য ম রগ র ২০ ট ক ২০ থ ক র ম রগ

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ