প্রবাসে কেটে যায় ঈদ, থেকে যায় স্মৃতি
Published: 1st, April 2025 GMT
টানা ১১তম ঈদ পালন করলাম প্রবাসে। ২০১৫ সাল থেকে কখনো দেশে ঈদ পালন করা হয়নি আমার। তবে এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই, নেই কোনো অভিযোগ। আমি বরাবরই অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা হতে পছন্দ করি।
ঈদ আসলে দেড় কোটি প্রবাসীর আকুতি শুনতে পাই। তবে, আমি কখনো আকুতি জানাইনি। কখনো কাউকে বলা হয়নি, ঈদে আমার খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। ঈদ আসলে অন্যরা কষ্ট পেলেও আমি আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করি। অন্যরা কষ্ট পায়, কারণ ঈদটাকে তারা উপলব্ধি করে, যখন তারা তাদের মনের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে না! যেমন তাদের ইচ্ছে করে, পরিবারের সাথে ঘুরবে, বউ-বাচ্চা, মা-বাবার মুখ দেখবে; যখন সেটি করতে পারে না, তখনই তারা কষ্ট পায়।
আর যার কোনো আকাঙ্ক্ষাই থাকে না, তার তো কষ্ট পাওয়ারও কিছু থাকে না। আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। ঈদ এলে আমার আলাদা কোনো অনুভূতি কাজ করে না। ফলে, আমি কষ্ট না পেয়ে আনন্দ খুঁজি।
যে বছর প্রথম প্রবাসে ঈদ পালন করেছি, সে বছর বরাবরের মতোই বাংলাদেশের আমেজ উপলব্ধি করতাম। যখন দেখলাম, ঈদের দিনেও কাজ থেকে ছুটি পাইনি, ঈদের জন্য কোনো নতুন জামা কিনতে পারিনি, সেদিনই প্রবাস জীবন কী, তা আর বুঝতে বাকি রইল না। ঈদের দিন ছুটি না পাওয়ার কারণ হলো—আমার প্রবাস জীবন শুরু হয়েছে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে। সাইপ্রাস খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের দেশ হওয়ায় সে দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় কোনো উৎসবে সরকারিভাবে বন্ধ দেওয়া হয় না। আমি জানতাম না, এ দেশে এরকম সিস্টেম। আমি তখন গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করতাম সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ার ফ্যাক্টরি এরিয়াতে। আমার দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে।
ভেবেছিলাম, মালিকের কাছ থেকে ঈদের দিন ছুটি চেয়ে নেব। কিন্তু, ঈদের দুই দিন আগ থেকে কাজের এতটাই চাপ ছিল যে, তার কাছে যে ছুটি চাইব, সে পরিস্থিতি ছিল না। রাতে পরিকল্পনা করি, ঈদের নামাজ আর পড়ব না। কারণ, আমি যেখানে কাজ করি, ওখান থেকে মসজিদ প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু, কয়েকজন বন্ধুর অনুরোধে ভোরে উঠে পুরাতন জামা পরে বাসে করে চলে গেলাম রাজধানী নিকোশিয়ায় নামাজ পড়তে। কিন্তু, নামাজ শেষ করে কিছুতেই আর কাজে ফিরতে ইচ্ছে করছে না। বন্ধুরা ডেকে নিয়ে গেল বাসায়। তারা রান্না করছে, আমাকে না খেয়ে আসতে দিচ্ছিল না। কিন্তু, যখন সকাল ৯টা বাজে, মালিকের ফোনের পর ফোনে বিরক্ত হয়ে খাবার না খেয়েই চলে আসতে হয়েছে কাজে। রাগ করে আর বাড়িতেও কাউকে ফোন দিয়ে বলিনি এ কষ্টের কথা। কিন্তু, তারা ধরে নিয়েছিল যে, আমি অনেক আনন্দ করছি বিদেশে।
পরের বছর থেকে আর কখনো এটা নিয়ে আক্ষেপ করিনি। আমার ছয় বছরের সাইপ্রাস প্রবাস জীবনে একবার ছুটি পেয়েছিলাম ঈদের দিন। কারণ, সেদিন ছিল রবিবার। সাইপ্রাসে রবিবারে সরকারি ছুটি। সাইপ্রাসে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশির একই অবস্থা—কারো মনে ঈদের আনন্দ নেই।
এরপর ২০২০ সালের শেষের দিকে চলে আসলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এখানে এসে বড় ভাইয়ের কন্সট্রাকশন ঠিকাদারি কোম্পানিতে জয়েন করলাম। এখানে এসে নতুন করে ঈদের অনুভূতি হতে লাগল। কারণ, এখানে এসেই ঈদের দিন মা, ভাই ও ভাইয়ের পরিবারকে পেয়েছিলাম। আমিরাতে প্রথম ঈদ ছিল অনেক আনন্দের। মনে হয়েছিল, আমি দেশেই ঈদ করছি। ঈদের সময়টা নিজের পরিবারের সাথে কাটাতে পারার মাঝে যে প্রশান্তি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আমার কাছে ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের মাঝে অনেক তফাৎ মনে হয়। ইউরোপ প্রবাসীরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। ইউরোপ প্রবাসীরা চাইলেও দেশে যেতে পারে না, যেটা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা পারে।
কত মানুষ দেশে ঈদের আগে স্বজন হারিয়ে ফেলে, কত অসহায় মানুষ দেশে ঈদ করতে পারে না। কত মানুষ পরিবার থেকে দূরে কাজ করার কারণে ঈদে বাড়ি যেতে পারে না। কিন্তু, আমরা কি কখনো তাদের কথা ভেবেছি? তারা হয়ত প্রবাসী নয়, কিন্তু তারাও তো আমাদের মতো কষ্টের ভাগিদার। শুধু প্রবাসীদেরকেই সহানুভূতির চোখে তাকাতে হবে, তা আমি একজন প্রবাসী হয়েও সমর্থন করি না। বরং আমরা সেসব মানুষের চেয়ে ভালো আছি। অন্তত আমাদের আত্মতৃপ্তি পাবার মতো একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করি, তাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। আসলে পৃথিবীটা কারো জন্যই পুষ্পশয্যা নয়।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স র ঈদ র দ ন ক জ কর পর ব র ইউর প আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর-আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় মারধরে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম জাহাঙ্গীর আলম (৫২)। আড়াই মাস ধরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় একটি মসজিদের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। গত ৭ এপ্রিল তাঁর ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা এবং তাঁকে মারধর করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন সাব্বির হোসেন (২১) ও রহিম উদ্দিন (৩০)। তাঁরা দুজনই উদমারা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের দুজনকে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের আদেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করতেন কিশোর গ্যাংয়ের কিছু সদস্য। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীর আলম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা চালানো হয়।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আড়াই মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।