মুসলিম ও বিরোধীদের আপত্তির মুখে সংসদে ওয়াক্ফ বিল পেশ করল বিজেপি সরকার
Published: 2nd, April 2025 GMT
শরিকদের সমর্থন নিশ্চিত করেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার আজ বুধবার লোকসভায় পেশ করল ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিলটি পেশ করে বলেন, দেশ ও পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই সরকার সংশোধিত ওয়াক্ফ বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিরোধীরা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছে। কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরকারপক্ষ জয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর বিলটি পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। লোকসভায় বিল নিয়ে বিতর্কের জন্য মোট ৮ ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার চায় আজ বুধবারেই লোকসভায় বিলটি পাস করিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পেশ করতে। আগামী শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন।
ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলো সেই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, যা আল্লাহর নামে নিবেদিত। পুরোনো আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ ঘোষণার একমাত্র অধিকারী ছিল ওয়াকফ বোর্ড। নতুন বিলে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে জেলা শাসক বা সমপদমর্যাদার কোনো সরকারি আধিকারিককে। নতুন বিলে অমুসলিমদেরও ওয়াক্ফ বোর্ডের সদস্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে মুসলিম নারীদের সদস্য করার ক্ষেত্রেও।
এ ছাড়া ওয়াক্ফ বোর্ডে সুন্নি মুসলিমদের পাশাপাশি শিয়া, বোহরা, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের সব ওয়াক্ফ সম্পত্তি পোর্টালের মাধ্যমে নথিভুক্ত করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতে ওয়াক্ফ আইন প্রথম পাস করা হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৯৫ সালে সেই আইন সংশোধন করে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। সেই থেকে বিজেপির অভিযোগ, ওয়াক্ফের বিপুল সম্পত্তি ভোগ করছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মুসলিমরা।
আজ বুধবার বিল পেশ করে কিরেন রিজিজু বলেন, দেশের ওয়াক্ফ সম্পত্তির সংখ্যা ৪ লাখ ৯০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার। এই সম্পত্তি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে মুসলিমদের জীবনের উন্নতিই শুধু ঘটবে না, দেশের ছবিও বদলে যাবে।
বিরোধীদের অভিযোগ, প্রচলিত আইন সংশোধন করে বিজেপি মুসলিমদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। ওয়াক্ফ বোর্ডে সরকারের ভূমিকাকে বড় করে তুলতে চাইছে। সংস্কারের নামে ওয়াক্ফ সম্পত্তি পরিচালনার ভার হাতে নিতে চাইছে। অন্য কোনো ধর্মীয় বিষয়ে ভিন্নধর্মীদের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিরোধী মহলের দাবি, সরকারের এই বিল সংবিধানের পরিপন্থী।
বিরোধীদের দাবি অগ্রাহ্য করে গত ৮ আগস্ট ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল লোকসভায় পেস করা হয়েছিল। তারপরেই তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় দুই কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি)। ৩১ সদস্য নিয়ে গঠিত সেই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির সংসদ সদস্য জগদম্বিকা পাল। কমিটিতে বিরোধীরা মোট ৪৪টি সংশোধনী জমা দিয়েছিলেন। সরকারপক্ষ থেকে জমা পড়েছিল ২৩টি সংশোধনী। জেপিসি সরকারপক্ষে পড়া ২৩ সংশোধনীর মধ্যে ১৪টি গ্রহণ করেছে। বিরোধীদের একটি সংশোধনীও গ্রাহ্য হয়নি।
বিলটি পেশ করার আগে বিজেপি নেতৃত্ব তিন রাজনৈতিক দল নিয়ে কিছুটা সংশয়ী ছিল। অন্ধ্র প্রদেশের শাসক দল টিডিপি, বিহারে তাদের শরিক জেডিইউ ও ওই রাজ্যের অন্য দল চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি। কিন্তু বিজেপি নেতারা তিন দলের সমর্থনই নিশ্চিত করেছেন। এমনকি অন্ধ্র প্রদেশে টিডিপি ও বিজেপির শরিক উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণের দল জনসেনা পার্টিও বিলটি সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন। বিজেপির শরিকদের দাবি, সরকার তাঁদের সংশোধনীগুলো মেনে নিয়েছে। ফলে বিলটি তাঁরা সমর্থন করবেন।
লোকসভায় বিলটি পাস করাতে শাসকগোষ্ঠীর দরকার ২৭২ জনের সমর্থন। বিজেপির নিজের রয়েছে ২৪০ সদস্য। চার শরিক জেডিইউর আছে ১২, টিডিপির ১৬, চিরাগ পানোয়ানের এলজেপির ৫ ও শিবসেনার (শিন্ডে) ৭ সদস্য। সবার সম্মতি পেলে বিলটি অনায়াসে পাস হবে। রাজ্যসভায় ছয়টি আসন খালি রয়েছে। এনডিএর মোট শক্তি ১২৫। ২৫০ সদস্যের এই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার ১১৮ জনের সমর্থন। রাষ্ট্রপতি মনোনীত ৬ সদস্যও বিজেপির দিকে। এই কক্ষেও বিল সংকটে পড়বে না।
অন্ধ্র প্রদেশ নিয়ে বিজেপি ও টিডিপির চিন্তা কম। কারণ, ওই রাজ্যে চার বছর কোনো ভোট নেই। চিন্তা যতটুকু তা বিহারকেন্দ্রিক। এই বছরের শেষে বিহার বিধানসভার ভোট। মুসলিমরা বিরূপ হলে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারকে বিপদে পড়তে হতে পারে। কিন্তু বিজেপি সেই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।
বিরোধীরা সবাই এই বিলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ। অধিবেশন বানচাল না করে তাঁরা বিতর্কে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে দেশের মানুষের কাছে তাঁদের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম সমাজ হাতে কালো ব্যাজ বেঁধে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন। মুসলমান পার্সোনাল ল বোর্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন জানিয়েছে, এই বিল অসাংবিধানিক। কারণ, তা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার হরণ করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল কসভ য় র সদস য প শ কর প রস ত এই ব ল প স কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’