ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি ইটভাটায় ‘জিম্মি’ থাকা ২০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার সন্ধ্যায় চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম ডাংরি এলাকায় এসআরবি ব্রিকস নামের ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হচ্ছেন উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের বিল্লাল হোসেন (৪০) এবং মুশুল্লী ইউনিয়নের মুশুল্লী গ্রামের মো.

জাকারিয়া (৫০)। তাঁরা নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন উদ্ধার হওয়া শ্রমিকেরা।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, ইটভাটাটির মালিক বারুইগ্রামের রুহুল আমিন। ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। শ্রমিকদের জিম্মি করে ভাটায় কাজ করানোসহ ঠিকমতো মজুরি দেওয়া হতো না। শ্রমিকেরা ন্যায্য পাওনা চাইলে খারাপ আচরণসহ মারধর করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা ইটভাটার শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাঁদের জিম্মি করে রাখা হতো। কিশোরগঞ্জ থেকে ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে আসা একটি দল বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানায়। পরে বুধবার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মো. মনিরুজ্জামান, নান্দাইল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনসহ যৌথ বাহিনী ইটভাটায় অভিযান চালায়। এ সময় ২০ শ্রমিককে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়।

শ্রমিকের সরদার মো. মেহেদী হাসান দাবি করেন, ইটভাটার মালিক ও তাঁর সহকারীরা শ্রমিকদের জিম্মি করে কাজ করাতেন। ঠিকমতো মজুরি দিতেন না। মারধরও করা হতো। পরে সেনাবাহিনীকে জানালে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।

নান্দাইল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ইটভাটায় একটি ঠিকাদারি গ্রুপ শ্রমিক সরবরাহ করেছিল। ঠিকাদারি গ্রুপ টাকা নিলেও শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করছিল না। শ্রমিকদের আটকে রেখে কাজ করানো হতো। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জের ২০ শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। দুজনকে আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা শেষে বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইটভ ট য় ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ