যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের খারাপ খবর, তবে সুযোগ সম্ভাবনাও আছে
Published: 3rd, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এত দিন এই শুল্কের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্পের সর্বশেষ উদ্যোগ হলো বিশ্বের ৬০টি দেশের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ব্যবসায়িক অংশীদার রাষ্ট্রও; ছোটখাটো দেশও রয়েছে অনেক।
অন্তত ১২টি দেশের ওপর শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ‘রেসিপ্রোকাল অ্যাকশন’ বা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যে শুল্ক নেয় তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এই ‘প্রতিক্রিয়া শুল্কের’ বাইরে যেসব দেশ রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে যে বাণিজ্যঘাটতি প্রতিবছর বাড়ছে, তার জন্যই বিভিন্ন হারে শুল্ক প্রয়োগ করা হয়েছে। বাণিজ্যঘাটতি হলো দুটি দেশের মধ্যে আমদানি–রপ্তানির বৈষম্য।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ আসে সেখান থেকে। তাদের ওপর নতুন শুল্ক ৩৪ শতাংশ; যদিও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি বিরাট, প্রায় ২৯২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আরেক বড় অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের ঘাটতি ২৪১ বিলিয়ন ডলার। তাদের ওপর নতুন শুল্ক মাত্র ২০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির ৩২ শতাংশ চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসে। ট্রাম্প এই দুই দেশের শুল্ক তুলনামূলক কম রেখে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় রাখতে চাইছেন।
কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। তাই বলে তারা রেহাই পেয়ে যাবে না। তাদের ওপর এরই মধ্যেই ট্রাম্প ৩০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন, তা নিয়ে সরকারগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। বন্ধু-অবন্ধু সব দেশের ওপরই ট্রাম্প শুল্ক বসিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনার চেয়েও অর্থনৈতিক বিবেচনা ও হিসাব-নিকাশকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এই শুল্ক নির্ধারণে। নতুন তালিকা অনুযায়ী ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ এবং ইসরায়েলের ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির এক বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি প্রায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি হলো ৬ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশে ওপর দেশের শুল্ক বসানো হয়েছে ৩৭ শতাংশ।
ভারতের পণ্যে আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ যেহেতু ২৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম, তাই ভারত সুবিধা পেতে পারে। তবে এর মধ্যে আবার কোটা ও প্রাধান্য—এসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারতের তৈরি পোশাক আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের কাছে খুব জনপ্রিয় নয়। অন্য যেসব দেশ পোশাক রপ্তানি করে থাকে—কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান—তাদের ওপর শুল্কও কম নয়, তাই তারাও খুব সুবিধা পাবে না।আরও একটা তথ্য দেখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ আসে ভিয়েতনাম থেকে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ছোট অংশীদার, মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। ভিয়েতনামের ওপর বড় শুল্ক বসানোর ফলে সেখান থেকে আমদানি করা কাপড়চোপড়ের দাম যুক্তরাষ্ট্রে বেশ বেড়ে যাবে। তাই তাদের কাপড়ের আমদানি কমে যাবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতিও কমবে।
বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনামের ১২ বিলিয়ন ডলার, ভারতের ৮ বিলিয়ন ডলার ও ইন্দোনেশিয়ার ৭ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ওপর বড় শুল্ক বসানো হয়েছে। চীন ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর আরোপর করা রপ্তানি শুল্কও প্রায় বাংলাদেশের সমান। তাই বাংলাদেশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধিতে এই তিন দেশ কোনো সুবিধা পাবে না।
ভারতের পণ্যে আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ যেহেতু ২৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম, তাই ভারত সুবিধা পেতে পারে। তবে এর মধ্যে আবার কোটা ও প্রাধান্য—এসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারতের তৈরি পোশাক আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের কাছে খুব জনপ্রিয় নয়। অন্য যেসব দেশ পোশাক রপ্তানি করে থাকে—কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান—তাদের ওপর শুল্কও কম নয়, তাই তারাও খুব সুবিধা পাবে না।
অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ অবশ্যই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য খুব খারাপ খবর। তবে অন্য দেশগুলোও যেহেতু খুব সুবিধা পাচ্ছে না, তাই এই বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য ধ্বংসাত্মক বা বিপর্যয় ডেকে আনবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রথম দিকের ধাক্কা সামলে নিতে পারলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকবাজারে স্থিতিশীল উপস্থিতি ধরে রাখতে পারবে।
যাঁরা ট্রাম্পকে জানেন, তাঁরা বলবেন, ট্রাম্পের এই লিস্ট চূড়ান্ত নয়। ট্রাম্প ঝানু ব্যবসায়ী, দর-কষাকষিই তাঁর কর্মপদ্ধতির মূলমন্ত্র। এই বিশ্ববাণিজ্যের যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় দর–কষাকষি করে এর পরিবর্তন আনবে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প শুল্ক কমাতে রাজনৈতিক সুবিধা চাইবেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়াতেও চেষ্টা করবেন।
গত ২৮ মার্চের খবর; যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই দর-কষাকষিতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হয়তো এই খারাপ খবরের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনাও থাকতে পারে। আবার হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কাও একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর শ ল ক শ ল ক আর প ত দ র ওপর দ শ র ওপর র পর ম ণ আমদ ন র সব দ শ র জন য দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে বেঁধে ডাকাতি
বগুড়ায় বৃদ্ধাকে খুন করে ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার
ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, “রাত ১টার দিকে একটি শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। সে সময় বিষয়টি সেভাবে আমলে নেইনি। রাত ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে বসলে জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা প্রথমে আমাকে, পরে আমার ছেলে সাবিদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তারা আমাদের বিল্ডিংয়ের চারটি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে একের পর এক লুট করতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই ডাকাতি।”
তিনি বলেন, “ডাকতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৯টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে যায়।”
প্রত্যক্ষদর্শী সাবিদ বলেন, “জানালার গ্রিল কেটে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দুইজন। পরে ডাকাত দলের আরো ২২-২৩ জন সদস্য বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে আরো কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্যের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে জিম্মি করে আমাকে দিয়েই অন্যান্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলান। আমার চোখের সামনে একের পর এক রুমে ডাকাতি হয়।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তাদের পাঠানো প্রায় ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তারা আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানত। কোন রুমে কী আছে, আমরা কবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি এমনকি বাসায় ওয়াইফাই বন্ধ সবই জানত। আমার ধারণা, স্থানীয় লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।”
ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী লাক মিয়া বলেন, “আমরা ভোর ৫টার দিকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারি। পরবর্তীতে বাইরে থেকে লক করা রুম খুলে আমরা আটকে থাকা পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করি। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়।”
রবিবার (৩ নভেম্বর) গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে দিকে আমি ৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।”
ঢাকা/রতন/মাসুদ