জোট শরিকদের সহায়তায় লোকসভার মতো রাজ্যসভায়ও পাস হতে চলেছে ওয়াক্‌ফ বিল। কিন্তু তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে সুপ্রিম কোর্টে। আজ বৃহস্পতিবারই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়ে দিয়েছেন, বিলটি আইন হলে সেটার বিরুদ্ধে তাঁর দল ডিএমকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে।

গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ বিল লোকসভায় পাস হয়। বিলের পক্ষে পড়ে ২৮৮ ভোট, বিপক্ষে ২৩২টি। আজ বৃহস্পতিবার বিলটি পেশ হচ্ছে রাজ্যসভায়। সেখানেও রয়েছে সরকারপক্ষের গরিষ্ঠতা।

বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, এই বিল দেশের সংবিধানবিরোধী। এর মধ্য দিয়ে সরকার মুসলমানদের ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ করছে।

তা ছাড়া বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল পাস হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর তীব্র আঘাত। কারণ, ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হলো জমি–বাড়িসংক্রান্ত। সংবিধান অনুযায়ী, তা রাজ্য তালিকাভুক্ত। এই বিল পাস করিয়ে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায়।

জোর করে হিন্দি চাপানো ও লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের বিরোধিতা করে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ু সরকার ইতিমধ্যেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। সেই কেন্দ্রবিরোধী অভিযানে বাড়তি হাতিয়ার হতে চলেছে ওয়াক্‌ফ বিল।

লোকসভায় ওই বিল পাস করানোর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ু রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে ডিএমকে সদস্যরা হাতে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন সেখানেই আদালতে যাওয়ার কথা বলেন।

শুধু ডিএমকেই নয়, অন্য বিরোধী দল এবং সংগঠনও এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।

গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছত্রখান হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও ‘ইন্ডিয়া’র ফল ছিল হতাশাজনক। হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিজেপির অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব ঘিরে উঠে গিয়েছিল বড় প্রশ্ন। আশ্চর্যজনকভাবে ওয়াক্‌ফ বিল নতুন করে বিরোধীদের একজোট করেছে।

বিলের বিরোধিতায় সব বিরোধী দল শুধু জোটবদ্ধ হয়েই ভোট দেয়নি, ‘ইন্ডিয়া’য় না থাকা দলগুলোও বিলের বিরোধিতা করেছে। যেমন ওড়িশার বিজু জনতা দল (বিজেডি) বা তেলেঙ্গানার সাবেক শাসক দল বিআরএস। যে তৃণমূল কংগ্রেস বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই দলও এবার দৃঢ়ভাবে ওয়াক্‌ফ বিলে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংসদীয় দলের বৈঠকে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, দেশকে বিজেপি ক্রমেই এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড় করাচ্ছে। বারবার তারা সংবিধানের অমর্যাদা করছে। আলোচনার নামে বুলডোজার চালাচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত কায়েম করতে। ওইভাবে তারা গতকাল বুধবার লোকসভায় ওয়াক্‌ফ বিল পাস করিয়েছে। রাজ্যসভায়ও তা করাতে চলেছে।

সোনিয়া গান্ধী বলেন, এটা সংবিধানের ওপর খোলাখুলি আক্রমণ। বিজেপি চায় দেশ ও সমাজকে পাকাপাকিভাবে বিভক্ত রাখতে।

লোকসভার মতো রাজ্যসভায়ও শরিকি সাহায্যে বিলটি উতরে যাবে। রাজ্যসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর পক্ষে রয়েছে ১২৫ জনের সমর্থন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যরাও রয়েছেন। তুলনায় বিরোধী শিবিরে রয়েছে ৮৮ সদস্য। বিরোধীরা ভেবেছিল, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি ও বিহারের দুই শরিক জেডিইউ ও এলজেপি মুসলিম সমর্থন হারানোর ভয়ে ওয়াক্‌ফ বিল সমর্থন করবে না। হয় ভোটদানে বিরত থাকবে, নয়তো ওয়াক আউট করবে। কিন্তু তা হয়নি। তিন দলই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিরোধীদের একমাত্র ভরসার জায়গা সুপ্রিম কোর্ট। ডিএমকে যেমন তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। ওয়াক্‌ফ বিল পাস হলে তা ‘কালা আইন’ হবে জানিয়ে তারা বলেছে, আদালতেই এর মোকাবিলা হবে। তার আগে শুরু হবে দেশব্যাপী আন্দোলন।

ওয়াক্‌ফকে কেন্দ্র করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কি ফের প্রাণের স্পন্দন দেখা যাচ্ছে? বিরোধী মহল আশান্বিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন ড য় এই ব ল সরক র ড এমক ল কসভ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় মুক্তি পাচ্ছে ‘দেলুপি’

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের নদী ভাঙনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে ‘দেলুপি’ সিনেমা। আগামী ৭ নভেম্বর খুলনায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে এটি। এদিন নগরীর খালিশপুরের লিবার্টি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে সিনেমাটি। ১৪ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেছেন মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। 

এর আগে ৫ নভেম্বর, সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো প্রদর্শিত হবে বেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। এখানে সিনেমাটির দৃশ্যধারনের কাজ হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। 

তার প্রথম সিনেমা ‘দেলুপি’। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটিতে এর শুটিং হওয়ায় এবং এর অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা খুলনা অঞ্চলের হওয়ায় আগামী ৭ নভেম্বর সিনেমাটি খুলনায় মুক্তি পাবে। ঢাকাসহ সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে ১৪ নভেম্বর থেকে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটির প্রচার শুরু হয়েছে। সিনেমার ট্রেইলার, টিজার, গানও প্রচারিত হচ্ছে। সিনেমাটিতে রাজনীতি, ভালোবাসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাত্রাশিল্পীদের সংগ্রামের গল্প বলেছেন বলে জানান পরিচালক মোহাম্মদ তাওকীর।

খুলনায় নানাভাবে সিনেমাটির প্রচারের পরিকল্পনা করেছেন পরিচালক মোহাম্মদ তাওকীর। তার ভাষায়, “আরো বেশ কিছুদিন খুলনায় সিনেমাটির প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সারা শহরে চিকা মারা, পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৫ নভেম্বর প্রিমিয়ার, লিবার্টি সিনেমা হল সাজিয়ে দর্শকদের জন্য প্রস্তুত করা, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে প্রচার ছাড়াও নানা ধরণের কর্মসূচি। একই সঙ্গে খুলনার ৪টি উপজেলায় স্পেশাল শোয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ৯ নভেম্বর বটিয়াঘাটা উপজেলা এবং ১০ নভেম্বর দাকোপ উপজেলা, ১১ নভেম্ব পাইকগাছা উপজেলা ও ১২ নভেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে প্রদর্শিত হবে।”

‘দেলুপি’ সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা খুলনার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন চিরনজিৎ বিশ্বাস, অদিতি রায়, রুদ্র রায়, মো জাকির হোসেনসহ অনেকে।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ