ওয়াক্ফ বিল ঘিরে কি আবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বিজেপিবিরোধী শক্তি
Published: 3rd, April 2025 GMT
জোট শরিকদের সহায়তায় লোকসভার মতো রাজ্যসভায়ও পাস হতে চলেছে ওয়াক্ফ বিল। কিন্তু তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে সুপ্রিম কোর্টে। আজ বৃহস্পতিবারই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়ে দিয়েছেন, বিলটি আইন হলে সেটার বিরুদ্ধে তাঁর দল ডিএমকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে।
গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল লোকসভায় পাস হয়। বিলের পক্ষে পড়ে ২৮৮ ভোট, বিপক্ষে ২৩২টি। আজ বৃহস্পতিবার বিলটি পেশ হচ্ছে রাজ্যসভায়। সেখানেও রয়েছে সরকারপক্ষের গরিষ্ঠতা।
বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, এই বিল দেশের সংবিধানবিরোধী। এর মধ্য দিয়ে সরকার মুসলমানদের ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ করছে।
তা ছাড়া বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল পাস হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর তীব্র আঘাত। কারণ, ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলো জমি–বাড়িসংক্রান্ত। সংবিধান অনুযায়ী, তা রাজ্য তালিকাভুক্ত। এই বিল পাস করিয়ে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায়।
জোর করে হিন্দি চাপানো ও লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের বিরোধিতা করে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ু সরকার ইতিমধ্যেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। সেই কেন্দ্রবিরোধী অভিযানে বাড়তি হাতিয়ার হতে চলেছে ওয়াক্ফ বিল।
লোকসভায় ওই বিল পাস করানোর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ু রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে ডিএমকে সদস্যরা হাতে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন সেখানেই আদালতে যাওয়ার কথা বলেন।
শুধু ডিএমকেই নয়, অন্য বিরোধী দল এবং সংগঠনও এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।
গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছত্রখান হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও ‘ইন্ডিয়া’র ফল ছিল হতাশাজনক। হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিজেপির অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব ঘিরে উঠে গিয়েছিল বড় প্রশ্ন। আশ্চর্যজনকভাবে ওয়াক্ফ বিল নতুন করে বিরোধীদের একজোট করেছে।
বিলের বিরোধিতায় সব বিরোধী দল শুধু জোটবদ্ধ হয়েই ভোট দেয়নি, ‘ইন্ডিয়া’য় না থাকা দলগুলোও বিলের বিরোধিতা করেছে। যেমন ওড়িশার বিজু জনতা দল (বিজেডি) বা তেলেঙ্গানার সাবেক শাসক দল বিআরএস। যে তৃণমূল কংগ্রেস বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই দলও এবার দৃঢ়ভাবে ওয়াক্ফ বিলে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংসদীয় দলের বৈঠকে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, দেশকে বিজেপি ক্রমেই এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড় করাচ্ছে। বারবার তারা সংবিধানের অমর্যাদা করছে। আলোচনার নামে বুলডোজার চালাচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত কায়েম করতে। ওইভাবে তারা গতকাল বুধবার লোকসভায় ওয়াক্ফ বিল পাস করিয়েছে। রাজ্যসভায়ও তা করাতে চলেছে।
সোনিয়া গান্ধী বলেন, এটা সংবিধানের ওপর খোলাখুলি আক্রমণ। বিজেপি চায় দেশ ও সমাজকে পাকাপাকিভাবে বিভক্ত রাখতে।
লোকসভার মতো রাজ্যসভায়ও শরিকি সাহায্যে বিলটি উতরে যাবে। রাজ্যসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর পক্ষে রয়েছে ১২৫ জনের সমর্থন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যরাও রয়েছেন। তুলনায় বিরোধী শিবিরে রয়েছে ৮৮ সদস্য। বিরোধীরা ভেবেছিল, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি ও বিহারের দুই শরিক জেডিইউ ও এলজেপি মুসলিম সমর্থন হারানোর ভয়ে ওয়াক্ফ বিল সমর্থন করবে না। হয় ভোটদানে বিরত থাকবে, নয়তো ওয়াক আউট করবে। কিন্তু তা হয়নি। তিন দলই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বিরোধীদের একমাত্র ভরসার জায়গা সুপ্রিম কোর্ট। ডিএমকে যেমন তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। ওয়াক্ফ বিল পাস হলে তা ‘কালা আইন’ হবে জানিয়ে তারা বলেছে, আদালতেই এর মোকাবিলা হবে। তার আগে শুরু হবে দেশব্যাপী আন্দোলন।
ওয়াক্ফকে কেন্দ্র করে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কি ফের প্রাণের স্পন্দন দেখা যাচ্ছে? বিরোধী মহল আশান্বিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড য় এই ব ল সরক র ড এমক ল কসভ
এছাড়াও পড়ুন:
কালিয়াকৈরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রবিবার (১৫ জুন) সকালে উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত ১৪ জুন কালিয়াকৈর উপজেলা, পৌরসভাসহ জেলার আটটি ইউনিটের কমিটি বাতিল করে গাজীপুর জেলা বিএনপি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। পরে শনিবার (১৪) সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সিকদার, সদস্য সচিব করা হয়েছে এম আনোয়ার হোসেনকে। কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মামুদ সরকার ও সদস্য সচিব করা হয়েছে মহসিন উজ্জামানকে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ গ্রুপ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন । আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে শনিবার (১৪ জুন) রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পারভেজ গ্রুপের কর্মীরা।
একই দাবিতে রবিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পারভেজ আহমেদের পক্ষ নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময়ে নতুন কমিটির পক্ষ থেকে আরেকটি মিছিল বের হলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়।
পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সকাল থেকে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হলেও এখনো পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল