যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে
Published: 3rd, April 2025 GMT
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ এবং তার রপ্তানিতে প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশসহ অনেক দেশে রেসিপ্রোকাল বা পাল্টা ট্যারিফ আরোপ করেছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের মতো তৈরি পোশাক। বর্তমানে আমাদের পোশাক পণ্যের ওপর তাদের শুল্কহার ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। আমি যতদুর জেনেছি, এর ওপর ৩৭ শতাংশ যোগ হবে। এর মানে অন্তত: ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। সুতরাং ব্যবসায় প্রভাব পড়বেই। শুধু বাংলাদেশের নয়, প্রতিটি প্রতিযোগী দেশ এবং বিশ্বের প্রায় ৬০টি সম্ভাবনাময় দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তাদের পণ্যের ওপর বাংলাদেশ গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর পাল্টা হিসেবে তারা ৩৭ শতাংশ করেছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তারা একই নীতি অনুসরণ করেছে।
তৈরি পোশাকের কথা যদি বলি, আমাদের প্রতিযোগিতা হচ্ছে মূলত চীন, ভিয়েতনাম বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে। চীনে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ এবং ভারতে ২০ শতাংশ। তার মানে সবারই কিন্তু বেড়েছে। সুতরাং প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রত্যেকেরই খরচ বেড়ে যাবে। এই ট্যারিফ ঘোষণায় আসলে বিশ্বব্যাপি সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়বে। এতে আমরা সবাই অবশ্যই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যে ধারণা থেকে এটা করা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প পুনরুদ্ধার করা হবে। আমার মনে হয় না, এটা সহসা হবে। কারণ একটা শিল্প ডেভেলপ করা রাতারাতি সম্ভব নয়। এর পেছনে শ্রমের খরচসহ অনেক ফ্যাক্টর আছে। ফলে দেশটির মানুষের খরচ বেড়ে যাবে। এই খরচ যদি বেড়ে যায়, তাহলে তাদের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে না। সমগ্র বিশ্ব একটা ধুম্রজালের মাঝে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, অন্য দেশগুলো ওদের এখানে গিয়ে বিনিয়োগ করুক, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি হোক। আশেপাশের দেশ যেমন হন্ডুরাস রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। হন্ডুরাসসহ যে দেশগুলোর ট্যারিফ কম (১০ শতাংশ), তাদের রপ্তানি হয়তো বাড়তে পারে। যেহেতু আমেরিকা থেকে কাছে, সুতরাং তাদের সুবিধা পাওয়ার একটা সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ সরকারকে এখন এটা নিয়ে কাজ করতে হবে, কারণ আমাদের মূল রপ্তানি পণ্য হচ্ছে গার্মেন্টস। যুক্তরাষ্ট্রের ৯ শতাংশ গার্মেন্টস আমাদের এখান থেকে যায়। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আমাদের যে ট্যারিফ আছে, তা কমানোর ব্যবস্থা করে ন্যুনতম পর্যায়ে আনতে হবে। রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগী যেসব দেশ আছে, তাদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে আমাদের ট্যারিফ যেন না বেড়ে যায়।
কোভিডের পর থেকে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত। সবকিছু অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলছিলাম আমেরিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, আমাদের বিক্রি বাড়ছে ওখানে। সেই সময়ে এরকম একটা হটকারী সিদ্ধান্ত ‘ট্যারিফ ওয়ার’ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিল। এটার প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হবে না, পুরো বিশ্বেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তো অবশ্যই হবে। আমাদের জন্য সতর্কতামূলক ব্যাপার হচ্ছে যে, আমরা অতিমাত্রায় কিছু দেশের ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রায়ই বলি যে, আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আমাদের নতুন মার্কেটে যেতে হবে। এর প্রয়োজনীয়তা কিন্তু আবার জোরেশোরে উপলব্ধি হবে। আমাদের অন্যান্য দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে হবে। বিশ্বে তো আরও অনেক দেশ আছে, এই ভয় থেকে আমাদের বের হওয়ার জন্য বহুমুখীকরণে যেতে হবে।
আরেকটা জিনিস বলা দরকার, ক্রেতারা কিন্তু যেখানে সস্তা পাবে সেখানেই যাবে, কারণ এটা তাদের ব্যবসা। বাংলাদেশে এসেছে তারা সস্তা শ্রমের জন্য, সস্তায় পণ্য কিনতে। তারা সস্তা যেখানে পাবে সেখানেই যাবে। উদাহরণ হিসেবে কেনিয়া, হন্ডুরাস যাদের ট্যারিফ রেট কম, ক্রতারা সেখানেই যাবে। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আমাদের জরুরি কাজ করতে হবে। যেমন: ভারত এটা আগে থেকেই বুঝতে পেরে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ট্যারিফ রেট কমিয়ে এনেছিল। এখনও আমাদের সে সুযোগ আছে। এখন আমাদের ইউরোপ ও আমেরিকার দুই মার্কেটেই যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিজিএমইএ
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ আম দ র প র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত পলাতক
গাজীপুরের শ্রীপুরে অধিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে ওই নারী শ্রমিকের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
রবিবার (১৫ জুন) সকালে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের এমসি বাজার এলাকায় তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ।
ভুক্তভোগী নারী স্থানীয় একটি কারখানায় ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. লিটন (৩৫) তালহা স্পিনিং মিল সংলগ্ন বুথে দায়িত্ব পালন করতেন।
লিটন ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ডুবাইল গ্রামের মৃত আব্দুল আউয়ালের ছেলে। বর্তমানে তিনি মুলাইদ গ্রামের আতাব উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন এবং ফাস্ট সলিউশন লিমিটেড নামের একটি নিরাপত্তা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে চাকরি করতেন।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, এটিএম বুথে টাকা তোলার সূত্র ধরে এই নারী শ্রমিকের সঙ্গে পরিচয় হয় লিটনের। একপর্যায়ে লিটন ভুক্তভোগীকে ১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রবিবার সকালে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ডেকে আনেন। সকাল ৬টার দিকে বুথে গেলে লিটন তাকে ভেতরে একটি ছোট কক্ষে বসিয়ে রাখেন এবং জানান যে, নতুন চাকরির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে তার সাক্ষাৎকার নেবেন।
ভিকটিমের বাবা দুইবার মেয়ে চাকরির বিষয়ে খোঁজ নিলে লিটন জানান, চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। এরপর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে লিটন কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পথে মেয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়।
ঘটনার বিষয়ে ফাস্ট সলিউশন লিমিটেডের সুপারভাইজার মো. হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত লিটন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দ্রুতই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা/রফিক/টিপু