মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ এবং তার রপ্তানিতে প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশসহ অনেক দেশে রেসিপ্রোকাল বা পাল্টা  ট্যারিফ আরোপ করেছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের মতো তৈরি পোশাক। বর্তমানে আমাদের পোশাক পণ্যের ওপর তাদের শুল্কহার ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। আমি যতদুর জেনেছি, এর ওপর ৩৭ শতাংশ যোগ হবে। এর মানে অন্তত: ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। সুতরাং ব্যবসায় প্রভাব পড়বেই। শুধু বাংলাদেশের নয়, প্রতিটি প্রতিযোগী দেশ এবং বিশ্বের প্রায় ৬০টি সম্ভাবনাময় দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তাদের পণ্যের ওপর বাংলাদেশ গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর পাল্টা হিসেবে তারা ৩৭ শতাংশ করেছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তারা একই নীতি অনুসরণ করেছে।

তৈরি পোশাকের কথা যদি বলি, আমাদের প্রতিযোগিতা হচ্ছে মূলত চীন, ভিয়েতনাম বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে। চীনে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ এবং ভারতে ২৬ শতাংশ। তার মানে সবারই কিন্তু বেড়েছে। সুতরাং প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রত্যেকেরই খরচ বেড়ে যাবে। এই ট্যারিফ ঘোষণায় আসলে বিশ্বব্যাপি সাপ্লাই চেইনে প্রভাব পড়বে। এতে আমরা সবাই অবশ্যই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। যে ধারণা থেকে এটা করা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প পুনরুদ্ধার করা হবে। আমার মনে হয় না, এটা সহসা হবে। কারণ একটা শিল্প ডেভেলপ করা রাতারাতি সম্ভব নয়। এর পেছনে শ্রমের খরচসহ অনেক ফ্যাক্টর আছে। ফলে দেশটির মানুষের খরচ বেড়ে যাবে। এই খরচ যদি বেড়ে যায়, তাহলে তাদের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে না। সমগ্র বিশ্ব একটা ধুম্রজালের মাঝে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, অন্য দেশগুলো ওদের এখানে গিয়ে বিনিয়োগ করুক, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি হোক। আশেপাশের দেশ যেমন হন্ডুরাস রপ্তানি  করে যুক্তরাষ্ট্রে। হন্ডুরাসসহ যে দেশগুলোর ট্যারিফ কম (১০ শতাংশ), তাদের রপ্তানি হয়তো বাড়তে পারে। যেহেতু আমেরিকা থেকে কাছে, সুতরাং তাদের সুবিধা পাওয়ার একটা সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ সরকারকে এখন এটা নিয়ে কাজ করতে হবে, কারণ আমাদের মূল রপ্তানি পণ্য হচ্ছে গার্মেন্টস। যুক্তরাষ্ট্রের ৯ শতাংশ গার্মেন্টস আমাদের এখান থেকে যায়। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আমাদের যে ট্যারিফ আছে, তা  কমানোর ব্যবস্থা করে ন্যুনতম পর্যায়ে আনতে হবে। রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগী যেসব দেশ আছে, তাদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে আমাদের ট্যারিফ যেন না বেড়ে যায়।

কোভিডের পর থেকে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত। সবকিছু অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলছিলাম আমেরিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, আমাদের বিক্রি বাড়ছে ওখানে। সেই সময়ে এরকম একটা হটকারী সিদ্ধান্ত ‘ট্যারিফ ওয়ার’ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিল। এটার প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হবে না, পুরো বিশ্বেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তো অবশ্যই হবে। আমাদের জন্য সতর্কতামূলক ব্যাপার হচ্ছে যে, আমরা অতিমাত্রায় কিছু দেশের ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রায়ই বলি যে, আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আমাদের নতুন মার্কেটে যেতে হবে। এর প্রয়োজনীয়তা কিন্তু আবার জোরেশোরে উপলব্ধি হবে। আমাদের অন্যান্য দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে হবে। বিশ্বে তো আরও অনেক দেশ আছে, এই ভয় থেকে আমাদের বের হওয়ার জন্য বহুমুখীকরণে যেতে হবে।

আরেকটা জিনিস বলা দরকার, ক্রেতারা  কিন্তু যেখানে সস্তা পাবে সেখানেই যাবে, কারণ এটা তাদের ব্যবসা। বাংলাদেশে এসেছে তারা সস্তা শ্রমের জন্য, সস্তায় পণ্য কিনতে। তারা সস্তা যেখানে পাবে সেখানেই যাবে। উদাহরণ হিসেবে কেনিয়া, হন্ডুরাস যাদের ট্যারিফ রেট কম, ক্রতারা সেখানেই যাবে। এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আমাদের জরুরি কাজ করতে হবে। যেমন: ভারত এটা আগে থেকেই বুঝতে পেরে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর  ট্যারিফ রেট কমিয়ে এনেছিল। এখনও আমাদের সে সুযোগ আছে। এখন আমাদের ইউরোপ ও আমেরিকার দুই মার্কেটেই যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

লেখক: সাবেক পরিচালক, বিজিএমইএ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ শ ল ক আর প আম দ র প র জন য র নত ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান

লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।

তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ