ট্রাম্পের শুল্কারোপ ১০০ বছরে বিশ্ববাণিজ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন
Published: 3rd, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে উচ্চমাত্রার এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
বিবিসির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল ইসলাম বলেন, ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্বের পরিমাণ লাইন চার্টে বসালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, এক ধাপে এত বেশি শুল্কারোপ গত ১০০ বছরে দেখা যায়নি। ‘ভীষণভাবে সুরক্ষিত মার্কিন অর্থনীতির আমলে’ ১৯৩০ সালে সবশেষ এ ধরনের উচ্চ রাজস্ব আদায়ের নজির দেখা গিয়েছিল।
এবার নতুন করে শুল্ক আরোপের পর এক রাতেই বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারের দরপতন ঘটে। বিশেষ করে এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি দেখেও বিষয়টির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিশ্ববাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু কতটুকু পরিবর্তন ঘটেছে, প্রকৃত পরিমাপ বোঝা যাবে এর মাধ্যমেই।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা যে কোনো পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এটি কার্যকর হবে আগামীকাল শুক্রবার। এছাড়াও বাণিজ্য ঘাটতির ‘অপরাধে’ অভিযুক্ত আরও কয়েক ডজন দেশের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর সত্যিই ‘অপ্রত্যাশিত’। এর প্রভাব পড়বে হাজারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানায়। বেশ কয়েকটি দেশকে সার্বিকভাবে চরম বিপদে ফেলবে। ভেঙে পড়বে প্রচলিত ব্যবসায়িক কাঠামো। এর ফলে পুরো এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা সরবরাহ ব্যবস্থা নিমিষেই ভেঙে পড়বে। অনেক মার্কিন ঘেঁষা প্রতিষ্ঠান চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলেও মত দেন তিনি।
বিবিসির ফয়সাল ইসলামের প্রশ্ন, ‘এটা কি শুধুই এক ধরনের উচ্চ পর্যায়ের দরকষাকষি?
এ ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন সম্ভবত এমন দাবি করেছে যে পরিকল্পিত কর রেয়াতের ক্ষতি পোষাতেই শুল্ক থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থার সুযোগ সীমিত।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সরাসরি বলেছেন, ‘এটা দরকষাকষি নয়, এটা জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ।’
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিমালার উদ্দেশ্য মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতিকে ‘আবারও শূন্যে ফিরিয়ে নেওয়া’। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে কারখানা সরিয়ে নিতে অনেক বছর দরকার। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় কাপড়, খেলনা, ইলেকট্রনিক্সসহ বেশকিছু পণ্যের দাম খুব দ্রুত বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে বাকি দেশগুলো প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইউরোপের ক্রেতারা স্থানীয় কাপড় ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য কম দামে কেনার সুযোগ পাবেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। দেশটির শুল্ক যুদ্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় অর্থনীতিগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বন্ধন আরও শক্তিশালী ও সমন্বিত করে নিতে পারে।
টেসলার কমতে থাকা বিক্রি থেকে দেখা গেছে-এসব ঘটনার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ-প্রতিক্রিয়া শুধু গল্পের এক অধ্যায়-মাত্র। বর্তমান যুগে ক্রেতারাও তাদের নিজ অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন, যা তারা ইলন মাস্কের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দেখিয়েছেন।
একে নতুন ধরনের সামাজিক মাধ্যমের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ইউরোপ চাইলে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত মার্কিন ব্র্যান্ডের পণ্য না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের ওপর খড়গ নেমে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়া মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না বলেই মত দেন বিবিসির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কোন দেশের ক্ষেত্রে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা নিচে তুলে ধরা হলো- চীন ৩৪ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ, তাইওয়ান ৩২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ, জাপান ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩৬ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৪৯ শতাংশ, বাংলাদেশ ৩৭ শতাংশ, ভারত ২৬ শতাংশ, পাকিস্তান ২৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ১০ শতাংশ, নেপাল ১০ শতাংশ, ফিলিপাইন ১৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৪৪ শতাংশ, মিয়ানমার ৪৪ শতাংশ এবং লাওস ৪৮ শতাংশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত