রাজশাহীর বাগমারায় এক গৃহবধূর ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এর বিচারে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এই ধরনের অপরাধের বিচার গ্রাম্য সালিশে করায় স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাতে সালিশ বসিয়ে এই বিচার করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, এমন অপরাধের বিচার সালিশে করা ঠিক হয়নি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এমন অপরাধের সঙ্গে আর জড়াবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। 

মাতব্বরদের পক্ষে বলা হয়েছে, বিচার করার এখতিয়ার না থাকলেও সালিশে তা মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩১ মার্চ) রাতে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালী গ্রামের এক গৃহবধূ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ওইদিন রাতে একই গ্রামের মোজাহার আলী গৃহবধূর ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং শ্লীলতাহানি ঘটান। 

এই ঘটনায় পরের দিন ঈদের দিন গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করেন। ঈদের ছুটি থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে এই বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেন। 

এদিকে মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ বসানো হয়। ওই সালিশে ইউপি সদস্য আমানুল্লাহসহ গ্রামের মাতব্বরেরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শমসের আলী, আবু সাঈদ, আলা হোসেন ও আবেদ আলী নেতৃত্ব দেন। তারা এলাকার মাতব্বর ও প্রভাবশালী। সালিশে মাতব্বরদের জেরার মুখে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

মাতব্বরেরা জানান, অভিযুক্তের কাছ থেকে অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধে জড়াবেন না বলে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। পুনরায় এই ধরনের অপরাধে জড়ালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে বলে লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়।

সালিশের বিষয়ে ইউপি সদস্য আমান উল্লাহ বলেন, “বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে।” কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান। 

সালিশে উপস্থিত থাকা শমসের আলী নামের এক মাতব্বর বলেন, “বিচার করলে অনেক কিছু করতে হয়, সব দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগকারীকে ১৫ হাজার টাকা, স্থানীয় মসজিদে দুই হাজার টাকা এবং তিন হাজার টাকার মিষ্টি কিনে সালিশে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।” 

তিনি দাবি করেন, “পরিবারের পক্ষেও এমনটিও চাওয়া হয়েছিল। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে উভয় পক্ষ খুশি।” তবে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল সরদার জানান, তিনি ঈদের দিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ওই সময় ছুটি থাকায় নোটিশ করতে পারেননি। বিষয়টি দেখার জন্য ইউপি সদস্যের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগে কী লেখা ছিল, তা তিনি পড়েননি। কী হয়েছে তাও তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ধর্ষণের চেষ্টা হয়ে থাকলে তা গ্রাম্যসালিশে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। যদি থানায় জানানো হয়, তাহলে মামলা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/কেয়া/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ র র অপর ধ সদস য গ হবধ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’

ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্‌রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ