হামজা চৌধুরীর জন্ম ইংল্যান্ডে, জামাল ভূঁইয়ার ডেনমার্কে, তারিক কাজীর ফিনল্যান্ডে। তাঁরা তিনজনই এখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক ফুটবলেও এমন উদাহরণ কম নেই। যেমন নরওয়ের হয়ে খেলা আর্লিং হলান্ডের জন্ম ইংল্যান্ডে, স্পেনের দিয়েগো কস্তার ব্রাজিলে, মরক্কোর আশরাফ হাকিমির স্পেনে।

একজন ফুটবলারের কোনো ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন/ফেডারেশনের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার মৌলিক শর্তই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব থাকা। কিন্তু কেউ একজন চাইলেই যেমন আরেকটি দেশের নাগরিক হতে পারেন না, তেমনি নাগরিকত্ব নিলেই সে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার যোগ্যতা অর্জনও নিশ্চিত নয়।

একজন ফুটবলার কোন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে খেলতে পারবেন, কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে—এ নিয়ে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। আরজিএএস (ফিফা রেগুলেশনস গভর্নিং দ্য অ্যাপ্লিকেশন অব দ্য স্ট্যাটিউটস) নামে পরিচিত নীতিমালাটি একবিংশ শতাব্দীতেই তিন দফা হালনাগাদ হয়েছে, যার সর্বশেষটি ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফিফার ৭০তম কংগ্রেসে।

একজন ফুটবলার আন্তর্জাতিক ফুটবলে অ্যাসোসিয়েশন বা ফেডারেশনের প্রতিনিধিত্ব করেন মোটের ওপর তিনটি সূত্রে—জন্ম, পরিবার ও বসবাস। ফিফা নীতিমালা অনুসারে, একজন খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতার প্রাথমিক ভিত্তি তাঁর জাতীয়তা। যেমন ধারা ৫.

১-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্দিষ্ট দেশে বসবাসের ওপর নির্ভরশীল নয়—এমন স্থায়ী জাতীয়তাধারী যেকোনো ব্যক্তি সেই দেশের অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্বকারী দলের হয়ে খেলার যোগ্য।’

যার অর্থ, জন্মসূত্রে বা জাতিগত সূত্রে (মা–বাবার নাগরিকত্ব) পাওয়া নাগরিকত্বে একজন ফুটবলার সংশ্লিষ্ট দেশের হয়ে খেলতে পারবেন। তবে জন্মগ্রহণ করা মাত্রই যে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব নিশ্চিত, তা নয়। কিছু দেশ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয় না, আবার কেউ কেউ মা–বাবার পেশাগত কারণেও ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। ম্যানচেস্টার সিটির হলান্ডই যেমন ফুটবলার বাবার কর্মসূত্রে ইংল্যান্ডের লিডসে জন্ম নিয়েছেন, তবে জাতীয়তা নরওয়েজীয় এবং সে দেশটির হয়েই বয়সভিত্তিক দল থেকে খেলেছেন বলে কখনো অ্যাসোসিয়েশন বদলানোর প্রসঙ্গই ওঠেনি।

ফিফা বলছে, একজন খেলোয়াড় যে দেশের হয়ে খেলতে চান, সেই দেশটির সঙ্গে তাঁর ‘পরিষ্কার সংযোগ’ বা সম্পর্ক থাকতে হবে। ফিফা নীতিমালায় একটি অ্যাসোসিয়েশনে/জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার ৪টি মাধ্যমের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৭.১ অনুসারে:

১. ওই খেলোয়াড়ের জন্ম সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভূখণ্ডে বা দেশে
২. ওই খেলোয়াড়ের জন্মদাতা মা অথবা জন্মদাতা বাবার জন্ম সে দেশে
৩. ওই খেলোয়াড়ের রক্ত সম্পর্কের দাদা/দাদি অথবা নানা/নানির জন্ম সে দেশে
৪. ওই খেলোয়াড় সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভূখণ্ডে বসবাস করছেন/করেছেন। এ ক্ষেত্রে দশ বছরের আগে বসবাস শুরু করলে অন্তত ৩ বছর, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বসবাস করলে অন্তত ৫ বছর, ১৮ বছর বয়স থেকে বসবাস করলে অন্তত ৫ বছর শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে।

একজন খেলোয়াড় তাঁর অ্যাসোসিয়েশন বা জাতীয় দল পরিবর্তনের আবেদনও করতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় যদি প্রথম জাতীয় দলের হয়ে প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে খেলে ফেলেন, তাহলে এরপর আর জাতীয় দল পরিবর্তন করতে পারবেন না। যেমন, হামজা চৌধুরী যদি ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে ইউরো বা বিশ্বকাপে এক ম্যাচও খেলতেন, বাংলাদেশ দলের হয়ে আর খেলতে পারতেন না। আবার বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার কারণে সামনে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পাবেন না।

* যদি কোনো খেলোয়াড় ২১ বছর বয়সের আগে তিনটির বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ (প্রীতি নয়) না খেলেন, তাহলে সর্বশেষ ম্যাচের ৩ বছর পর নতুন দেশের হয়ে খেলতে পারবেন। তবে যেসব খেলোয়াড় ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের আগে পুরোনো দলের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ২১ বছরের নিয়মটি প্রযোজ্য নয়।

* যদি কোনো খেলোয়াড় তাঁর জন্মগ্রহণ করা দেশের জাতীয় দলে না খেলার সুযোগ পান, তাহলে অন্য কোনো দেশে ৫ বছর বসবাস করলে ওই দেশের হয়ে খেলতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে ১২ মাসের মধ্যে অন্তত ১৮৩ দিন শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকলে এক বছর গণনা হবে।

* একজন খেলোয়াড় জাতীয় দল পরিবর্তন করার পর আগের দলে ফিরতে পারবেন, যদি নতুন দলের কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ম্যাচে না খেলে থাকেন। অর্থাৎ, নতুন দলে নাম লিখিয়ে মাত্র এক ম্যাচ খেললেই তিনি আর পূর্বের অ্যাসোসিয়েশনে ফিরতে পারবেন না।

একজন খেলোয়াড়ের জাতীয় দল পরিবর্তনের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন করে ফিফা। এ জন্য তাঁর নতুন অ্যাসোসিয়েশন/ফেডারেশনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফিফা সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়টির ধরন (পূর্বে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন/খেলেননি, ১৮ বছরের আগে/পরে বসবাস, নাগরিকত্ব থাকা/না থাকা) অনুসারে কাগজপত্রের ভিন্নতা আছে।

তবে সব ক্ষেত্রেই নতুন দেশটির পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। ফিফা খেলোয়াড়ের জাতীয় দল পরিবর্তনের আবেদনটি তাদের প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির (পিএসসি) কাছে পাঠায়। আবেদনটি গৃহীত/বাতিল করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একজন ফ টবল র একজন খ ল য় ড় র জ ত য় দল জ ত য় দল প ওই খ ল য় ড় দ শ র হয় প রব ন র জন ম নত ন দ বসব স বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’

এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • নরওয়ের গ্র্যান্ডমাস্টারকে রুখে দিয়ে বিশ্বকাপে দারুণ শুরু মননের, ফাহাদের হার
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’