Prothomalo:
2025-05-01@00:04:50 GMT

আত্মহত্যা বিষয়ে ইসলাম কী বলে

Published: 4th, April 2025 GMT

আত্মহত্যা মানে স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশ। ইসলামে আত্মহত্যা মানে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ, মহাপাপ। যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন, তিনি দাফন-কাফনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা পেতে পারেন না। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারা অনুসারে আত্মহত্যার চেষ্টা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আত্মহত্যার কারণ খুঁজলে দেখা যায়, এক মানুষের জীবনে অনেক দুঃখ, অনেক কষ্ট, আপনজনরা তাকে মূল্যায়ন করছে না, অথবা প্রিয়জনের কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে গিয়েছে ইত্যাদি।

প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.

)-এর জীবনেও অশান্তি ছিল। ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে কষ্ট সহ্য করেছেন, তা কোরআন হাদিস, নবীর (সা.) জীবনী পড়লে জানা যাবে। তখন জীবনের কষ্ট আর কষ্ট মনে হবে না।

আত্মহত্যার পরিণতি কী

মজার ব্যাপার হলো, যারা আত্মহত্যার মাধ্যমে দুনিয়ার অশান্তি থেকে মুক্তি চায়, আসলে কিন্তু তারা তা পায় না। কারণ, মৃত্যুই শেষ কথা নয়। আবার আরেকটি জীবন অপেক্ষা করছে। আল্লাহর বিধান না মানার কারণে সে-জীবনেও সে শান্তির দেখা পাবে না। মৃত্যু তো একদিন আসতই, কিন্তু এই ধরনের ইচ্ছামৃত্যুর কারণে সে নিজেকে পাপী বলে প্রমাণিত করে ফেলেছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে তারপর আমারই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৫৭)

আরও পড়ুনজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি২৫ জানুয়ারি ২০২৫

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে হাদিসে জানা যায়, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে। সেটি দিয়ে সে নিজের নিজের উদর ছিন্ন করতে থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০৯)

নিরাশ হওয়া যাবে না

আল্লাহ বলেছেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

আল্লাহ্ বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। এবং আর যে কেউ বিদ্বেষবশত ও অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, আমি নিশ্চয় তাকে তাকে আগুনে পোড়াব, আর এ আল্লাহর পক্ষে সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)

আল্লাহ্ আরও বলেন ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না, আর তোমরা সৎকর্ম করো। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের কে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা,আয়াত: ১৯৫)

আরও পড়ুনআত্মহত্যা অনুচিত ও মহাপাপ২২ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ