ইউরোপকে সুরক্ষা দিতে গড়ে ওঠা ন্যাটো কি টিকে থাকবে
Published: 4th, April 2025 GMT
আজ ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে গঠিত হয় একটি সামরিক জোট। পুরো নাম নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে ন্যাটো। প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট বলা যায় একে।
৭৬ বছর আগে সই হওয়া ন্যাটো প্রতিষ্ঠার চুক্তিকে ‘ওয়াশিংটন চুক্তি’ নামেও ডাকা হয়। চুক্তিতে সই করে মোট ১২টি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও পর্তুগাল।
ধীরে ধীরে আরও দেশ এ জোটে শরিক হয়, বাড়তে থাকে ন্যাটোর পরিধি। বর্তমানে ৩২টি দেশ এ জোটের সদস্য। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চে ন্যাটোয় যোগ দেয় সুইডেন। দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতার নীতি ছুড়ে ফেলে সুইডেন ন্যাটোয় যুক্ত হয়েছে। ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। ন্যাটোর বর্তমান মহাসচিব মার্ক রুটে। তিনি একসময় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
একজন ট্রাম্প ও ন্যাটোর অস্তিত্বের সংকট
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ন্যাটো সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠবে, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর কারণ হলেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যে জুজু তাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র একসময় ন্যাটো গড়েছিল, সেই জুজুকেই এখন দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করতে আগ্রহী ট্রাম্প। তিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন।
ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ চাওয়া নিয়ে প্রবল আপত্তি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে যে আলোচনা শুরু করেছেন, সেখানে তিনি ইউরোপ ও ন্যাটোকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে গেছেন। আর শান্তি আলোচনা শুরু করার আগে পুতিনের অন্যতম শর্ত, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না।অন্যদিকে বাকি অংশীজনেরা নিজেদের সামরিক ব্যয় না বাড়ালে ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে যাচ্ছেন। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ব্রাসেলসে গিয়ে বলেছেন, ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্র আগেও যেমন তৎপর ছিল, এখনো তা–ই আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলেছেন, তিনি ন্যাটোকে সমর্থন করেন। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে থাকবে। তবে শর্ত হলো, বাকি অংশীদারদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করতে হবে।
ন্যাটোর পতাকা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের যে কৌশলে ‘জিহাদি’ শারা হয়ে উঠলেন সিরিয়ার ‘আমির’
২০১৯ সালের বসন্ত। রুশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ইদলিবের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তৈরি হয় জরুরি পরিস্থিতি।
হায়াত তাহরির আল–শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল–জোলানি (আহমেদ আল–শারা নামে বেশি পরিচিত) তখন ইদলিবের কেন্দ্রস্থলে একটি নিরাপদ বাড়িতে তাঁর সহযোগী ও কয়েকজন বিদেশি অতিথির সঙ্গে বসেছিলেন। অতিথিদের মধ্যে তুর্কিও ছিল।
রাত বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আল–শারা মন খুলে নিজের ব্যক্তিগত কিছু গল্প বলতে শুরু করলেন। ‘আমি ছোটবেলায় একবার স্বপ্ন দেখেছিলাম’, ধীরে, গভীর মনোযোগ নিয়ে বলতে থাকেন তিনি। ‘স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমি দামেস্কের আমির হয়েছি।’
আশ–শারা বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন ছিল শুভ ইঙ্গিত, নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্রষ্টার একধরনের বার্তা। তাঁর বিশ্বাস ছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কঠিন হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতা সম্ভব। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা, যাঁদের মধ্যে সালাফি পটভূমির লোকও ছিলেন। বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন সত্যি তিনি বিশ্বাস করতেন।
ওই গল্প বলার প্রায় পাঁচ বছর পর আহমেদ আল–শারা তাঁর বিদ্রোহী খেতাব কাটিয়ে সিরিয়ান আরব রিপাবলিকের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট, অর্থাৎ সেই ‘আমির’ হন, যার স্বপ্ন তিনি একসময় দেখেছিলেন।
রাত বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আল-শারা মন খুলে নিজের ব্যক্তিগত কিছু গল্প বলতে শুরু করলেন। ‘আমি ছোটবেলায় একবার স্বপ্ন দেখেছিলাম’, ধীরে, গভীর মনোযোগ নিয়ে বলতে থাকেন তিনি। ‘স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমি দামেস্কের আমির হয়েছি।’এখন জোলানি নিজের জন্মনাম আহমেদ আল–শারা নামে পরিচিত। ৪৩ বছরের শারা খুব দ্রুতই নিজের পরিচয় পাল্টে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। একসময়ের ‘জিহাদি সন্ত্রাসী’ (যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কথায়) থেকে এখন রাষ্ট্রনেতা তিনি। ইরাক থেকে সিরিয়া। দীর্ঘ সময় আল–কায়েদা ঘরানার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে সক্রিয় থাকার পর এমন পরিবর্তন বিস্ময়করই বলা যায়।
আসাদ পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শারা এখন সেসব বিশ্বনেতার সঙ্গেও মিশছেন, যাঁদের তিনি একসময় এড়িয়ে চলতেন। তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জনসমক্ষে উপস্থিত হন, শ্মশ্রু ছোট করেছেন, পাগড়ি ও থোব (ঐতিহ্যবাহী দীর্ঘ ঢিলেঢালা পোশাক) ছেড়ে স্যুট–টাই পরছেন। সব মিলিয়ে এমন একটি নতুন রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে স্পষ্ট ইসলামি প্রভাব নেই।
কিন্তু এ রূপান্তর কীভাবে সম্ভব হলো
তুরস্কসহ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা, সিরীয় সূত্র, বিশেষজ্ঞ, এমনকি সিরিয়ার সরকারি শাসনব্যবস্থার ভেতরের লোকেরাও মনে করেন, ইদলিবে শারার শাসনামলেই ধীরে ধীরে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও ভূমিকার এ পাল্টে যাওয়া শুরু হয়। ইদলিব মূলত একধরনের অনানুষ্ঠানিক ‘ক্ষুদ্র রাষ্ট্র’ হয়ে উঠেছিল, যা শারার ভাবমূর্তিকে পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
‘তাঁর (আল–শারা) রূপান্তরে তুরস্ক খুবই বাস্তব ভূমিকা রেখেছে’, এইচটিএসের নেতা থাকাকালীন শারার সঙ্গে দেখা করা একজন তুর্কি কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন।
তুরস্কের সঙ্গে প্রথম বড় যোগাযোগ
তুর্কি কর্মকর্তার মতে, শারার নিজেরও বদলে যাওয়ার কারণ ছিল। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে টিকে থাকতে হতো, আর তুরস্কই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা। কারণ, তিনি এমন এক এলাকায় আটকে ছিলেন, যেখানে আঙ্কারা ছিল তাঁর জীবনসঞ্চারণী রেখার মতো।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে, ১৪ মে ২০২৫