ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। দীর্ঘ বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার রাতে ১২৮-৯৫ ভোটে বিলটি পার্লামেন্টের শেষ বৈতরণী পার করে। 

রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই বিলটি আইনে পরিণত হবে। তবে বিরোধী দল কংগ্রেস এত সহজে হার মানছে না, তারা বিলটি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা শিগগিরই ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল-২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাব। কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী এই বিলকে সংবিধানের ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সমাজকে ‘স্থায়ীভাবে বিভক্ত’ রাখতে চায়। 

বিজেপি তাঁর এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। পার্লামেন্টে এই বিল নিয়ে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়। রাজ্যসভায় রেকর্ড ১৭ ঘণ্টা ২ মিনিট এবং লোকসভায় ১২ ঘণ্টার বেশি আলোচনা হয়।

বিতর্কিত বিলটি পাসের প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতা, চেন্নাই ও আহমেদাবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল প্রত্যাখ্যান’ স্লোগান দেন। 

কলকাতায় জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়াক্ফ প্রোটেকশনের ডাকে বিক্ষোভ হয়। এএনআইর ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভস্থলে উন্মুক্ত স্থানে জমায়েত হয়ে বক্তারা বিলটির বিরোধিতা করেন। আহমেদাবাদে পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত ছিল। পুলিশ সেখানে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের জোর করে সরানোর চেষ্টা করে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) গুজরাট শাখার প্রধানসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়। 

চেন্নাইয়ে অভিনেতা বিজয়ের তামিলাগা ভেট্রি কাজাগাম (টিভিকে) রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেন। চেন্নাই, কোয়েম্বাটুর ও তিরুচিরাপল্লিতে টিভিকে কর্মীরা ‘ওয়াক্ফ বিল প্রত্যাখ্যান’ ও ‘মুসলিমদের অধিকার কেড়ো না’ স্লোগান দেন। লক্ষ্ণৌয়েও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (সেন্ট্রাল লক্ষ্ণৌ) আশীষ শ্রীবাস্তব বলেন, আমরা সবাইকে বিলটি ভালোভাবে পড়ে মতামত দিতে বলেছি। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত মনিটর করছি আমরা। 

পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর নির্বাচনের মুখে এই বিক্ষোভ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি রাজ্যের মুসলিমদের জমি হারাতে দেবেন না। বিজেপিকে দেশ বিভক্ত করার চেষ্টার অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, নতুন অ-বিজেপি সরকার কেন্দ্রে গঠিত হলে এই বিল বাতিল করা হবে। 

ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাসের পক্ষে দলের সমর্থনের প্রতিবাদে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জনতা দলের (ইউনাইটেড) দুই শীর্ষ নেতা। জানা গেছে, দলত্যাগ করা নেতাদের মধ্যে আছেন মোহম্মদ কাসিম আনসারি এবং দলের সংখ্যালঘু সেলের প্রধান মোহম্মদ আশরাফ আনসারি। খবর এনডিটিভি ও দ্য হিন্দুর।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল কসভ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ