বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারপ্রধানের মধ্যকার বৈঠককে দুই দেশের জন্য ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার এ ইস্যুতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেছেন, ভবিষ্যতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং ভালো ফলাফল আনবেন।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক হয়েছে। এটি খুবই আনন্দের। আমরা মনে করি, ভূরাজনীতি, বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি ও বাংলাদেশ-ভারতের এ অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে ড.

মুহাম্মদ ইউনূস এবং নরেন্দ্র মোদির বৈঠক আমাদের সামনে একটি আশার আলো তৈরি করছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, সেটি যেন আর সামনে না এগোয় অথবা কমে আসে, বৈঠকে সে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি যতদূর দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, এ ব্যাপারে দু’জনই যথেষ্ট আন্তরিক এবং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও ভারত– দু’দেশের মানুষের উপকারে আসবে।

গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তা, ক্রীড়াবিদ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসভবনে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এ বৈঠক নিশ্চয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটির প্রয়োজন ছিল।

বৈঠকটির জন্য আমাদের সরকার চেষ্টা করছিল এবং তা হয়েছে। তবে আমি জানি না বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। বিশদ না জেনে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা বাঁধ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে– প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বরাত দিয়ে জানানো হলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যেগুলো আপনারা (সাংবাদিক) বলছেন, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ও বিচার সময়ের দাবি, জনগণ এবং বিএনপির দাবি। যদি শুধু শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের কথাবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে আমি একটু যোগ করতে চাই, তাঁর যেসব সাঙ্গোপাঙ্গ সেখানে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, তাদেরও যেন ভারত ফেরত পাঠায়।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে পাঠিয়ে দেওয়া। কারণ, ফ্যাসিস্টের বিচার হওয়া খুব জরুরি। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারাবিশ্বের জন্য জরুরি। বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে বলছেন। আমি মনে করি, তিস্তা বাঁধ নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। তিস্তার পানি আমাদের দিতে হবে এবং তিস্তা বাঁধের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। তিস্তা ও ফারাক্কার বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো ছাড় দেবে না।’

বিএনপি এ নেতা বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের মানুষ শক্ত অবস্থানে আছে। ভারতের সঙ্গে যেসব অসম চুক্তি বিগত সরকারের আমলে হয়েছে, তা বাতিল করা দরকার। সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ আপনারা (সাংবাদিক) যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বললেন, এগুলো হয়ে থাকলে আমি মনে করি, ভালো আলোচনা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে ড. ইউনূস আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং ভালো ফলাফল দেবেন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ম র জ ফখর ল র জন য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ