Samakal:
2025-05-01@04:48:33 GMT

ছয়টি বিকল্প নিয়ে ভাবছে সরকার

Published: 5th, April 2025 GMT

ছয়টি বিকল্প নিয়ে ভাবছে সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি অন্যান্য দেশের মতো কিছুটা বেকায়দায় ফেলছে বাংলাদেশকেও। তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অস্বাভাবিক এ শুল্কহার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে।

বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর কৌশল খুঁজে বের করা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে কোনো কোনো দেশ। বাংলাদেশকেও পরিস্থিতি বুঝে জুতসই কোনো কৌশল নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সম্পর্কিত বৈঠক ছাড়াও দ্রুত আলোচনার নানা সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলাসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমলে শুল্ক কমানোর বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কাঠামো কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে অন্তত ছয়টি বিকল্প নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। 

কৌশলগত কারণে এসব বিকল্পের বিষয়ে জানাতে রাজি হননি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। আগামীকাল রোববার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।  

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান সমকালকে বলেন, একটা জুতসই সমাধানের বিষয়ে সরকার আশাবাদী। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা এবং দু’জন বাণিজ্য বিশ্লেষককে নিয়ে আগামীকাল বৈঠকে বসবেন তারা। সবার মতামত পাওয়ার পর আরও পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে। 

সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পরামর্শ

মার্কিন শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাকে এ মুহূর্তে সহজ বিকল্প মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.

জাহিদ হোসেন। 

গতকাল সমকালকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বার্তা বুঝতে ভুল হচ্ছে আমাদের। ঘোষণায় শুল্কহার নির্ধারণের যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই– এমন কথা অবান্তর। এখানে মূল কথা হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি। অবশ্য কিছু অশুল্ক, আধাশুল্ক বাধা, মেধাস্বত্ব, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা, সরকারি ক্রয় নীতিমালা ইত্যাদির কথাও তারা বলেছে। সেগুলোর কী সমাধান বাংলাদেশ করবে এবং কত দিনের মধ্যে করবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বসতে হবে। তার আগে অগোছালো কাকুতি-মিনতি করে কোনো লাভ হবে না। সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, এসব পদক্ষেপের ফলে তাদের রপ্তানি বাড়বে বাংলাদেশে। বাণিজ্য ব্যবধান কমে আসবে। বাংলাদেশ এ রকম প্রস্তাব তৈরি করলে যে কোনো সময় আলোচনা শুরু করা যায়। টিকফা কিংবা অন্য প্ল্যাটফর্মের জন্য বসে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। 

প্রতিযোগী দেশগুলো কী ভাবছে

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন ও ভিয়েতনাম। চতুর্থ অবস্থানে ইন্দোনেশিয়া এবং পঞ্চম ভারত। শীর্ষ দশের বাকি পাঁচ দেশ হচ্ছে যথাক্রমে মেক্সিকো, হুন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। 

এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে গত বৃহস্পতিবারই উচ্চ পর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা বুই থান চুনের নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের কাজ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যুতে সরকারকে কার্যকর পরামর্শ দেওয়া ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা, যাতে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন নীতিকে নিজেদের অনুকূলে আনা যায়। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে টাস্কফোর্সের উপপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকেও টাস্কফোর্সের সদস্য করা হয়েছে। 

চীন মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরা নতুন শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ঘোষণায় বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পণ্যে শুল্ক দাঁড়াবে ৬১ শতাংশ। প্রধান রপ্তানিকারক চীনের পণ্যে শুল্কহার দাঁড়াবে ৬৯ শতাংশ। প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের মধ্যে কম্বোডিয়ার পণ্যে শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৬৪ শতাংশ। ভারতীয় পণ্যে ৪১ শতাংশ। পাকিস্তানি পণ্যে দাঁড়াবে ৪৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারের পণ্যে ৫৯ শতাংশ হারে। বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ। 

তুলা আমদানি বাড়ানোর পক্ষে মত

তুলার প্রধান ব্যবহার হয়ে থাকে টেক্সটাইল মিলগুলোতে। এই মিলগুলো রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সমজাতীয় অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ ছাড়া দেশীয় বাজারে চাহিদার বস্ত্র ও পোশাকও জোগান দেয় তারা। জানতে চাইলে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক এবং লিটিল গ্রুপের  চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম গতকাল সমকালকে বলেন, দেশে চাহিদার সব তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করলে কোনো অসুবিধা নেই। মার্কিন তুলায় তৈরি পোশাক সে দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের দাবিটিও জোরালোভাবে করা যাবে। পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা যদি আমদানি না করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি দেশীয় এসব বস্ত্র ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি খুব বেশি থাকার কথা নয়। তখন শুল্কও সহনীয় হারে নেমে আসবে।

আমেরিকা থেকে তুলা আসতে সময় ও ব্যয় বেশি হবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হবে না। মাত্র এক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তুলা বাংলাদেশে আসে। আমাদের হাতে তিন মাসের তুলার মজুত থাকে সব সময়। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও পেনাং বন্দরে এনে জমাও রাখা থাকে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম বন্দরে তুলা হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আলাদা টার্মিনাল করা যেতে পারে। এখন প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে মিথ্যা ঘোষণায় তুলা আসে, সুতা আসে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পকে যা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সব মানের তুলা জন্মে। কম দামের পোশাক উৎপাদন কিংবা উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদন উপযোগী তুলা পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সরকার যদি শুল্ক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পারে, তাহলে প্রয়োজনীয় সব তুলা দেশটি থেকে আনতে কোনো বাধা নেই। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় উৎপাদিত বাংলাদেশের পোশাক দেশটিতে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি দীর্ঘদিন দরে করে আসছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে কয়েকজন সিনেটরের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান সংগঠনের তখনকার সভাপতি ফারুক হাসান। এর আগেও মার্সা বার্নিকাট ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত থাকাকালে একই অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে। দুই পক্ষের বিভিন্ন আলোচনায়ও  দফায় দফায় বিষয়টি তোলা হয়। তবে এ পর্যন্ত কোনো ফল হয়নি। 

এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঞ্চলে তুলার চাষ বেশি হয়, সেসব অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশের জিএসপি নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনা ছিল বিজিএমইএর। এতে স্থানীয় তুলা চাষিরা লাভবান হবেন– সে বিষয়টি তাদের বোঝানোর কথা ছিল। বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ৭ শতাংশ। এর ৭২ শতাংশই তুলায় তৈরি। এ কারণে তুলার দ্বিতীয় প্রধান আমদানিকারক দেশ বাংলাদেশ। নিজস্ব তুলা মাত্র ১ শতাংশ। বাকি ৯৯ শতাংশই আমদানি করতে হয়। গত বছর প্রায় ৫০০ কোটি পাউন্ড তুলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০ কোটি পাউন্ড তুলা আমদানি করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প প রস ত ব সরক র র র স গঠন পদক ষ প ব কল প পর য য় ব ষয়ট আমদ ন সহন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ