ঈদের দিন থেকে দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে বাংলা ছবি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দর্শক। দর্শকদের এই চাপ সামলাতে মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ হলিউড ছবির শো একেবারেই কমিয়ে এনেছেন বলে জানিয়েছেন। তাতেও দর্শক সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। স্টার সিনেপ্লেক্সের ওয়েবসাইটে দেখা যায় ঈদের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত প্রায় সবগুলো শাখাতেই টিকিট বুকড।

সরেজমিন কাউন্টারে গিয়েও পাওয়া যায়নি টিকিট। এমনকি ঈদের পঞ্চম দিনেও ওয়েবসাইটে পরের দুই দিনের টিকিট সোল্ডআউট দেখাচ্ছে। কেবল সামনের সারির কয়েকটি টিকিট পাওয়া যাবে দেখাচ্ছিল। হলে কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেন, কাউন্টার খোলার ১ ঘণ্টার মধ্যেই সব টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। দর্শকদের চাপ সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। চাহিদা থাকা ছবির শো বাড়িয়েও কুল পাচ্ছেন না। এককথায় টিকিটের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে দর্শকদের মাঝে।

গেল পাঁচ-ছয় বছর ধরে দুই ঈদে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ২০২২ সালে পরাণ ও হাওয়া সিনেমা সুপারডুপার হিট হওয়ার পর থেকে ঈদে উৎসবে বাংলা সিনেমা দেখতে মাল্টিপ্লেক্সে এমন উপচে পড়া ভিড় জমে। পরবর্তী সময়ে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’ ও ‘তুফান’ এবং নিশোর ‘সুড়ঙ্গ’ দারুণভাবে মাল্টিপ্লেক্সমুখী করে দর্শকদের। সেই ধারাবাহিকতা এবারের ঈদেও পড়ছে।

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় শাকিব খানের ‘বরবাদ’, ‘অন্তরাত্মা’, আফরান নিশোর ‘দাগি’, সিয়ামের ‘জংলি’, সজলের ‘জ্বীন-৩’ ও মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’ সিনেমা। এর মধ্যে দর্শক ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত। ঈদের দিন থেকে হাউসফুল যাচ্ছে এই তিন সিনেমা। দর্শক টানছে মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’ সিনেমাটিও।

গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায় মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে আগামী দুই দিনের টিকিটও সব বুকড হয়ে গেছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহউদ্দিন আহমেদ জানান, স্টার সিনেপ্লেক্স সবসময় নিজেদের দেশের সিনেমা প্রদর্শনে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এবার ঈদেও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। ঈদের ছবি নিয়ে আমরা আশাবাদী। দর্শক রেসপন্সে আমরা খুশি। বরবাদ, দাগি, জংলির দর্শক রেসপন্স খুবই ভালো। 

ঢাকাই ছবির জন্য বিরল দৃশ্য
স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় ঈদের পঞ্চম দিনও টিকিট কাউন্টারে প্রচণ্ড ভিড়। সকাল ১১টা ২০ মিনিটের শোতে ঘণ্টাখানেক কাউন্টারে টিকিট পাওয়া গেলেও পরে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরবাদ, দাগি, জংলি ও চক্কর কোনোটিরই টিকিট নেই। পরের শোয়ের টিকিট খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। ব্যর্থ মনোরথে তাই ফিরে যেতে হচ্ছে দর্শকদের। যেতে যেতে করছেন আক্ষেপ, পাশ থেকে কেউ বলে উঠছেন তাহলে কি আমরা বরবাদ দেখতে পারব না, নিশোর দাগি কিংবা সিয়ামের জংলির কোনোটিরই টিকিট কি নেই? উত্তরে কর্তা ব্যক্তিটি জানাচ্ছেন, না। এমন আক্ষেপ নিয়ে অনেক পরিবারকেই ফিরে যেতে দেখা গেল। একই দৃশ্য সিনেপ্লেক্সের অন্য শাখাগুলোতে। লায়ন ও যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও একই চিত্র। সেখানেও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দর্শক চাপের কথা। চাহিদা অনুসারে টিকিট না দিতে পারার কথা।

টিকিট না পেয়ে ভাঙচুর, চাপ সামলাতে লেটনাইট শো
ঈদে শাকিব খানের ‘বরবাদ’ দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। এমনকি দু’দিন আগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে টিকিট না পেয়ে হলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি দর্শকে চাপ সামলাতে মধ্যরাতে বিশেষ প্রদর্শনীর খবর এসেছে বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স থেকে। হল কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানায়, ‘বরবাদ’ দর্শকের ভালোবাসা ও বিপুল আগ্রহ এবং চাহিদার কারণে ঈদের দ্বিতীয় দিন রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে বিশেষ শো চালু করা হয়েছে। দর্শকের অতিরিক্ত চাহিদায় লায়ন সিনেমাসে বরবাদ-এর স্পেশাল লেট নাইট শো রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। এখানে রাত ১০টা ৫০ মিনিট থেকে এই লেটনাইট শো চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম আফর ন ন শ স য় ম আহম দ ঈদ র দ বরব দ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন