সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

শনিবার দুপুরে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড প্যালেস মিলনায়তনে ইউএনডিপি আয়োজিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্য দক্ষতা বৃদ্ধিতে আঞ্চলিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে আয়োজিত এ সেমিনারে  সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ।

সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার। এছাড়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে স্টিফান লেলার দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক এ মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং তার ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের  রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার সংক্রান্ত রোডম্যাপ এর পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জুলাই ২০২৪ উত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিচারিক সংস্কার শুধু বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কারের স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠিই নয়, বরং এটি এখন নিজেই ‘সংস্কার’ শব্দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিচার বিভাগ হলো রাষ্ট্রের একমাত্র অঙ্গ, যা বহু দশক ধরে নিজের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

এ দাবির কেন্দ্রে রয়েছে নিজেদের সংস্কার কর্মসূচি নিজেরাই নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। গত আট মাসে এই প্রচেষ্টা অভূতপূর্ব গতি অর্জন করেছে। এখন লক্ষ্য হলো সে উদ্দেশ্য পূরণ করা এবং তা যেন ভবিষ্যতেও টিকে থাকে তা নিশ্চিত করা। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে, আমরা কখনও ক্ষমতার পূর্ণ পৃথকীকরণের লক্ষের এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এ সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং প্রাসঙ্গিকতার জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।

সেমিনারে রংপুর জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, শ্রম আদালতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারাসহ রংপুরের বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা এবং কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

এছাড়া সেমিনারে রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌশুলি, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথি অংশগ্রহণ করেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ