Samakal:
2025-05-01@03:25:49 GMT

এক হোম শেফের গল্প

Published: 5th, April 2025 GMT

এক হোম শেফের গল্প

‘সুখী গৃহিণী’ বলতে যা বোঝায়, তার উদাহরণ হতে পারেন রাজধানীর রামপুরা মহানগর আবাসিক এলাকার সাবিনা ইয়াসমিন। স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা। সাবিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। মেয়ে সোফিয়া আর শাশুড়িকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল সময়। হঠাৎ শাশুড়ির অসুস্থতায় সুখী পরিবারটি যেন অকূল-পাথারে পড়ে। চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে লাগবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। মায়ের অসুস্থতায় সাবিনার স্বামীও প্রায় দিশেহারা। সাবিনা ভাবছিলেন, কীভাবে স্বামীর পাশে দাঁড়ানো যায়। 
একসময় টিউশনি করে মাসে ২০ হাজারেরও বেশি টাকা উপার্জন করেছেন। অসুস্থ শাশুড়ি আর ছোট্ট সোফিয়া থাকায় ঘরের বাইরে কোনো কাজ করাও সম্ভব হচ্ছিল না। একদিন জানতে পারলেন, বাড়িতে খাবার রান্না করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে অভ্যস্ত সাবিনা– তাই সাহস করে যোগাযোগ করলেন অনলাইন ফুড ও গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডায়। অল্প দিনের মধ্যে তিনি একের পর এক অর্ডার পেতে থাকেন। সাবিনা মেয়ের নামে রেখেছেন তাঁর ক্লাউড কিচেনের নাম– সোফিয়া’স কিচেন।
রুটি, পরোটা, সাদা ভাত, খিচুড়ি, পোলাও, বিফ ভুনা, পায়া, বট, বয়লার আর সোনালি চিকেন কারি, নানা ধরনের মাছের আইটেম, বুটের ডাল, মিক্সড সবজি, বাহারি ভর্তা, ভাজি, সুজির হালুয়া, নুডলস, পাস্তা, বিফ হালিম দিয়ে সাজানো সাবিনার মেন্যু। শুরুর দু’দিনের মধ্যে সাবিনা বেশ কিছু অর্ডার পান আর তা সঠিক সময়ে পাঠিয়ে দেন। সাবিনার প্রোফাইলে ফাইভ স্টার রেটিং বাড়তে থাকল।
তবে কাজটা সহজও ছিল না। ছোট্ট সোফিয়ার দেখভাল, শাশুড়ির যত্নআত্তি আর সংসারের দশটা প্রয়োজন সামলিয়ে ঠিকঠাক অর্ডার পাঠানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মতো মনে হচ্ছিল সাবিনার। এরই মধ্যে একদিন দুর্ঘটনায় বাম হাতের অনেকটা পুড়ে গেল তাঁর। ব্যান্ডেজ করা হাত নিয়ে কাজ করতে গিয়ে রান্নাঘরে কেঁদে ফেলতেন সাবিনা। সংসারের প্রয়োজনের কথা ভেবে আবার উঠে দাঁড়াতেন। 
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত হোম কিচেন চালু রাখেন সাবিনা। তিনি জানান, রমজান মাসে ইফতার ও সাহ্‌রিও বিক্রি করেছেন। সাবিনা বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোনো প্রারম্ভিক পুঁজি ছাড়া নিজের ব্যবসা শুরু করে আয় করার সুযোগ পেয়েছি। এর ফলে উদ্যোক্তা হওয়া আমার জন্য সহজ হয়েছে। ঘরে বসে আয় করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।’
হোমশেফ হিসেবে কাজ করে সাবিনা নিজের অনেক স্বপ্নও পূরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খাবার বিক্রি শুরুর পর ফার্নিচার কিনে নিজের মতো করে বাসা সাজিয়েছি। স্বামীর অনেক স্বপ্ন পূরণেও পাশে দাঁড়িয়েছি। ১১ বছরের সংসার জীবনে কখনও হানিমুনে যাওয়ার সাহস করিনি। কিছুদিন আগে আমরা কক্সবাজার ঘুরে আসতে পেরেছি।’
এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ অর্ডার ডেলিভারি করে সোফিয়া’স কিচেন। তবে সাবিনার স্বপ্ন অনেক বড়। একদিন অনেক বড় রেস্টুরেন্ট হবে সোফিয়া’স কিচেন। শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সফল রন্ধনশিল্পী ও ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন সাবিনা। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ