‘বুকে পাথর বাইন্ধা কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি’
Published: 6th, April 2025 GMT
‘আমার চোখের সামনে বউ-পোলাপানসহ চাইরজন সদস্য মইরা গেল। সাত বছরের মেয়েসহ সবাই রোজা আছিল। বাসের ধাক্কায় নিমিষেই আমার পরিবারটা ধ্বংস হইয়া গেল। আমি তারারে বাঁচাইতে পারলাম না। আল্লাহ যে ক্যান আমারে বাঁচাইয়া রাখল। আমি এই জীবন দিয়া কী করবাম এহন? আমার পরিবারের সবাই এহন কবরে। ব্যাডা মানুষ কানবারও পারি না। তাই বুকে পাথর বাইন্ধা বউ-পোলাপানের কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি সারাদিন।’
কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের গৌরিপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মানিক। ঈদুল ফিতরের আগের দিন একই উপজেলার গাজীপুর এলাকার প্রগতি ফিড মিলের সামনে ময়মনসিংহগামী বাসের সঙ্গে গৌরীপুরগামী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে প্রীতি (৭) ও রীতি (১৪) মানিকের মেয়ে, দিলরুবা (৪০) তাঁর স্ত্রী এবং কুলসুমা বেগম (৯৫) তাঁর শাশুড়ি।
গতকাল শনিবার সরেজমিন ভাংনামারি ইউনিয়নের আকন্দ বাড়িতে গেলে সমকালের সঙ্গে কথা হয় বাড়ির লোকজনের। মানিক বলেন, তিনি ময়মনসিংহ নগরীর স্বদেশী বাজার এলাকায় একটি ছোট দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। এটি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা। তবে অল্প পুঁজির ব্যবসা হওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় দিন চলছিল তাঁর। ঈদের আগের দিন সাহ্রি খেয়ে নাটক ঘরলেনের ভাড়া বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছিলেন তারা। পরে বাসের ধাক্কায় চারজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে যান স্ত্রী-সন্তান হারানো মানিক। দুই মেয়ে তাৎক্ষণিক মারা গেলেও আরেক মেয়ে মারিয়া আক্তার মাহি (১৪) গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। মানিক জানান, মাহি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। নগরীর সিটি স্কুলের ছাত্রী সে। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে শঙ্কিত তিনি। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে।
মানিক বলেন, তিন মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া ও সংসারের কাজেই সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতেন বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
প্রীতি ও রীতির মামা ফজলুল হক আকন্দ জানান, সাত ভাই-বোনের মাঝে ষষ্ঠ ছিল দিলরুবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখতেন। সংসার সামলেও দিনে এক-দুবার তাঁকে ফোন দিয়ে বাড়ির খোঁজখবর নিতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমাদের জীবনে আর কোনো ঈদ আসবে না। এ বাড়িতে আর কোনো দিন আনন্দ হবে না।’
রীতির মামি শিলা আক্তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রীতির মা আমাকে বোনের মতো দেখত। আমাদের আপদ-বিপদে সে সবার আগে এগিয়ে আসত। আমরা কোনো দিন হাসপাতালে গেলে সে একাই সব সামলাত। বাড়িতে আসার আগেই ছোট মাছ আর শুঁটকি রান্না করে রাখতে বলত। তিন মেয়ের মধ্যে দুটো মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেল। আল্লাহ একটি মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগে আমার এক মেয়ে ছিল। এখন থেকে মাহি আমার আরেক মেয়ে।’
অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে শিলা বলেন, ‘তাদের রেখে আল্লাহ যদি আমাকেই উঠিয়ে নিত, তাহলে আমার কোনো দুঃখ থাকত না। এই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের মুখে আর কোনো দিন হাসি ফুটবে না। মাহিকে তার মা ডাক্তার বানাতে চেয়েছিল। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব তার মায়ের আশা পূরণ করতে।’ তাঁর ক্ষোভ, এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তাদের সান্ত্বনা জানাতে আসেনি। কেউ তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
গৌরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাজ্জাদুল হাসান সমকালকে জানান, ঈদে অফিস বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারেননি। তাদের বিষয়ে অবগত আছেন। অফিস খোলা হলে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ আম দ র র স মন পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
আমার বাচ্চার দাদা-দাদিও কী এক্স হয়ে গিয়েছেন, প্রশ্ন পরীমণির
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অধিক আলোচনায় থাকেন। কারণ নিজের ইচ্ছায় বাঁচেন এই নায়িকা। ফলে তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন উড়লেও তা গায়ে মাখেন না।
ব্যক্তিগত জীবনে একাধিকবার বিয়ে করেছেন পরীমণি। সর্বশেষ অভিনেতা শরীফুল রাজের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন। এ সংসারে পূণ্য নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। যদিও এ সংসারও টিকেনি। প্রেম, বিয়েবিচ্ছেদ, সন্তান নিয়ে মাছরাঙা টেলিভিশনের ‘বিহাইন্ড দ্য ফেইম উইথ আরআরকে’ অনুষ্ঠানে খোলামেলা কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
আরো পড়ুন:
ঈদে মুক্তি পাবে পরীমণির সিনেমা
শুধু বেঁচে থাকার চেয়ে, বাঁচা জীবন উদযাপন করাই শ্রেয়: পরীমণি
এ আলাপচারিতায় সঞ্চালক জানতে চান, তোমার কি মনে হয় বিয়েটা ভুল ছিল? জবাবে পরীমণি বলেন, “না। আমার জীবনের কোনো কিছুই ভুল না। সবকিছুই একটা অভিজ্ঞতা।” সঞ্চালক বলেন, আমার মনে হয়, তোমার সাথে এখন পূণ্য থাকার কারণে বিয়েটাকে ভুল বলছো না। জবাবে পরীমণি বলেন, “না, না। ও না থাকলেও বলতাম। অন্য একজনকে নিয়ে কেন বলি না। সবচেয়ে বেশি আফসোস কী জানেন, আমার সাথে কোনো এক্সের (প্রাক্তন) ওই মুহূর্ত আসে নাই, যেখানে গালাগালির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে পরীমণি বলেন, “যে গালিটা চরিত্রের উপরে যাবে, হৃদয়ে লাগবে। মানে আত্মসম্মানে লাগবে এমন কিছু গালি থাকে না! সেটা হতে পারে তুই অথবা কোনো গালিই না! এরকম কোনো পর্যায় আমার এক্সের সাথে হয় নাই। যখন আমার মনে হয়েছে, ওই পক্ষটা আর আগাবে না, টাফ ছিল…।”
এরপর সঞ্চালক জানতে চান, তুমি কী সংসারটা ধরে রাখতে চেয়েছিলে? জবাবে পরীমণি বলেন, “এটা পরে বলি। আমরা দুইপক্ষ যখন বসলাম যে, এটা আর আগানো যাবে না, একটা রেসপেক্টফুল জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা ব্রেকআপ করি। কেন? হয়তো কোথাও দেখা হবে! হয়তো দেখা হবে না। কিন্তু কোথাও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে নামটা আসলে, সেখান থেকে উঠে চলে যাব ব্যাপারটা এরকম যেন না হয়, ব্যাপারটা যাতে সহনশীল একটা জায়গায় থাকে। এই সম্মানটা আমি সবার কাছ থেকে পেয়েছি, সবাইকে দিয়েছিও। যে প্রাক্তনের (প্রাক্তন স্বামী) কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছি। এসব তো আপনাদের সামনেই হয়েছে। বিচ্ছেদটা তো আরো সুন্দর হতে পারত, সেটা কেন হয়নি?”
আমরা শুনেছি, এখন তিনি বাচ্চার (পূণ্য) খোঁজখবর নেন, ভরণপোষণ দেন—সঞ্চালকের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে পরীমণি বলেন, “আমি তো কোথাও শুনিনি। উনি মনে হয় ভুলে গেছেন, উনার বাচ্চা আছে। আমি নিশ্চিত, উনি ভুলে গেছেন।” কেউ কেউ বলেন, তুমি নাকি যোগাযোগ করতে দাও না? এ প্রশ্নের জবাবে পরীমণি বলেন, “বাচ্চা বড় হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এসব অভিযোগের কোনটা সে গ্রহণ করবে, কোনটা করবে না। আমি প্রত্যেকটি বিষয় ক্লিয়ার করে রেখে গিয়েছি, আম পাবলিক একটা কথা বলল সেটাও। আমি যদি আজকে মরেও যাই, এই পর্যন্ত যা যা হয়েছে, তার সবকিছুই ও পেয়ে যাবে। আমি এভাবে এটা রেখে গিয়েছি। এখন আমার কাজই এটা। মাদারহুডে আমি কোনোভাবেই ফেল করতে চাই না, আমি করবও না। আমার বাচ্চা কোনো দিন আমার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারবে না। এমন না যে, ও ওর বাবাকে অসম্মান করে কথা বলবে। কারণ আমি ওকে ওইভাবে বড় করছি।”
বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে পরীমণি বলেন, “হাসপাতালে উনার নাম্বার দেওয়া। আমি আসলে উনার নামটাও মুখে নিতে চাই না। যাহোক, পূণ্যর টিকার ডেটে হাসাপাতাল থেকে মেসেজে উনার ফোন নাম্বারে যায়, উনি কি এটা দেখেন না? আমি কোনো অভিযোগ করছি না, যারা বলেন আমি যোগাযোগ করতে দিই না, তাদের জন্য বলছি—‘এসব তথ্য ভুল’। উনি না হয় ভুলে যান, কিন্তু আমার বাচ্চার দাদা-দাদি নাই? রক্ত তো মুছে ফেলা যায় না। পূণ্যর বিশেষ দিনগুলোতে তারা কেন একটা ফোন দেন না? পূণ্য যখন অসুস্থ হয়, তখনো কেন ফোন করেন না, খোঁজখবর নেন না? খোঁজখবর নেওয়া মানে তো ভরণপোষণ দেওয়া না, আমার বাচ্চার ভরণপোষণ লাগে না। তারাও কী এক্স হয়ে গিয়েছেন?”
ঢাকা/শান্ত