এবার ঈদে ৩২% দুর্ঘটনা ব্যাটারিচালিত রিকশায়
Published: 6th, April 2025 GMT
ঈদের ছুটির চার দিনে দেশের ১০টি বড় সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের করা গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ঈদুল আজহায় সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল মোটরসাইকেল; ৫১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এবার মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা প্রায় সমান।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত কোরবানির ঈদের প্রতিবেদনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনো হিসাব ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদে কয়েকটি হাসপাতাল তাদের রোগী নিবন্ধন খাতায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে অটোরিকশার তথ্যও সংরক্ষণ করে।
ঈদের ছুটির চার দিনে (৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল) রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সমকাল। তাতে এই পরিসংখ্যান উঠে আসে। এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ, অটোরিকশায় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ, চার চাকার যানে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। হাসপাতালে আসা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ আহত রোগীর দুর্ঘটনার কারণ নিবন্ধন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি।
এই ১০টি হাসপাতাল হলো– জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সমকালের প্রতিনিধিরা এসব হাসপাতাল থেকে চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করেন।
প্রাপ্ত তথ্য জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো.
সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের রোগী নিবন্ধন খাতার তথ্য বলছে, দেশের ১০ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঈদের আগের দিন থেকে টানা চার দিনে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন (৩২ দশমিক ২৭), ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ (৩২ দশমিক ১০ শতাংশ) জন আহত হন। বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১১৫ জন। তবে চিকিৎসা নেওয়া ২৯০ জনের আহত হওয়ার কারণ লেখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার সমকালকে বলেন, এবার ঈদে ঢাকা মহানগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বেশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মামলা করার সুযোগ না থাকায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন হলে সড়কে রিকশা কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এবার ঈদের পর এখনও কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রাথমিক তথ্য বলছে, এবার ঈদে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটিতে নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলায় অন্য যানবাহনের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব রিকশার কাঠামো এর গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে তা আসে না। এমনকি জেলা পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর তথ্যও গণমাধ্যমে আসে না। সড়ক দুর্ঘটনার সব তথ্য গণমাধ্যমে এলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত।
পঙ্গু হাসপাতালে আহতের ভিড়, ৮০ ভাগ ঢাকার বাইরের
ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনা আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১২ জন। নিবন্ধন খাতার তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ২৭১ এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন।
গত বৃহস্পতিবার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনের ভিড়। বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও হামলায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন স্বজনরা। তাদেরই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন ২৩ বছরের রিমন হোসেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ভূলতা এলাকায় অটোরিকশা দিয়ে যাচ্ছিলাম। উল্টোদিক থেকে আসা প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে অটোরিকশা উল্টে গুরুতর আহত হই। এক পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। শরীরের নানা জায়গায় জখম হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওপরওয়ালা রক্ষা করেছেন। নইলে বাঁচার কথা না। এখনও ঘোরের মধ্যে আছি।’
ক্যাজুয়ালটি ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিছানায় কাতরাচ্ছেন আরিফ হোসেন। তাঁর ডান পাজুড়ে ব্যান্ডেজ। পাশে বসা স্ত্রী মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আরিফ হোসেন জানান, সাভার এলাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বরিশালের পাথরঘাটা গিয়েছিলেন। সেখানেই ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যায় ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা ঘটে। পায়ে আঘাত নিয়ে ওই দিনই তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন হয়ে গেছে অস্ত্রোপচার করা হয়নি।
আরিফ হোসেন বলেন, ‘এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকা ধার করেছি। কবে কাজে ফিরব, আদৌ ফিরতে পারব কিনা, জানি না। চিকিৎসা কীভাবে চলবে, পরিবার কীভাবে চলবে, সে চিন্তায় অস্থির লাগছে।’
পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, এবার অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে বেশি আহত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এখানে আসা সেবাপ্রার্থীদের ৮০ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। গত চার দিনে ২৫১টি অস্ত্রোপচার হয়েছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ আহত চিকিৎসাধীন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য আলাদাভাবে লেখা হয় না। যারা ভর্তি হন, তাদের তথ্য নিবন্ধন খাতায় লিখে রাখা হয়। ওই তথ্য বলছে, হাসপাতালটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই চার দিনে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশায় আহত ২৪, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ১৯ ও বাস দুর্ঘটনায় আহত ১০ জন। হাসপাতালের তিনটি বিভাগে এদের চিকিৎসা চলছে। নিউরোসার্জারি বিভাগে ২৬, অর্থোপেডিক্সে ১৯ ও নাক কান গলা বিভাগে ৮ জন।
হাসপাতালের পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসাধীন সবাই ঢাকার বাইরের। অধিকাংশের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। রোগীর জটিলতা বিবেচনা করে অস্ত্রোপচারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ঈদের আগের দিনে সর্বোচ্চ আহত
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ জন চিকিৎসা নিতে আসেন ঈদের আগের দিনে। ঈদের দিন আসেন ১৬ জন। ঈদের পরের দিন আসেন ২২ জন। আহতের মধ্যে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, বাস ও ব্যাটারিচালিত রিকশার যাত্রী ছিলেন। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীও আছেন।
জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, আহতের বড় অংশ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। গুরুতর আহতরা চিকিৎসাধীন। চট্টগ্রাম উত্তরের উপজেলাগুলোর তুলনায় দক্ষিণের উপজেলাগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। আহতদের বেশির ভাগ মাথা, হাত, পা ও বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই হাসপাতালে মোট ৭৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আহত হওয়ার কারণ নিবন্ধন খাতায় লেখা হয়নি। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা লেখা আছে।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আটজনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঈদের চার দিনে কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
রামেক সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫০ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। ৩০ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ২০ জন চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আলভি সাদাত জানান, রাজশাহী শহর ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, ঈদের দিন অনেকেই আনন্দ করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালান।
খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৫৭ জন অটোরিকশায় আহত
খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা থেকে ৭৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হন। এদের মধ্যে ৩ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি থাকলেও রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হয়নি।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ৫৯ শতাংশ আহত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চার দিনে ৪৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেশি। কর্তব্যরত নার্সরা জানিয়েছেন, ২৯ জন মোটরসাইকেল ও ১৭ জন অটোরিকশায় আহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন।
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, এবার মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বেশি।
শেবাচিমে চিকিৎসাধীন ৮৬ জন
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৮৬ জন চিকিৎসাধীন। এদের বড় একটি অংশ তিন চাকার বাহনে আহত হন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে এরা আহত হয়েছে সে তথ্য নিবন্ধন না থাকায় উল্লেখ করেননি।
শেবাচিমের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন দশম শ্রেণির ছাত্র সিয়ামের স্বজনরা জানান, তাদের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরমাদ্দিতে। ঈদের পরদিন তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়। গ্রামীণ সড়কে ইজিবাইকের সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল উল্টে সিয়ামের পা ভেঙে যায়।
ময়মনসিংহ মেডিকেলের ১৭ রোগী ঢাকায়
ঈদের ছুটির চার দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে একটি অংশ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। ১৭ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে রোগীদের আহত হওয়ার কারণ উল্লেখ নেই নিবন্ধন খাতায়।
শজিমেক হাসপাতাল: চিকিৎসাধীন ৫ জনের মৃত্যু
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ৫ জন মারা যান। আহতদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ২৩ জন, মোটরসাইকেলে সাতজন ও চারজন বাস দুর্ঘটনায় আহত হন।
শিবগঞ্জ উপজেলার লালদহ গ্রামের জিহাদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, ঈদের আগের দিন বিকেলে একটি ইজিবাইকে করে তারা ৫ জন বগুড়া-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে কিচক যাচ্ছিলেন। পিরব এলাকায় পৌঁছার পর সামনের দিক থেকে আসা আলুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিনিসহ চারজন গুরুতর আহত হন।
রংপুর মেডিকেলে আহত রোগীর তথ্য অসম্পূর্ণ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০ জন। দুর্ঘটনার ধরন সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই নিবন্ধন খাতায়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক আদনান বলেন, আহতদের ক্ষেত্রে ভর্তি রেজিস্টারে শুধু ‘আরটিএ (রোড ট্রাফিক ইনজুরি বা সড়ক দুর্ঘটনা)’ লেখা হয়।
এতে ভর্তিকৃতদের চিহ্নিত করা গেলেও দুর্ঘটনার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, গত তিন মাসে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। মহাসড়কের ধারে হাট থাকায় এখানে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সমকালের প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন সড়ক দ র ঘটন র জন র ম ত য ঈদ র ছ ট ত ন দ র ঘটন ঈদ র দ ন ত হয় ছ ন র রহম ন ও স এনজ চ ক ৎসক আহত র গ আহতদ র ন বন ধ এল ক য় ঈদ র প ন বল ন সমক ল র আহত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।