রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আরাকানের পরিস্থিতিও বিবেচনা করা জরুরি
Published: 6th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের প্রধান ভূরাজনৈতিক সমস্যা অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যু। এটা ইতিমধ্যে যথেষ্ট পুরোনো হয়েছে। এখন তা জটিল পর্যায়ে।
যেকোনো পুরোনো ও জটিল ভূরাজনৈতিক সমস্যায় জনতুষ্টির ছোঁয়া তাকে আরও জটিল করে। এ বিষয়ে সবার সতর্কতা কাম্য।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য প্রধান মুশকিলের দিক হলো আট বছরে আরাকানের (রাখাইন) পরিস্থিতি আমূল বদলে গেছে। রোহিঙ্গাদের তাড়িয়েছিল বার্মার সশস্ত্র বাহিনী। এখনকার আরাকানের ৮০-৯০ ভাগ অংশে তারা আর নেই। আরও সঠিকভাবে বললে, রোহিঙ্গাপ্রধান অঞ্চল উত্তর আরাকানের শত ভাগই রাখাইন গেরিলা তথা আরাকান আর্মির দখলে।
এ রকম অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগে আরাকান আর্মির পূর্ণ সম্মতি ও অংশগ্রহণ লাগবে। এমনকি মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা প্রশ্নে ইতিবাচক হলেও আরাকান আর্মির সদয় সম্মতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো দুরূহ। সেটা বাস্তবসম্মতও হবে না। আবার আরাকান আর্মি ও কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধাবস্থায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাদের মধ্যে ঐকমত্যের সম্ভাবনা ও সুযোগও অতি ক্ষীণ। কারণ, সাম্প্রতিক যুদ্ধে কোনো কোনো রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে জান্তার জওয়ানদের সহযোগিতা করেছিল। তারপরও রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে আরাকান আর্মি কথা বলতে রাজি হতে পারে, তবে নিশ্চিতভাবে তারা কেবল বাংলাদেশের সঙ্গে সেটা করবে, তাদের কিছু চাওয়ার বিনিময়ে, সেটাই মনে হয়। অবশ্য সে রকম কোনো অগ্রগতি ঘটেছে বলে এই সংগঠনের দিক থেকে বার্তা নেই। সাম্প্রতিক দ্বিপক্ষীয় ‘প্রাইভেট বৈঠক’গুলো স্পষ্ট জানাচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রশ্নে রাখাইন ‘জেনারেল’দের অবস্থান দুই বছর আগের তুলনায় আরও কঠোর। যুদ্ধাবস্থায় সুবিধাজনক অবস্থার কারণে এটা অস্বাভাবিকও নয়।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় জান্তার রোহিঙ্গা প্রশ্নে মৌলিক নীতিগত অবস্থানেরও কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে দেখা যায় না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মূল যে সমস্যা—নাগরিকত্বের অস্বীকৃতি, সে বিষয়ে জান্তা আগের অবস্থান পাল্টিয়েছে, এমন কোনো ঘোষণা নেই। আবার আট বছর পর তারা এখন জানাচ্ছে মাত্র, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ‘ফেরত যাওয়ার যোগ্য’ মনে করে। বাকিদের ব্যাপারে তাদের যাচাই-বাছাই চলছে, চলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোকা বানানোর জন্য এটা খুবই চালাকিপূর্ণ এক অবস্থান। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের প্রায় ৮০ ভাগের বেলাতেই মিয়ানমার সরকার এখনো ফেরতযোগ্য কি না, সেটাই জানাতে পারেনি বা জানাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার নীতি নিয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার একটা ফাঁদে ফেলতে চাইছে তারা বাংলাদেশকে। এটা তাদের হিসাবি চাল। যেহেতু শিগগির রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার উদ্যোগ-আয়োজন চলছে, তাই আগে আগে মিয়ানমার জান্তা এ রকম অবস্থান নিল।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে স্পষ্ট, আরাকানে মাঠপর্যায়ে যেখানে একদম নতুন একটা পরিস্থিতি, নেপিডোতে দেখা যাচ্ছে একই বিষয়ে সেই পুরোনো কৌশল। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর খরচপাতির প্রশ্নে বাংলাদেশ বাড়তি চাপে পড়তে যাচ্ছে। এ রকম অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতিকৌশলে পরিবর্তন প্রয়োজন। মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি এখন রোহিঙ্গা প্রশ্নে আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগেরও সময় হয়েছে। তবে সেটা করতে হলে তাদের একধরনের রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রস্তুত আছে কি?
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র আর ক ন র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।
টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।
জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।
এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।
দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।
ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।
মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।
বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।
ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।
ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।
ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।
গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।