মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বাণে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হতে শুরু করেছে বাজার। এই ধাক্কায় গত তিন দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার, মুদ্রা, তেল ও সোনার বাজার পড়ে গেছে। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদমূল্য অনেকটা কমে গেছে।

এর মধ্যেও কিছু ধনীর সম্পদমূল্য বেড়েছে। তবে দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর কারও সম্পদমূল্য আজও বাড়েনি। এর মধ্যে ছয় জনের সম্পদ মূল্য অপরিবর্তিত আছে আর বাকি চার জনের কমেছে। এই ১০ জনের মধ্যে আছেন ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট প্রমুখ।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় গতকাল বিকেল পাঁটটা থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সম্পদমূল্য বেড়েছে ইতালির ধনী সান্দ্রো ভেরনোসি অ্যান্ড ফ্যামিলির। গতকাল তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ১১০ মিলিয়ন বা ১১ কোটি ডলার। সার্বিকভাবে তাঁর সম্পদমূল্য ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনীদের তালিকায় ১ হাজার ৯৯৯। অর্থাৎ বেশ নিচের দিকেই তাঁর অবস্থান। ইতালিতে তাঁর হোসিয়ারি ও ল্যানজারি বিক্রির খুচরা বিক্রয় চেইন আছে, যার নাম ওনিভার্স। বিশ্বের ৫৭টি দেশে এই চেইনের ৫ হাজার ৬০০টি দোকান আছে।

সম্পদমূল্য বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছেন অ্যালিস শোয়ার্তজ। ওষুধের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিক্রি করেন তিনি। গতকাল তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৬২ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তাঁর মোট সম্পদমূল্য ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার। সামগ্রিকভাবে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনীদের তালিকায় তাঁর অবস্থান ২০১১তম।

সম্পদমূল্য বৃদ্ধির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছেন আলেসান্দ্রো বেইলার্স গল অ্যান্ড ফ্যামিলি। গতকাল তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪৮ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আলেসান্দ্রোর সঙ্গে তাঁর পাঁচ ভাইও এই সম্পদের মালিক। তাঁরা মূলত পিতার পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী হয়েছেন। আলেসান্দ্রো গ্রুপ ব্যালের প্রেসিডেন্ট। এই গোষ্ঠী বিমা, পেনশন তহবিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকে।

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমির সহপ্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লেই জুন আছেন তালিকায় চতুর্থ স্থানে। অর্থাৎ গতকাল সম্পদ বৃদ্ধির দিক থেকে তিনি ছিলেন চতুর্থ। গতকাল তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৩৪ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তাঁর মোট সম্পদমূল্য ৩৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। সম্পদমূল্যের দিক থেকে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তাঁর অবস্থান সামগ্রিকভাবে ৩৯তম।

প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার উপযোগী করা, যৌগ উপকরণ প্রস্তুতকারক থিও রুসিসের সম্পদমূল্য বেড়েছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলার। সম্পদমূল্য বৃদ্ধির নিরিখে তাঁর অবস্থান পঞ্চম। সামগ্রিকভাবে তাঁর সম্পদমূল্য ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় সামগ্রিকভাবে তাঁর অবস্থান ১ হাজার ২৫৪তম।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষে শুল্ক আরোপের পর বৈশ্বিক বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ২ এপ্রিল এই শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী গত বৃহস্পতিবার মোট ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সের ১৩ বছরের ইতিহাসে এটি এক দিনে চতুর্থ বৃহৎ পতন। কোভিড-১৯ মহামারির পর এত বড় পতন আর হয়নি। ব্লুমবার্গের সম্পদ সূচক অনুসারে, ব্লুমবার্গ যাঁদের সম্পদের হিসাব রাখে, তাঁদের অর্ধেকের বেশি ব্যবসায়ীর এই পরিণতি হয়েছে সেদিন। গড়ে তাঁদের সম্পদমূল্য ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।

ধনীদের সম্পদমূল্য প্রতি মুহূর্তেই বাড়ে বা কমে। মূলত শেয়ারের দামের ওপর নির্ভর করেই প্রতিদিনই তাঁদের সম্পদমূল্যে পরিবর্তন আসে। ফলে বৃহস্পতিবার সম্পদমূল্য হ্রাসের পর আজ আবারও সম্পদমূল্য বেড়েছে এই ধনীদের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অবস থ ন গতক ল ত দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়