ভারতের ‘বিতর্কিত’ ওয়াক্ফ বিল মুসলমানদের প্রতি আইনি সহিংসতা: বিবৃতিতে ইয়াং মুসলিম ইন্টেলেজেনশিয়া
Published: 6th, April 2025 GMT
ভারতের লোকসভায় ওয়াক্ফ বিল পাসের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইয়াং মুসলিম ইন্টেলেজেনশিয়া।
তরুণ আলেম, চিন্তক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, অধিকারকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই ‘প্ল্যাটফর্ম’ বলেছে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের ওই বিল দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করবে।
আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে ইয়াং মুসলিম ইন্টেলেজেনশিয়া। তারা ওয়াক্ফ বিল বাতিলের দাবি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৯৪৭–পরবর্তী সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে ইন্ডিয়ান মুসলমান, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হিন্দুত্ববাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বর্ণবাদী জুলুম-নিপীড়ন আমরা দেখে আসছি। সম্প্রতি বিজেপি সরকার কর্তৃক এমন সব আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা মূলত ইন্ডিয়ান মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনি সহিংসতা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মুসলমানদের সঙ্গে চলমান এসব আচরণ অত্যন্ত গর্হিত এবং সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী।’
‘এই ধারাবাহিকতারই নজির হিসেবে “ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫”–এর মধ্যে বিজেপি সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব ও অপরায়ণমূলক হিন্দুরাষ্ট্রের উৎকট চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে মুসলিমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবে’, বলা হয় বিবৃতিতে।
দিল্লি কথায় কথায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে ‘সংখ্যালঘুদের অধিকার’ বিষয়ে সবক দেয় এবং ‘সংখ্যালঘু’সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা প্রায়ই স্বাধীন–সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো আধিপত্যবাদী আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করে না বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, অথচ ভারত নিজেরাই নিজ দেশের মুসলমান ও অন্যান্য ‘সংখ্যালঘু’র অধিকার, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ভারতের পীর ও দরবেশদের মাজার, খানকা, দরগাহ সামাজিক সম্প্রীতি ও অসহায়ের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হয় বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ওয়াক্ফভিত্তিক সম্পত্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। মুসলিম স্বার্থবিরোধী ও সংবিধানপরিপন্থী বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির আঁতুড়ঘর এই প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
বিলের মধ্যে থাকা আইনি ফাঁকফোকর ব্যবহার করে মুসলমানদের ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি সম্পত্তি ঘোষণা করা হবে এবং মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভিত্তিশূন্য করে রাষ্ট্রহীন উদ্বাস্তুতে পরিণত করা হবে বলেও আশঙ্কা করা হয় ইয়াং মুসলিম ইন্টেলেজেনশিয়ার বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনকে রুখে দিতে আহ্বান জানানো হয়।
ইয়াং মুসলিম ইন্টেলিজেনশিয়ার পক্ষে বিবৃতিদাতারা হলেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের শাহজাদা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিফতাহুন নূর মাইজভাণ্ডারী, ইসলামি বক্তা সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আজহারী, লেখক ও চিন্তক ভূইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সংগঠক ইমরান হুসাইন তুষার, লেখক-প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আবু সাঈদ, মুফতি আ ন ম ছাইফুল্লাহ, মাওলানা হাফিজ সাইফুল করিম নাঈম, ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ী মুন্সী গিয়াস উদ্দীন, আইনজীবী রিদুয়ানুল ইসলাম ও তোফায়েল আহমেদ, লেখক সৈয়দুল হক প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
একজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ করেছেন একদল ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদনগর থেকে আসা সনাতন ধর্মের কয়েকজন কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভযোগ করা হয়। তা ছাড়া পুলিশকে ব্যবহার করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলে এই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্ব ধর্ম মিশন’র প্রচারক পরিচয় দিয়ে দুলাল দেবনাথ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ইউসুফ আবদুল্লাহর (আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন) নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা আওয়ামী লীগের দোসরেরা আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ও ভাইয়ের নেতৃত্বে মুরাদনগরে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং কায়কোবাদ (বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) সাহেবের সুনামকে নষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আমরা তার (উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাই।’
অভিযোগ করে দুলাল দেবনাথ আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ ভুঁইয়ার বাবা আজকে আমার বাড়িতে দুজন হিন্দু কমিউনিটির লোক পাঠিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি যেন এই প্রোগ্রামে না আসতে পারি। এ ছাড়া আমরা মুরাদনগর থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় গাড়ির কাগজপত্র চেকের (যাচাই বাছাই) নামে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সহসভাপতি দীন দয়াল পাল। তিনি বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় যানজট নিরসনে সাবেক পাঁচবারের এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন। তবে পুলিশকে ব্যবহার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা, চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মারধর করায়। পরে এই স্বেচ্ছাসেবকদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং সেদিন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে রাতভর সালিসও চলে। অথচ রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরে পুলিশ ও ডিবি আতঙ্ক বিরাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুরাদ নগর ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জন রায়, কামাল্লা দেবপরি মন্দির কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার সাহা, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, দয়ানন্দ ঠাকুর।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এর আগেও একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাকে সামনে রেখে এটি করা হচ্ছে, যারা সাবেক এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে এসি বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘বরং কায়কোবাদ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এমপি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু উত্তোলন, মাটি উত্তোলনের অবৈধ কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করছেন এবং সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দেখেছি, যারা এক সময় কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছিল, তারা এখন কায়কোবাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন। যদি আপনি মুরাদনগরের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন কী অবস্থা এলাকার? তাহলে তারা চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে অত্যাচার, সে কথা আপনাদের বলবে।’