নাফিজকে হত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল
Published: 6th, April 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর ফার্মগেটে গোলাম নাফিজকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সেই সময়কার নৃশংস ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে।
বিচারপতি মো.
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেটের পদচারী-সেতুর নিচে গুলিবিদ্ধ হন গোলাম নাফিজ। রিকশার পাদানিতে তাঁর মাথা এক পাশে ঝুলে ছিল, আরেক পাশে নিস্তেজ পা দুটি ঝুলছিল। ট্রাইব্যুনালে সেই ঘটনায় হওয়া মামলার সব আসামি পুলিশ সদস্য।
আজকের শুনানিতে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন বলেন, আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। অভ্যুত্থানের পর তাঁরা কর্মস্থলে যোগ দেননি। আজ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন মাস সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল তা অনুমোদন করেন।
পরে সাংবাদিকদের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার তদন্ত চলমান আছে। তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও আগে থেকেই পলাতক থাকার কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, গোলাম নাফিজ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও জীবিত ছিলেন। রিকশায় করে তাঁকে তিনটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কোনো হাসপাতাল তাঁকে চিকিৎসা দেয়নি। তাঁকে একবার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার, আরেকবার ম্যানহোলে তাঁর লাশ ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন‘শেষ দিন মনে কইরা তখনই “ইন্না লিল্লাহ...” পইড়া ফালছি’০৭ নভেম্বর ২০২৪এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের সময় সাভারে শহীদ শাইখ আশহাবুল ইয়ামিনকে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের (এপিসি) ওপর থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ সদস্য সোহেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৩ এপ্রিল সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একইভাবে গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলের ঘটনায় পুলিশ সদস্য নাসিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১০ এপ্রিল সময় মঞ্জুর করা হয়েছে।
আজকের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান, প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান, প্রসিকিউটর এস এম মইনুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র তদন ত র সময় র ঘটন ঘটন য় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।