আমার কর্মক্ষেত্রের পাশে কিছু দিন ধরে এক রাখালকে দেখছি এক পাল মহিষ দেখভাল করছেন। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম। আলাপচারিতায় জানলাম, তাঁর বয়স ৫০ বছর, নাম মো. হেলাল। ছোট ১৪ এবং বড় ১৭টি মিলে ৩১টি মহিষ দেখাশোনার জন্য তাঁর মালিক তাঁকে প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা বেতন দেন; সেই সঙ্গে আছে তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা। মহিষগুলোর স্থায়ী অবস্থান ছিল নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে। সেখানে মহিষগুলোর মালিকের খামারবাড়ি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি নেই। নতুন ঘাস গজাচ্ছে না। তা ছাড়া আগের মতো বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি এখন কোথাও নেই। দখল বা অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের কারণে উন্মুক্ত স্থান শহরে যেমন কমেছে, তেমনি গ্রামেও। সবুজ ঘাসের অভাব তাই সর্বত্র। এ অবস্থা রাখাল হেলাল মালিকের নির্দেশে মহিষগুলো নিয়ে ঘাসের সন্ধানে নানা জায়গায় ঘুরছেন। এখন মহিষগুলো নিয়ে তিনি আছেন নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াল গ্রামের গণি মিয়ার মোড়-সংলগ্ন খালি মাঠে। মাঠের এক প্রান্তেই আমার অফিস।
এর আগে এক মাস ছিলেন সদর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের চর রশীদ গ্রামে। এখন যেখানে আছেন সেই জালিয়াল গ্রামেও ঘাস প্রায় শেষ। তাই অচিরেই যাত্রা করতে হবে নতুন জায়গার সন্ধানে। আপাতত পৌরসভার একই ওয়ার্ডের টাকপুকুর পাড়ের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন হেলাল।
ঘাসের সন্ধানে মহিষের সঙ্গে রাখাল হেলালকেও পরিবার-পরিজন ছেড়ে যাযাবর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। চাকরিটা তাঁর সার্বক্ষণিক। বাঁধা শ্রম বললেও ভুল হবে না। কারণ ছুটিছাটার কোনো বালাই নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে হেলাল জানালেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৩০ লিটার দুধ পাওয়া যেত। পানি এবং ঘাসস্বল্পতার কারণে এখন দিনে দুধ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে ছয় লিটার।’
আমাদের অফিস সহকারী পলাশ জানাল, রাখাল দুই দিন তাকে বিনামূল্যে মহিষের দুধ খেতে দিয়েছে। প্রতিদিন আধা লিটার। তার মতে, তাজা দুধ খেতে অনেক সুস্বাদু। তবে দুধ কমে যাওয়াও হেলালের জন্য এক শঙ্কার কারণ। দুধ বেচে মালিকের যদি না পোষে, তবে হেলালকে তিনি রাখবেনই বা কেন! এই রাখালের চাকরি করেই হেলাল দুই মেয়েকে বড় করেছেন, বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে স্কুলে পড়াতে পারছেন। চাকরিটা তার ভারী প্রয়োজন। তবে হেলাল চান না, তাঁর ছেলে এ পেশায় আসুক। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয়। তার সঙ্গে বোনাসে অনিশ্চয়তা। তাই তিনি তাঁর ছেলেকে এই পেশায় আনতে চান না। ইচ্ছা থাকলেও নিজে এ চাকরি ছাড়তে পারছেন না। বিকল্প কিছু নেই তাঁর সামনে।
আপাতত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই হেলালের। তাঁর বর্তমানই যেখানে ধূসর, ভবিষ্যতের চিন্তা করবেন কীভাবে? তাই আগামী দিনের ভার নিয়তির ওপর ছেড়ে দিয়ে বর্তমানের অনিশ্চয়তাই তাঁকে ভাবায় বেশি।
আপাতত তিনি চান বৃষ্টি। ঝমঝম করে বৃষ্টি। গরমে মানুষের যত কষ্ট হয়, মহিষের কষ্ট তার চেয়ে অনেক বেশি। যথেষ্ট বৃষ্টিপাত মহিষগুলোকে স্বস্তি দিতে পারে; একই সঙ্গে কষ্ট লাঘব করতে পারে হেলালের। বৃষ্টি হলে সবুজ ঘাস গজাবে। হেলাল মহিষসহ ফিরে যেতে পারবেন মূল চাকরিস্থলে। এতে ঘটতে পারে পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্মিলন।
তাই চলুন, বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা আমরাও করি।
মোহাম্মদ মুনতাসির আজিজ: সমাজকর্মী,নোয়াখালী
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস