মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ধাক্কায় এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ শুল্কের প্রভাব অব্যাহত অনুভূত হচ্ছে।

আজ সোমবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময়) তাইওয়ানের প্রধান সূচক টিএআইইএক্স এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। একই দিন জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকে প্রায় 8 শতাংশ পতন হয়েছে।

এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অনেক নেতা ‘একটি চুক্তি করতে মরিয়া’ হয়ে আছেন।

গত সপ্তাহে দুই দিনের পতনের পর ওয়াল স্ট্রিট আবার সোমবার (আজ) চালু হলে মার্কিন শেয়ারবাজার আরও ব্যাপক পতনের মুখে পড়বে। গত সপ্তাহে মার্কিন শেয়ারবাজার ৬ লাখ কোটি ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ অরূপ রাহা বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়টি আগে থেকে অনুমান করা গিয়েছিল। কিন্তু শুল্কের হার এত বেশি হবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি বিশাল ধাক্কা। এশিয়ার বাজারগুলোতে এর খুব বাজে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমি যদি একটি কোম্পানি পরিচালনা করি, তবে আমি এখনই কোনো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেব না। কারণ, কেউই জানে না আসলে কী ঘটতে চলেছে।’

আজ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের শেয়ারবাজারের প্রধান প্রধান সূচকে মার্কিন শুল্কনীতির ধাক্কা ছিল দৃশ্যমান।

ইউরোপের শেয়ারবাজারের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্যান-ইউরোপিয়ান স্টক্স ৬০০ সূচককে। আজ সোমবার লেনদেন শুরুর পরপরই সূচক ৬ শতাংশ কমেছে। দিনের শুরুতে জার্মানির ডিএএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জে দরপতন হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ ছাড়া বেলজিয়াম স্টক মার্কেটে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ফ্রান্সের শেয়ারবাজার সিএসি৪০-এ ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীরা আরও ভয়াবহ অস্থিরতার মুখে পড়বেন। শিগগিরই বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধান অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক কৌশলগত পরামর্শক ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়া গ্রুপের সহযোগী রিন্টারো নিশিমুরা বলেন, এই শুল্ক কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা কাজ করছে। আর এটাই মূলত শেয়ারের দামে বড় ধস নামার প্রধান কারণ।

মার্কিন শুল্ক আরোপের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে ব্লকটির শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তারা লুক্সেমবার্গে বৈঠক করছেন। তাঁরা পাল্টাপাল্টি শুল্ক এবং অন্যান্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কেও আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র শ য় রব জ র শ ল ক আর প র স মব র ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ