নৃবিজ্ঞানী ড. ঈশিতা দস্তিদার বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের খাসি জনগোষ্ঠীর ওপর গবেষণা করছেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এ জনসমাজের ওপর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ২৮ মার্চ সমকালের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাহফুজুর রহমান মানিক ও সেলিম সারোয়ার। 

সমকাল: প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষত সিলেট অঞ্চলের খাসি সমাজ নিয়ে গবেষণায় আপনার আগ্রহের কারণ কী?

ঈশিতা দস্তিদার: আমার আগ্রহের জায়গা খাসি সমাজের স্থানান্তর, অভিবাসন, দেশভাগ। মূলত, দেশভাগের ইতিহাস, অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ আমাকে আকর্ষণ করে। দেশভাগ, আন্তঃসীমান্ত চলাচল বা সীমান্তের ধারণা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার জনমানুষের ধারণা, বিশ্বাস, গতিশীলতার চিত্র জানার আগ্রহ বোধ করি। বিভিন্ন সূত্রে খাসি সমাজের সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরি হয়েছিল। আস্তে আস্তে গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত, নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা সংগ্রহ শুরু করি। বিভিন্ন একাডেমিক পরিসরে খাসিদের নিয়ে কী ধরনের গবেষণা হচ্ছে, সেসবও জানাবোঝার চেষ্টা করি। 

সমকাল: সংগ্রহ থেকে কী বুঝলেন?

ঈশিতা দস্তিদার: খাসি সমাজ নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। এ সমাজের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা, তাদের ভাষার পর্যালোচনা, আর্থসামাজিক অবস্থার বিবরণ, পান চাষ ও অর্থনীতির পর্যালোচনা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে খাসিদের সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে কাজ হয়েছে বেশি। খাসি সমাজ গতিশীল। গতিশীলতা তাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একসময় সিলেট অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সমভূমিজুড়ে তাদের বসত ছিল। সেখান থেকে খাসিদের জীবনযাত্রা পাহাড়ি বনাঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়া এ ভূখণ্ডের ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস পুনর্পাঠের প্রয়োজনীয়তাকেও সামনে নিয়ে আসে। 

সমকাল: জীবন ও জীবিকার গতিশীলতা মানে কী?

ঈশিতা দস্তিদার: খাসিরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে একসময় সিলেট অঞ্চলের বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছে। ৩০-৪০ বছর পর পাহাড়ি ঢালু উঁচুভূমি চাষাবাদের উর্বরতা হারায়। ফলে উর্বর ভূমি ও পানির উৎসের খোঁজে তারা এক পুঞ্জি ছেড়ে নতুন পুঞ্জিতে স্থানান্তরিত হতো। বর্তমানে পুরো পুঞ্জি স্থানান্তরের মতো ঘটনা দেখা না গেলেও বিভিন্ন কারণে খাসিরা পুঞ্জি থেকে পুঞ্জিতে স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ খাসি সমাজে গতিশীলতার ধারা অব্যাহত।

সমকাল: আপনার গবেষণায় এ গতিশীলতার ধারার তাৎপর্য কী?

ঈশিতা দস্তিদার: আমি দেখতে চেয়েছি, বাংলাদেশের একটি আদিবাসী সমাজ কীভাবে গতিশীলতার ভেতর দিয়ে নিজেদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে মোকাবিলা করছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে নানাবিধ বোঝাপড়া ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তাদের বিলংগিংনেসকেও বুঝতে চেয়েছি। গতিশীলতার ধরনকে পরিবেশগত, ঋতুভিত্তিক, প্রাত্যহিক, বৈবাহিক, শিক্ষাগত, জোরপূর্বক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে স্বরূপ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন বুঝতে চেষ্টা করেছি। সেই সঙ্গে আদিবাসী সমাজ হিসেবে এদেশে নানাবিধ বৈরী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে খাসিরা কীভাবে তাদের জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখছে; এ ভূখণ্ড, বনাঞ্চল, পাহাড়, প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে তাদের যে একাত্মতার বোধ, সেই বোধের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

সমকাল: বাংলাদেশে বাঙালি এবং বাঙালি মুসলমানের বাইরেও বহু জাতিগোষ্ঠী ও ভাষাগোষ্ঠী আছে। খাসিদের বিশিষ্টতা কী? 

ঈশিতা দস্তিদার: খাসিদের সামাজিক কাঠামো মাতৃসূত্রীয়। তাদের সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয় মায়ের সূত্রে। কনিষ্ঠ কন্যা মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। মায়ের পরিচয়ে পরিবার, বংশ ও আত্মীয়তার পরিচয়। খাসি সমাজে নারীরা উচ্চ মর্যাদায় আসীন এবং আর্থসামাজিক ও গৃহস্থালি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাসিদের মধ্যে বিকেন্দ্রীয় স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা দেখা যায়। প্রতি পুঞ্জিতে একজন হেডম্যান বা ‘মন্ত্রী’ আছেন। অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিকতা খাসি সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি। খাসিদের প্রধান পেশা পান চাষ; রয়েছে স্বতন্ত্র চাষাবাদ পদ্ধতি। গত বছরের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ৮৯ দশমিক ২৯ শতাংশ খাসি পান চাষে নিযুক্ত, যেখানে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ খাসি সরাসরি পান বাগানে চাষাবাদে শ্রম দেন। বাকি ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ যৌথ খামার ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে নিয়োজিত। 

সমকাল: খাসিরা মোটাদাগে দেশের কোন কোন অঞ্চলে কী সংখ্যায় আছেন?

ঈশিতা দস্তিদার: খাসিরা মূলত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাস করে। ১৯৯১ সালের শুমারি অনুযায়ী খাসিদের জনসংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৩০০; যদিও বাংলাদেশ খাসি সোসাইটির মতে ছিল ৩০ হাজার। ২০২২ সালের জনশুমারিতে আলাদা করে খাসিদের সংখ্যা জানা না গেলেও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র ও খাসি প্রতিনিধিদের ধারণামতে বর্তমানে কমবেশি ১০৬টি পুঞ্জিতে বসবাসরত খাসি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজার। 

সমকাল: বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের খাসিদের ভিন্নতা ও ঐক্যের জায়গাটা কেমন?

ঈশিতা দস্তিদার: ধারণা করা হয়, খাসিরা আনুমানিক পাঁচশ বছর আগে খাসি পাহাড় ও জৈন্তা পাহাড়ে তাদের মূল বসতি গড়ে তোলে। একসময় সিলেটের বিস্তীর্ণ সমতলেও খাসিদের বসবাস ছিল। জৈন্তাপুর ছিল খাসি রাজ্যের রাজধানী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে খাসিরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। মেঘালয়ে তারা অন্যতম প্রধান আদিবাসী সমাজ। তাদের ভাষাও সেখানকার অন্যতম প্রধান দাপ্তরিক ভাষা। শিক্ষা, পেশা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিকেও সেখানকার খাসিদের জীবনযাত্রা বাংলাদেশের খাসি সমাজের চেয়ে ভিন্ন। ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতি মিলিয়ে অভিন্ন জাতিগত পরিচয় থাকার পরও দুটো আলাদা রাষ্ট্রের পৃথক বাস্তবতা, অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের ইতিহাস তাদের। 

সমকাল: বাংলাভাষীরাও বিভিন্ন সীমান্তে বিভক্ত জাতি। খাসিদের বিভক্তিও কি বাঙালির মতো দেশভাগের ট্র্যাজেডি?

ঈশিতা দস্তিদার: অবশ্যই। কিন্তু বাঙালির দেশভাগের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা যত লেখাপত্র দেখতে পাই, সেভাবে খাসি, গারো, লুসাইদের পাই না। দেশভাগের ফলে খাসি সমাজও বিভক্ত হয়ে পড়ে। গবেষণা এলাকার অনেক খাসি পরিবারের আত্মীয়স্বজন মেঘালয় রাজ্যে বসবাস করে। বৈবাহিক সূত্রেও অনেক পরিবার সীমান্তের দুই পাশে সম্পর্কিত। অবস্থাপন্ন গৃহস্থের ছেলেমেয়ে কেউ কেউ পড়াশোনার জন্য মেঘালয়ে অবস্থান করছে। 

সমকাল: খাসি সমাজের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কি সামন্ততান্ত্রিক? নাকি পুঁজিতন্ত্রের প্রাথমিক একটা ধরন? 

ঈশিতা দস্তিদার: খাসিদের সমাজ কাঠামো, পরিবার ব্যবস্থা, উৎপাদন ব্যবস্থা, বিপণন প্রক্রিয়া বিবেচনায় নিলে এ সমাজ কোনোভাবেই সামন্ততান্ত্রিক নয়। এখনকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খাসি সমাজ বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাভুক্ত। খাসিদের চাষাবাদ পদ্ধতি নিজস্ব; উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সরাসরি তাদের সম্পৃক্ততা থাকার পরও বাজার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হয় স্থানীয় বাঙালি মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদারদের মাধ্যমে। ফলে উৎপাদনের উপকরণ ও শ্রম খাসিদের হওয়ার পরও বিক্রয় প্রক্রিয়ার অসম ব্যবস্থাপনার কারণে একে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা না বলে উপায় নেই। তা ছাড়া চারদিকে পুঁজিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার যে চর্চা চলছে; খাসি সমাজ সজ্ঞানে-অজ্ঞানে সে চর্চার অন্তর্ভুক্ত। ফলে প্রান্তিক ও স্বতন্ত্র সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরও এ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চরিত্র থেকে তাদের পৃথক ভাববার সুযোগ নেই। খাসিরা আলাদা বা পৃথক নয়; ভূমি অধিকার থেকে শুরু করে যাবতীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বাংলাদেশের মূল সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সমকাল: খাসিদের পান চাষনির্ভর অর্থনীতির আকার ও অবস্থা কেমন? 

ঈশিতা দস্তিদার: পান চাষাবাদের সমন্বিত কোনো হিসাবপত্র নেই। বাগান ও পুঞ্জির আকারের সঙ্গে এর আকার অনুমান করে নিতে হবে। ফিল্ডওয়ার্কে এখানে ১০৬টি পুঞ্জির তথ্য পেয়েছি। সব পুঞ্জিতে একই আকারে পান উৎপাদন হয় না। বর্তমানে এ সমাজের কত অংশ পান অর্থনীতিতে যুক্ত, সেটি ইতোমধ্যে বলেছি। চাষাবাদের দিক থেকে এটি একটি স্বাধীন অর্থনীতির মতো। চাষাবাদ নিজস্ব লোকজ জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হয়।

সমকাল: বাংলাদেশের সমতল এলাকাতেও পান চাষ হয়। তার সঙ্গে খাসি সমাজের পানচাষে কোনো পার্থক্য আছে? 

ঈশিতা দস্তিদার: সমতলের পানের বরজের মতো কৃত্রিম শেড ও মাচার বদলে খাসিরা বড় গাছের পাশে পান গাছ রোপণ করে এবং সেই গাছকে জড়িয়ে পানের লতা বেড়ে ওঠে। সাধারণত, পাহাড়ের ঢালে বড় বড় গাছের আশ্রয় ও ছায়ায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আবহে খাসিদের পানের চাষাবাদ হয়। ইদানীং কৃত্রিম সারের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে চাষাবাদের খরচও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পান গাছে ‘উত্রাম’ নামে জীবাণুর সংক্রমণ; সঠিক বিক্রয়মূল্য না পাওয়া এবং আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য পান চাষের এ অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্বল করে তুলেছে। 

সমকাল: সংবাদমাধ্যমে খাসি সমাজের ভূমি সংকট-সংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়। আপনি কি দেখতে পেয়েছিলেন?

ঈশিতা দস্তিদার: সরকারি জমি লিজ নিয়ে এবং বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জমি ও চা বাগানের উঁচুভূমিতে খাসিরা বাস করে। কিন্তু প্রায়ই ভূমি অধিকার প্রশ্নে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া ইকোপার্ক, রিসোর্ট ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরা মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণের কথা জানি। এতে কমলগঞ্জের প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেখানকার খাসি পুঞ্জিগুলোও এ ক্ষত বহন করছে বহু বছর ধরে। কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া ইকোপার্ক প্রকল্পের কথাও এখানে উল্লেখ করা যায়। ইকোপার্ক প্রকল্পের কারণে এখানকার খাসি ও গারো অধিবাসীদের একটা অংশ গৃহহীন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি এবং সেই সঙ্গে তাদের ভূমি সমস্যার সমাধান করা দরকার।

সমকাল: ভূমির বাইরে এ সমাজ আর কোনো বিশেষ সমস্যা মোকাবিলা করছে কি? 

ঈশিতা দস্তিদার: বাংলাদেশের অন্যান্য আদিবাসী সমাজে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি এবং গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার যে সংকট, খাসিরাও তা মোকাবিলা করছে। বাঙালি প্রতিবেশীরা খাসি পান বাগানে দিনমজুরি করলেও পারস্পরিক সম্পর্ক সহজ স্বাভাবিক নয়। প্রায়ই খাসিরা ‘উপজাতি’, ‘পাহাড়ি’, ‘দখলদার’, ‘বনভূমি ধ্বংসকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত হয়। এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমারও মুখোমুখি হয়। খাসিদের চোখের সামনেই তাদের বাগান থেকে নিত্যদিন ফল পেড়ে নিয়ে যাওয়া, সবজি তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটছে। এ ছাড়া পান বাগান নষ্ট করা, পানগাছের গোড়া কেটে দেওয়া, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, প্রতিবাদ জানালে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ইত্যাদি সাধারণ ঘটনা। স্থানীয় অনেকেই খাসিদের ‘বহিরাগত’, ‘ভারতীয়’, ‘স্থানান্তরিত’ হিসেবেও অভিহিত করে। এ ছাড়া জাতিগত বিভিন্ন অবমাননাকর ভাষাও তারা ব্যবহার করে।

সমকাল: এর কারণ কী মনে করেন?

ঈশিতা দস্তিদার: আদিবাসী নৃগোষ্ঠী সম্পর্কিত এমনতর মনোবৃত্তি আসলে রাষ্ট্র লালিত কলোনিয়াল হ্যাংওভারের ফসল। দীর্ঘদিন জাতীয় পরিসরে আদিবাসী নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে অবমাননাকর যেসব চর্চা চলছে খাসি সমাজের প্রতি; পার্শ্ববর্তী সাধারণ বাঙালি প্রতিবেশীদের একাংশের মনোভাবে তার ছাপ পড়া হয়তো অস্বাভাবিক নয়। এসব পাল্টাতে নৃগোষ্ঠীগুলোর আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক চর্চা দরকার।

সমকাল: খাসি সমাজের সমস্যা-সংকট নিয়ে তাদের শিক্ষিত সমাজ কতটা সোচ্চার?

ঈশিতা দস্তিদার: খাসি সমাজে শিক্ষার হার বাড়ছে। পান চাষের বাইরে বর্তমানে ভিন্ন পেশা অবলম্বনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণেও পেশা বদলের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ৩০-৪০ বছর চাষাবাদের ফলে জমি উর্বরতা হারায়; ঢালু জমি বৃষ্টির কারণেও ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। আগের মতো এখন এক জায়গা থেকে পুঞ্জি সরিয়ে নিয়ে অন্য পাহাড়ের ঢালে স্থাপন সম্ভব নয়। অন্যদিকে, খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব ও পৃষ্ঠপোষকতায় খাসিদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের হার বেড়েছে। শিক্ষিত খাসি সমাজ নিজ সমাজের অধিকার প্রশ্নে সচেতন ভূমিকা পালন করছে, দেখেছি। অধিকার আদায়ে খাসিদের নিজস্ব সংগঠনও রয়েছে। খাসি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, কোবরা ইত্যাদি।

সমকাল: খাসিরা কি মনে করে, ঢাকাকেন্দ্রিক শাসক-প্রশাসকরা তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে মনোযোগী?

ঈশিতা দস্তিদার: খাসিরা ভূমি সমস্যা, পান চাষ ও বিপণন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশ্নে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। পান বাজারজাতকরণ নির্ভর করে স্থানীয় বাঙালি আড়তদার ও মধ্যস্বত্বভোগীর ওপর। খাসিরা সরাসরি বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ফলে বিক্রয়মূল্য নিয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। এ ছাড়া পাহাড়ি ভূমিতে বসবাসরত খাসিদের উচ্ছেদ আতঙ্ক, হামলা, মামলা, সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এসব অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে খাসিরা জাতীয় শাসক-প্রশাসকদের সমবেদনা নয়, বরং অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা চায়। 

সমকাল: খাসি সমাজে ভাষা ও সংস্কৃতির অন্যান্য দিকের চর্চা কেমন? 

ঈশিতা দস্তিদার: খাসি সমাজ আনুমানিক ৯০ ভাগ খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত। আদি খাসি ধর্ম, ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান যা খাসিদের স্বতন্ত্র পরিচয় নির্মাণ করেছে, তা বিলুপ্তির পথে। এ ছাড়া খাসিরা মনখেমর ভাষায় কথা বললেও সে ভাষার নিজস্ব লিপি নেই। ইদানীং ঐতিহ্য রক্ষার্থে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের খাসি সমাজ ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ ‘স্যাং কুত স্নেম’ পালন করছে ২৩ নভেম্বর। এদিন সিলেটের সব খাসি পুঞ্জি থেকে খাসি জনগোষ্ঠী মৌলভীবাজার জেলার মাগুরছড়া পুঞ্জিতে সমবেত হয় এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করে। মেঘালয়ে খাসি সমাজের ঐতিহ্য রক্ষায় নানাবিধ সামাজিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সে রকম প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া যায়। 

সমকাল: গবেষক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় খাসি সমাজ বা এ রকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎকে আপনি কীভাবে দেখেন? 

ঈশিতা দস্তিদার: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রশ্নে এ অঞ্চলের আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মূল সমাজের মতো আদিবাসী নৃগোষ্ঠী ও প্রান্তিক সমাজের মানুষও এ অঞ্চল, বনভূমি, পাহাড়, নদী-সমুদ্র ও সমতলের সমান দাবিদার। জাতীয় নীতিনির্ধারণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

ঈশিতা দস্তিদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ক ও র জন ত ক ক ব যবস থ স বতন ত র জনগ ষ ঠ র গত শ ল পর ব শ পর ব র বসব স সমস য অবস থ সমক ল র পরও গ রহণ ন করছ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ