যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন করে বাড়তি শুল্কের বিষয়টি নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ বিব্রত এবং চিন্তিত। এ কারণে প্রাথমিকভাবে রপ্তানিতে এক ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। তবে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সরকার সঠিক পথেই হাঁটছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানোই যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। 
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) পক্ষ থেকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। রাজধানীর বনানীর হোটেল টিউলিপ গার্ডেনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের  ঘোষিত ‘রিসিপ্রোকাল’ বা ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আইসিসিবির পর্যালোচনা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সভাপতি  এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি আবদুল হাই সরকার, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি কামরান টি রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ট্রান্সকম গ্রুপের  প্রধান নির্বাহী সিমিন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইসিসিবির  পক্ষ থেকে আরও বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয়ভাবে করণীয় নির্ধারণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষির বিষয়টি যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন। সংগঠনটির প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, আমদানি-রপ্তানিকারকদের নিয়ে এ টাস্কফোর্স গঠন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক বাবদ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। এসব পণ্যে শুল্ক হার কমানোর ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য হিসেবে ঢালাও শুল্ক ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে শুল্ক হার নির্ধারণ করা দরকার। এ ছাড়া শুল্ক আরোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কোনো  উদ্যোগে যেতে পারে।

আইসিসিবির সভাপতি বলেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে এ ধরনের পাল্টা শুল্ক আরোপের নজির নেই। ট্রাম্প প্রশাসন ডব্লিউটিওর আইনবিধি লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে এ শুল্ক আরোপ করেছে। এটি তারা করতে পারে না। এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। আমেরিকা বিশ্ব অর্থনৈতিক মোড়ল হওয়ায় অনেক দেশ ট্যারিফ প্ল্যানের হাত থেকে বাঁচতে উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শূন্য শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশকেও বর্ধিত এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় চিঠি চালাচালির পরিবর্তে দৃশ্যমান কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।
ফজলুল হক বলেন, যেসব পণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে বন্দরে পড়ে আছে বা জাহাজে আছে, সেগুলোতে বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকর হবে না। তবে দেশের কারখানাগুলোতে আগামী ৩-৪ মাসের জন্য যেসব রপ্তানি আদেশের কাজ চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
আবদুল হাই সরকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে তুলা আমদানিতে শুল্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানো যায়। ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় কমিয়ে আনার মাধ্যমে বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নাসের এজাজ বিজয় বলেন, পাল্টা শুল্ক আরোপ দুই ধাপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। প্রথম ধাপে রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমতে পারে। প্রথমত, বিদেশি ক্রেতারা একা বর্ধিত শুল্কের ভার বহন করবে না। দ্বিতীয়ত, শুল্ক আরোপের কারণে আমেরিকার বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সুবিধাজনক মনে না হলে অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প আইস স ব র আমদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ