প্রবাসী আয়ের মতো দেশের পণ্য রপ্তানি খাতও গত মাসে ভালো করেছে। মার্চ মাসে দেশ থেকে মোট ৪২৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ৭১৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

একাধিক রপ্তানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। কারণ, ঈদে ৭-১০ দিনের লম্বা ছুটি থাকে। ফলে বাড়তি কাজ করে ছুটির আগেই অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য জাহাজীকরণ হয়ে থাকে।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই খাত হচ্ছে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি। গত মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার, যা এক মাসের হিসাবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কয়েক মাস ধরেই প্রবাসী আয় বাড়ছে। পাশাপাশি পণ্য রপ্তানিও ইতিবাচক ধারায় থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৬২ কোটি ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম মান ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ হচ্ছে ২ হাজার ৪৬ কোটি ডলার।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা, প্লাস্টিক, প্রকৌশল পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে।

পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকলেও খাতটি ঘিরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। বাংলাদেশি পণ্যে আরোপ করেছেন ৩৭ শতাংশ শুল্ক।

পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাজার। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫৯ কোটি ডলারের পণ্যের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে যাঁরা তৈরি পোশাক, ক্যাপ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরা এখন উদ্বেগের মধ্যে আছেন। কারণ, পাল্টা শুল্কের কারণে ইতিমধ্যে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। বাড়তি শুল্কের ক্ষতি পোষাতে মূল্যছাড় দাবি করছে কেউ কেউ।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশ থেকে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। মার্চে ৩৪৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। জুলাই–মার্চ ৯ মাসে এই পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৫ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। শুধু মার্চে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি হয় ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮১ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। তবে মার্চ মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।

আলোচ্য ৯ মাসে ৬৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। গত মার্চে হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ৯৬ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৬৩ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ৪১ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা, ৪০ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৩৪ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য, ২৩ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ প রব স প রথম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা

দেশের বাজারে এবার কমল জ্বালানি তেলের দাম। মে মাসে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে দাম কমেছে ১ টাকা। আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেট্রলের দাম প্রতি লিটার ১২২ টাকা থেকে কমিয়ে ১২১ টাকা ও অকটেনের দাম ১২৬ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। নতুন দাম ১ মে থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে মার্চ ও এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়। আর ফেব্রুয়ারিতে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে বেড়েছিল ১ টাকা।

২০২৪ সালের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করে সরকার। সে হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।

জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারণ করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ৫ বছরে, অস্ট্রেলিয়ার বিনোদন বাজার বাড়ছে
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ