প্রথম আলোতে প্রতিবেদনের পর ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানা সিলগালা, জব্দ ৪৮ প্রাণী
Published: 8th, April 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অনুমোদনবিহীন মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বন অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে আজ প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানার নেতৃত্বে একটি দল বিকেল সাড়ে চারটায় চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায়। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।
ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় দেশি-বিদেশি ১১৪টি প্রাণী ছিল। অভিযানে সরকারি অনুমোদন না নিয়ে চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর ৩৪–এর খ ধারায় কুমির, ময়ূর, অজগর, হরিণ, মদনটাক, ধনেশ, লজ্জাবতী বানরসহ দেশি ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৭টি প্রাণী জব্দ করে নিয়ে গেলেও ২১টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে চিড়িয়াখানার ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মিজানুর রহমান যথাযথ কাগজপত্র আছে দাবি করলেও বন্য প্রাণীর সপক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে কিছু নথিপত্র এনে দেখান চিড়িয়াখানার কর্মীরা। সেখানে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে চারটি চিত্রা হরিণ কেনার অনুমতি দিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল বন সংরক্ষকের দপ্তর। তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়রকে এ অনুমতি দেওয়া হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট দেখাতে পরেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৩০ জুন নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার মো.
বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, এখানে অবৈধভাবে বেশ কিছু বন্য প্রাণী খাঁচায় বন্দী রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। তথ্যের আলোকে তাঁরা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পান, অযত্নে ও আইন লঙ্ঘন করে প্রাণীগুলোকে রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় তফসিলভুক্ত বন্য প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাফারি পার্কে এবং কিছু ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, অসুস্থ ভালুকটি এখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। সুস্থ হওয়ার পর সেটি নিয়ে যাবেন। এখন এটি সরিয়ে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
কাগজপত্র অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুনে জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারতেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ইজারা নিয়ে চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ভেতরে প্রবেশের টিকিটে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ উল্লেখ থাকলেও সেটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। সাবেক সিটি মেয়র ইকরামুল হক সেখানে প্রাণীর জোগান দিতেন বলে কর্মীরা জানান।
আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘদিন অনুমোদনবিহীন চিড়িয়াখানা চললেও কেন নজরে এল না জানতে চাইলে বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে এসব মিনি চিড়িয়াখানায় তাঁদের অভিযান চলছিল। সিরিয়ালে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেও আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। দেশে এমন যত চিড়িয়াখানা আছে, সব কটির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব। দেশি প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। চিড়িয়াখানাটি আজ থেকে সিলগালা করা হয়েছে।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, চিড়িয়াখানাটি কিছু শর্তে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ইজারার মেয়াদও শেষ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু এখন কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপদাহ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আজ রোববার থেকে টানা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ চারটি জেলা ও পাঁচটি বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রোববার বৃষ্টি হবে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সারাদেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। ফলে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এ সময় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে কখনও কখনও হতে পারে বজ্রপাত। বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি হচ্ছে ইদানীং। সে জন্য বজ্রধ্বনি শুনলেই ঘরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রংপুরের ডিমলায়। এ ছাড়া বান্দরবানে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর শনিবার ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কয়েক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।