ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অনুমোদনবিহীন মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বন অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে।

‘ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে আজ প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানার নেতৃত্বে একটি দল বিকেল সাড়ে চারটায় চিড়িয়াখানায় অভিযান চালায়। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান।

ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় দেশি-বিদেশি ১১৪টি প্রাণী ছিল। অভিযানে সরকারি অনুমোদন না নিয়ে চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর ৩৪–এর খ ধারায় কুমির, ময়ূর, অজগর, হরিণ, মদনটাক, ধনেশ, লজ্জাবতী বানরসহ দেশি ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৭টি প্রাণী জব্দ করে নিয়ে গেলেও ২১টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে চিড়িয়াখানার ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মিজানুর রহমান যথাযথ কাগজপত্র আছে দাবি করলেও বন্য প্রাণীর সপক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে কিছু নথিপত্র এনে দেখান চিড়িয়াখানার কর্মীরা। সেখানে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে চারটি চিত্রা হরিণ কেনার অনুমতি দিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল বন সংরক্ষকের দপ্তর। তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়রকে এ অনুমতি দেওয়া হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট দেখাতে পরেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৩০ জুন নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার মো.

সেলিম মিয়া নামের একজনকে মিনি চিড়িয়াখানাটি ৩০ জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার একটি চুক্তিপত্র দেখানো হয়। সেখানে সাক্ষীর ঘরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষর আছে। ৯টি শর্ত জুড়ে দিয়ে ১০ বছরের জন্য চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার ২ নম্বর শর্ত ছিল সরকারের বন, পরিবেশ এবং পশুপালন মন্ত্রণালয়ের আইনানুযায়ী জয়নুল উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করতে হবে। ৫ নম্বর শর্তে চিড়িয়াখানায় সার্বক্ষণিক একজন পশু চিকিৎসক রাখার কথা উল্লেখ থাকলেও চিড়িয়াখানায় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। সেখানে থাকা কর্মী কামাল হোসেন প্রাণীর চিকিৎসার দেখভাল করতেন বলে জানান। পরে ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া মিজানুর রহমানের কাছ থেকে মুচলেকা নেয় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, এখানে অবৈধভাবে বেশ কিছু বন্য প্রাণী খাঁচায় বন্দী রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। তথ্যের আলোকে তাঁরা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পান, অযত্নে ও আইন লঙ্ঘন করে প্রাণীগুলোকে রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় তফসিলভুক্ত বন্য প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাফারি পার্কে এবং কিছু ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, অসুস্থ ভালুকটি এখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। সুস্থ হওয়ার পর সেটি নিয়ে যাবেন। এখন এটি সরিয়ে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

কাগজপত্র অনুযায়ী ২০১৪ সালের জুনে জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারতেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ইজারা নিয়ে চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ভেতরে প্রবেশের টিকিটে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ উল্লেখ থাকলেও সেটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। সাবেক সিটি মেয়র ইকরামুল হক সেখানে প্রাণীর জোগান দিতেন বলে কর্মীরা জানান।

আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর৪ ঘণ্টা আগে

দীর্ঘদিন অনুমোদনবিহীন চিড়িয়াখানা চললেও কেন নজরে এল না জানতে চাইলে বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে এসব মিনি চিড়িয়াখানায় তাঁদের অভিযান চলছিল। সিরিয়ালে আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেও আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। দেশে এমন যত চিড়িয়াখানা আছে, সব কটির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব। দেশি প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। চিড়িয়াখানাটি আজ থেকে সিলগালা করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, চিড়িয়াখানাটি কিছু শর্তে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ইজারার মেয়াদও শেষ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাহিদুল ও মজিদের সেঞ্চুরি, ৮ রানের জন্য পাননি মুমিনুল

মজিদের সেঞ্চুরি ও হায়দারের ঝড়ে ময়মনসিংহের ৫৫৫

জাতীয় ক্রিকেট লিগে নবাগত ময়মনসিংহ দারুণভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ নাঈম ও মাহফিজুল ইসলামের পর এবার সেঞ্চুরি পেয়েছেন আবদুল মজিদ। অধিনায়ক শুভাগত হোম ও আবু হায়দারও খেলেছেন ঝোড়ো ইনিংস। তিনজনের ব্যাটে ভর করে ময়মনসিংহ ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে। কক্সবাজার একাডেমি গ্রাউন্ডে বল হাতে শুরুও করেছে ভালো—প্রতিপক্ষ রংপুর দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ১৮ রান তুলে ফিরেছে ড্রেসিংরুমে।

২ উইকেটে ২৮১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে ময়মনসিংহ। তবে ২২ রান যোগ করতেই পড়ে যায় আরও দুটি উইকেট। এরপর মজিদ ও শুভাগত গড়েন ১৩০ রানের জুটি। ৮৬ বলে ৬৫ রান করে শুভাগত আউট হওয়ার পর মজিদ জুটি গড়েন তাহজিবুল ইসলামের সঙ্গে (২১)। ষষ্ঠ উইকেটে আসে ৩৪ রান। এরপর হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ৪২ বলেই সপ্তম উইকেটে তোলেন ৭৭ রান। ৩৪ বলে ৫ ছক্কায় ৬০ রান করেন হায়দার। অপর প্রান্তে ১৮৬ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৯ রানে অপরাজিত থাকেন মজিদ। ১১০ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এটি তাঁর ১৪তম সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরি হাতছাড়া মুমিনুলের৯২ রানে আউট হয়েছেন চট্টগ্রামের মুমিনুল হক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাহিদুল ও মজিদের সেঞ্চুরি, ৮ রানের জন্য পাননি মুমিনুল
  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল
  • রংপুরকে পেয়েই আবার নাঈমের সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি মাহফিজুল ও সাদিকুরেরও
  • রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ
  • সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে অটোরিকশার ধাক্কা, নিহত ২
  • পূর্বধলায় ট্রাকের পেছনে অটোরিকশার ধাক্কা, নিহত ২