নীতিগত সংস্কার করলে চার খাতে বছরে ৩৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হবে
Published: 8th, April 2025 GMT
দেশের কৌশলগত চারটি খাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপ নিলে প্রতিবছর এসব খাতে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। খাত চারটি হচ্ছে আবাসন, শিল্পে ব্যবহৃত রংশিল্প, তৈরি পোশাক ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা।
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক (সিপিএসডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন(আইএফসি)।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে এ খাতে প্রতিবছর ২৩ লাখ ৭ হাজার কর্মসংস্থান বাড়বে। আবার শিল্পের রঙের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে; শুল্কের হারও অনেক বেশি। এটি ঠিক করা গেলে এ খাতে সাড়ে ছয় লাখ কর্মসংস্থান বাড়বে।
এ ছাড়া ডিজিটাল আর্থিক সেবায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মার্চেন্টদের লেনদেন সীমা বাড়ানোর মতো কিছু জটিলতার সমাধান করা হলে এ খাতেও ৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্ষেত্রে পাঁচটি বাধার কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত ও করহার।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পৃথক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। আলোচনা দুটি সঞ্চালনা করেন আইএফসির বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে আইএফসির সুপারিশগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন করা হয় লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই এসব সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান বাড়ানো। প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ উঠে এসেছে তা সরকারের কাজে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর, অনন্ত গ্রুপের এমডি শরিফ জহির, এবিসি রিয়েল এস্টেটের এমডি শ্রাবন্তী দত্ত ও নিপ্পন পেইন্টের হেড অব অপারেশনস অরুণ মিত্রা।
দেশে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন শরিফ জহির। তিনি বলেন, অবকাঠামো অন্যতম বড় সমস্যা। এটি সমাধান করা গেলে বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিমাণ দুই-তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরিবহন ও সরবরাহ খাত, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন পরিষেবা এবং শুল্ক-কর নিয়েও নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। শরিফ জহির বলেন, সবগুলো সমস্যাই সমাধানযোগ্য। তবে এ জন্য একটি সুস্পষ্ট পথনকশা থাকা আবশ্যক।
আবাসন খাত নিয়ে শ্রাবন্তী দত্ত জানান, ঢাকা শহরে জমির অতিরিক্ত দামের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে আবাসন সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশের বেশি চলে যায় জমির পেছনে। ঢাকার বাইরে কম দামে জমি পাওয়া যায়; কিন্তু যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা কম থাকায় এ ধরনের আবাসনের চাহিদা কম থাকে। এ ক্ষেত্রে আবাসন কোম্পানিগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, দীর্ঘমেয়াদি জামানত সুবিধা, করছাড় ও প্রণোদনাসহ বেশ কিছু নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আবাসনের জন্য স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত না। গৃহঋণে সুদহার কম থাকায় ব্যাংকগুলো তাতে কম আগ্রহী হয়। এ ছাড়া আইনি অনেক জটিলতাও রয়েছে। এ জন্য সরকারকে গৃহঋণের জন্য পৃথক আরও প্রতিষ্ঠান তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
দেশে রং ও তার কাঁচামাল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক কমানোর দাবি জানান অরুণ মিত্রা।
আলোচনায় বিকাশের কামাল কাদীর বলেন, বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই এ প্রতিবেদন দেখবেন। তাই প্রতিবেদনে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো যেন ভবিষ্যতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ