বরিশালে পুলিশের বাধায় রামায়ণ নাটক প্রদর্শন বন্ধ
Published: 9th, April 2025 GMT
বরিশালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাম নবমী উৎসব উপলক্ষে ‘রামায়ণ’ নাটক প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। হিন্দুদের ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার নগরীর কাউনিয়া শ্রীশ্রী মনসা মন্দিরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই প্রদর্শন হতো নাটকটি। আয়োজকরা বলছেন, হামলার হুমকি ও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, অনুমতি না নেওয়ায় নাটক প্রদর্শন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
মনসা মন্দির পূজা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য প্রীতম দাস জানান, ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে বরিশাল বিভাগে সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান হয় এই মন্দিরে। রীতি অনুযায়ী চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। ৫ এপ্রিল ভগবান রাম চন্দ্রের প্রতিমা আনা হয় মন্দিরে। পরদিন পূজা, যজ্ঞ, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যা আরতি হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছিল প্রদীপ প্রজ্বালন ও ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রের জীবন কাহিনি নিয়ে ‘রামায়ণ’ নাটকের মঞ্চায়ন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সকাল থেকে অনুষ্ঠানে বাধার সৃষ্টি করেন। আজ ৯ এপ্রিল সন্ধ্যা আরতি, নগর পরিক্রমা ও বিসর্জনের অনুষ্ঠান রয়েছে।
কমিটির আরেক সদস্য হৃদয় দাস জানান, পুলিশকে অনেক অনুরোধ করার পরও তারা বলেছে, হুমকি আছে, তাই অনুষ্ঠান করা যাবে না। মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা শুধু রামায়ণ নাটক নিয়ে সমস্যার কথা বলেছেন।
নাটক মঞ্চস্থের দায়িত্ব পাওয়া তিলকস গ্রুপ অ্যান্ড থিয়েটারের পরিচালক তিলক বসু অনিম বলেন, দীর্ঘ দুই মাস ধরে আমরা রামায়ণ নাটক মঞ্চস্থ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে সাউন্ড সিস্টেম, ডেকোরেটর মালপত্রসহ সব সামগ্রী চাপের মুখে খুলে ফেলা হয়। পুলিশের এ সিদ্ধান্তে আমরা মর্মাহত।
এ বিষয়ে কাউনিয়া মনসা মন্দিরে উপস্থিত কাউনিয়া থানার এসআই মো.
কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার আইচ জানান, সামনে এসএসসি পরীক্ষা থাকায় নাটকটির প্রদর্শন বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে পূজা এবং নগর পরিক্রমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে চলবে। আর নাটক যেহেতু পূজার অংশ নয়, তাই পরে কখনো এটি মঞ্চস্থ করার কথা বলা হয়েছে। তখন পুলিশ আয়োজকদের সুরক্ষা দেবে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রিয়াজ হোসেন, আমি বিষয়টি জানি না। ধারণা করছি, ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সে জন্যই নাটকটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে পুলিশ সেটি বন্ধ করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল অন ষ ঠ ন ন বন ধ মন দ র নগর প
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।